18 C
Dhaka
Wednesday, December 11, 2024

চার বছর আটকা পেনশনের টাকা, বিনা চিকিৎসায় স্ত্রীর মৃত্যু

দীর্ঘ ৩৫ বছরের শিক্ষকতা জীবনের ইতি টেনে চার বছর আগে অবসরে গেছেন শিক্ষক নজরুল ইসলাম (৬৫)। একটি মাধ্যমিক বিদ্যালয় ও একটি দাখিল মাদ্রাসায় শিক্ষকতা করেছেন তিনি। অর্থাভাবে বিনা চিকিৎসায় মাত্র ৪৫ বছর বয়সে মারা গেছেন প্রিয়তমা স্ত্রী তোহরা বেগম। মানসিকভাবে অসুস্থ মেয়ে রুমা খাতুনেরও (২৬) চিকিৎসা হচ্ছে না।

অবসরের চার বছর পার হলেও মেলেনি পেনশনের টাকা। সেই টাকার জন্য ঘুরছেন দ্বারে দ্বারে। পেনশনের টাকাটা পেলে হয়তো স্ত্রীকে বিনা চিকিৎসায় মারা যেতে হতো না কিংবা মেয়েটারও সুচিকিৎসা করাতে পারতেন।

আক্ষেপের সুরে কথাগুলো বলছিলেন যশোরের বাঘারপাড়া উপজেলার খানপুর দাখিল মাদ্রাসার অবসরপ্রাপ্ত সহকারী শিক্ষক নজরুল ইসলাম।

তিনি জানান, ১৯৮২ সালে শ্রীরামপুর মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষকতা শুরু করেন। সহকারী শিক্ষক হিসেবে সেখানে দুই বছর চাকরি করার পরে ১৯৮৪ সালে যোগ দেন খানপুর দাখিল মাদ্রাসায়। ২০২০ সালের ২১ জুন অবসরে যান তিনি।

অবসরে যাওয়ার পর কল্যাণ তহবিলের ২ লাখ ৮০ হাজার টাকা পেলেও আজ পর্যন্ত পেনশনের প্রায় ১০ লাখ টাকার মধ্যে একটি টাকাও পাননি শিক্ষক নজরুল ইসলাম। সেই টাকার জন্য কয়েকবার গেছেন ঢাকা ব্যানবেইস অফিসে। সর্বশেষ দুই মাস আগে ঢাকায় অফিসে গেলে বলা হয় ব্যাংকে খোঁজ নিতে। সেটা ছিল আশার বাণী, বাস্তবে ব্যাংকে কোনো টাকা আসেনি।

আরও পড়ুনঃ  বেনজীরের রিসোর্ট আপাতত বন্ধ ঘোষণা

নজরুল ইসলাম জানান, গ্রামে এখন হোমিওপ্যাথি চিকিৎসা দেন তিনি। সেখানে দিনে সর্বোচ্চ ১০০ টাকা আয় হয়। সেটা দিয়ে কোনো মতে সংসার চালান।

তিনি বলেন, কল্যাণ তহবিল থেকে পাওয়া টাকা দিয়ে স্ত্রীর চিকিৎসা করিয়েছেন। পেনশনের টাকাটা পেলে হয়ত স্ত্রীর উন্নত চিকিৎসা করাতে পারতেন। তবে সেই টাকা পাওয়ার আগেই স্ত্রী মারা গেছেন। মানসিক অসুস্থ কন্যাকেও টাকার অভাবে চিকিৎসা করাতে পারছেন না। পেনশনের টাকা পেলে মেয়েকে পাবনায় নিয়ে উন্নত চিকিৎসা করাবেন এমনটাই প্রত্যাশা তার।

সরেজমিনে দেখা যায়, শিক্ষক নজরুল ইসলাম দুই কক্ষবিশিষ্ট অর্ধপাকা একটি টিনের বাড়িতে বসবাস করেন। একটি কক্ষে অসুস্থ স্ত্রীকে নিয়ে থাকতেন তিনি। ছয় মাস ধরে শরীরের মাংস পচন রোগে ভোগে ১৩ জুন মারা যান তিনি। অপর কক্ষে থাকে মানসিকভাবে অসুস্থ হয়ে শয্যাশায়ী মেয়ে রুমা খাতুন (২৬)। স্নাতক পাস করার পর বিয়ে দিয়েছিলেন মেয়েকে। তবে অভিযোগ আছে মেয়ের শ্বশুরকুলের জাদুটোনার কারণে সেই সংসার টেকেনি। গত চার বছর ধরে মেয়ে মানসিক ভারসাম্যহীন হয়ে পড়েছেন। অর্থাভাবে হোমিওপ্যাথি চিকিৎসা চলছে তার।

আরও পড়ুনঃ  বাবা-মেয়ের পর ভিমরুলের কামড়ে প্রাণ গেল ছোট্ট সিফাতেরও

শিক্ষক নজরুল ইসলাম বলেন, স্ত্রীর শরীরে ফোঁড়া হয়েছিল। অর্থের অভাবে গ্রামের চাঁদশী ডাক্তার সেই ফোঁড়া অপারেশন করে। পরে প্রচুর রক্তক্ষরণ হয়, পচন রোগ এসে যায়। অর্থাভাবে উন্নত চিকিৎসা না পেয়ে সে মারা গেল।

তিনি বলেন, আমার দুই ছেলে, তারা যে যার মতো আলাদা থাকে। তাদের সঙ্গে আমার কোনো সম্পর্ক নেই। আমি নিজেও সড়ক দুর্ঘটনার রোগী। পেনশনের টাকার জন্য কয়েকবার ঢাকার নীলক্ষেত ব্যান বেইসে গিয়েছি, সেখান থেকে আমার কাগজপত্র অস্পষ্ট বলে ফিরিয়ে দিয়েছে। পরে কাগজপত্র ঠিক করে আবারও পাঠিয়েছি।

আরও পড়ুনঃ  এখনো খোঁজ মেলেনি নিখোঁজ দুই পুলিশ কর্মকর্তার

তিনি অভিযোগ করে বলেন, আমার পরে অবসরে গিয়ে পেনশনের টাকা পেয়েছে অন্য শিক্ষক কিন্তু অজানা কারণে আমি টাকাটা পাচ্ছি না।

তিনি বলেন, আমার ছাত্র অনেকে ডাক্তার, ইঞ্জিনিয়ার হয়ে দেশে বিদেশে চাকরি করছে। কেউ আজ পর্যন্ত আমার খোঁজখবর নেয়নি। সম্প্রতি আমি ফেসবুকে লাইভে এসে আমার জীবন দশার কথা বললে, অনেকে যোগাযোগ করেছে, সহযোগিতার আশ্বাস দিয়েছে, কিন্তু কেউ এখনো সহযোগিতা করেনি।

যশোর জেলা শিক্ষা অফিসার মো. মাহফুজুল হোসেন বলেন, এটা জেলা শিক্ষা অফিসের আওতায় না। মাদ্রাসার বিষয়গুলো উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার দেখাশোনা করেন।

বাঘারপাড়া উপজেলা ভারপ্রাপ্ত শিক্ষা কর্মকর্তা মো. আশিকুজ্জামান বলেন, অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক নজরুল ইসলামের বিষয়টি নিয়ে আমাদের মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসের কিছুই করার নেই। এটা ওই মাদ্রাসার সভাপতির স্বাক্ষরসহ ঢাকা কল্যাণ বোর্ডে আবেদন করতে হবে। এখানে আমাদের কিছু করার নেই।

সর্বশেষ সংবাদ
জনপ্রিয় সংবাদ