সাতক্ষীরার তালা উপজেলার লাউতাড়া গ্রামে নোটবুকে চিরকুট লিখে মৃত্যুর জন্য প্রেমিককে দায়ী করে কলেজছাত্রীর আত্মহত্যার ঘটনা ঘটেছে। এতে এলাকায় তোলপাড় শুরু হয়েছে। ঘটনার পরপরই প্রেমিক রিপন বাড়ি থেকে পালিয়েছে।
এদিকে এলাকার মানুষ রিপনকে গ্রেপ্তার করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবিতে সোচ্চার হচ্ছে। অন্যদিকে থানায় আত্মহত্যার প্ররোচনার মামলা দায়ের হওয়ার পর থেকে পুলিশ প্রেমিক রিপন সরকার ও তার বাবা বিকাশ সরকারকে গ্রেপ্তারের জন্য অভিযান চালিয়ে যাচ্ছে।
সূত্রে জানা গেছে, উপজেলার হাতবাস গ্রামের দরিদ্র মিঠুন সরকারের মেয়ে প্রিয়াংকা সরকারের সঙ্গে একই গ্রামের খ্রিস্টান সম্প্রদায়ের হাউস চার্চ পালক বিকাশ সরকারের ছেলে রিপন সরকারের দীর্ঘদিন প্রেম চলছিল। রিপন ও প্রিয়াংকা উভয়ে সাতক্ষীরায় অনার্সে পড়ত। এই প্রেমের বিয়েতে প্রিয়াংকার পরিবার রাজি হলেও, প্রেমিক রিপনের বাবা বিকাশ সরকার আপত্তি তোলেন।
একপর্যায়ে রিপনও প্রেমকে অস্বীকার করতে থাকে। এ নিয়ে সম্পর্কের দূরত্ব তৈরি হলে শুক্রবার বেলা সাড়ে ১১টার দিকে প্রিয়াংকা সরকার নিজ ঘরের মধ্যে গলায় ফাঁস দিয়ে আত্মহত্যা করে। আত্মহত্যার আগে প্রিয়াংকা একটি নোটবুকে মৃত্যুর জন্য প্রেমিক রিপনকে দায়ী করে লিখে রেখে যায়।
চিরকুটে লেখা ছিল, ‘তুমি আমাকে কথা দিয়েছিলে ছেড়ে যাবে না, তা যায় হয়ে যাক। তুমি ঠকিয়েছ আমাকে। তুমি শেষ করে দিলে সবকিছু। আমার মৃত্যুর জন্য তুমি দায়ী।’
সেখানে আরও লেখা ছিল, ‘তোমার মতো কেউ ভালোবাসবে না আমাকে। আবার তোমার মতো ক্ষতিও করবে না কেউ। বাই (ভালো থেকো) (রিপন প্রিয়াংকা)।’
নোটবুকের ওই একই পৃষ্ঠায় চিরকুটের ওপরের অংশে রিপন নিজ হাতে প্রিয়াংকাকে কিছু নির্দেশনা লিখে দেয়। যেখানে রিপন প্রিয়াংকার উদ্দেশ্যে লেখে, ‘০১। যারা ব্যাড তাদের সাথে চলাফেরা করা যাবে না, ০২। এমন কোনো বান্ধবী থাকবে না যে খারাপ, ০৩। ক্লাস টাইম শেষ হলে আমার ডিপার্টমেন্টের কাছে আসবা।’ লেখার শেষাংশে রিপনের সই রয়েছে।
এদিকে অপর একটি সূত্র জানিয়েছে, প্রিয়াংকার সঙ্গে সম্পর্ক খারাপ হওয়ায় রিপন ক্ষুব্ধ হয়ে ফেসবুকের একটি ফেক আইডির মাধ্যমে তাদের কিছু নগ্ন ছবি ও ভিডিও ফেসবুকসহ মেসেঞ্জারে ছড়িয়ে দেয়। এতে ক্ষোভে, লজ্জায় প্রিয়াংকা আত্মহত্যা করে।
আত্মহত্যার সংবাদ পেয়ে তালা থানা পুলিশ শুক্রবার বিকেলে প্রিয়াংকার মরদেহ উদ্ধার করে থানায় নিয়ে যায়। ওই দিন রাতে প্রিয়াংকার বাবা বাদী হয়ে প্রেমিক রিপন ও তার বাবা বিকাশ সরকারের বিরুদ্ধে থানায় মামলা করেন।
তালা থানার ওসি মো. মমিনুল ইসলাম জানান, আত্মহত্যার ঘটনায় মেয়ের বাবা মিঠুন সরকার বাদী হয়ে শুক্রবার রাতে তালা থানায় রিপন ও তার বাবা বিকাশ সরকারের বিরুদ্ধে আত্মহত্যার প্ররোচনার দায়ে একটি মামলা দায়ের করেছেন।
তিনি বলেন, আত্মহত্যার পরপরই রিপন ও তার পরিবারের সদস্যরা বাড়ি থেকে পালিয়ে যাওয়ায় কাউকে গ্রেপ্তার করা সম্ভব হয়নি। তবে, এজাহারনামীয় আসামিদের গ্রেপ্তারের অভিযান অব্যাহত। শনিবার সকালে সাতক্ষীরা মর্গ থেকে কলেজছাত্রীর মরদেহের ময়নাতদন্ত শেষে তার পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে।