রাজধানীর যাত্রাবাড়ী এলাকার বাসিন্দা ব্যবসায়ী মনসুর আলী এবার তিন লাখ ২৫ হাজার টাকা দিয়ে একটি গরু কিনে কোরবানি দিয়েছেন। ঈদুল আজহার দিন গতকাল সোমবার (১৭ জুন) কোরবানির পর বিকেল পর্যন্ত অপেক্ষার পরও কোনো ব্যবসায়ী চামড়াটি কিনতে আসেননি। হতাশ হয়ে তিনি সন্ধ্যায় একটি রিকশায় করে চামড়াটি যাত্রাবাড়ী মোড়ে নিয়ে ৪০০ টাকায় বিক্রি করেছেন।
চামড়া ব্যবসায়ীদের কাছে প্রশ্ন ছুড়ে দিয়ে মনসুর আলী জানতে চান, ‘চামড়ার তৈরি এক জোড়া জুতা কিনতে গেলে তিন হাজার টাকার নিচে পাওয়া যায় না। একটি সাধারণ মানের চামড়ার বেল্টের দামও ১৫শ টাকার কম নয়। তাহলে একটি বিশাল গরুর আস্ত চামড়ার দাম তিন থেকে চারশ টাকা হবে কেন?’
মনসুর আলীর এ প্রশ্নটি করা হয়েছিল বাংলাদেশ ট্যানার্স এসোসিয়েশনের (বিটিএ) সদস্য ও আরাব ট্যানারি প্রাইভেট লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ইলিয়াসুর রহমানের কাছে। এনটিভি অনলাইনকে তিনি বলেন, ‘চারশ টাকার একটি চামড়া অনেক হাত বদল হয়ে আমাদের হাত পর্যন্ত আসতে খরচ পড়ে এক হাজার ৫০০ টাকার বেশি। চামড়া সংরক্ষণের জন্য প্রয়োজনীয় লবনের দাম অনেক বেশি। তাছাড়া দেশে চামড়াজাত পণ্যের বেশিরভাগই আমদানি করা। ফলে দেশে চামড়ার চাহিদা নেই বললেই চলে। রপ্তানিতেও নানা ধরণের বাধা-বিপত্তি রয়েছে। এসব কারণে ট্র্যানারি মালিকরা চামড়া কিনতে চান না। আমরা যে দামেই চামড়া ক্রয় করি না কেন তাতে আমাদের লোকসানই গুনতে হয়।’
এদিকে এ বছর পবিত্র ঈদুল আজহায় সারা দেশে এক কোটি চার লাখ আট হাজার ৯১৮টি গবাদিপশু কোরবানি করা হয়েছে। গত বছর সারা দেশে কোরবানি করা গবাদিপশুর সংখ্যা ছিল এক কোটি ৪১ হাজার ৮১২টি। ২০২২ সালে এ সংখ্যা ছিল ৯৯ লাখ ৫০ হাজার ৭৬৩টি। গত বছরের তুলনায় এবার তিন লাখ ৬৭ হাজার ১০৬ টি গবাদিপশু বেশি কোরবানি হয়েছে।
কোরবানি হওয়া এ বিপুল পরিমাণ গবাদি পশুর চামড়া রপ্তানির জন্য যে ধরনের উদ্যোগ ও ব্যবস্থাপনা দরকার তা বাংলাদেশে নেই বলে জানান বাংলাদেশ ট্যানার্স এসোসিয়েশনের অপর এক সদস্য। নাম প্রকাশ না করার শর্তে এনটিভি অনলাইনকে তিনি বলেন, ‘চামড়া সংরক্ষণ, প্রক্রিয়াজাতকরণ ও রপ্তানির জন্য কী ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে?’ কিছুই হয়নি বলেও জানান এসোসিয়েশনের এ সদস্য। তিনি আরও বলেন, ‘চীনারা আমাদের কাছ থেকে কিছু চামড়ার অর্ডার করে। একজন বায়ার (ক্রেতা) এক লাখ ফুট চামড়ার অর্ডার করলে পরবর্তীতে তিনি নেন মাত্র ৫০ হাজার ফুট। বাকি চামড়ার অর্ডার নানা কারণ দেখিয়ে বাতিল করে দেন। এরপরেও তাদের অনেক শর্ত থাকে। নানা ধরণের সনদ দিতে হয় তাদের। এগুলো সংগ্রহ করতে গিয়ে আমাদের গলদঘর্ম অবস্থা হয়ে যায়।