23 C
Dhaka
Friday, November 22, 2024

রাসেল ভাইপার মারলেই ৫০ হাজার টাকা পুরস্কার, কথা রাখলেন না আ.লীগ নেতা

কিছুদিন যাবত বিষাক্ত রাসেল ভাইপার সাপের কামড়ে ফরিদপুর বেশ কয়েকজনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে। রাসেল ভাইপার সাপ বাংলাদেশে চন্দ্রবোড়া বা উলুবোড়া নামেও পরিচিত। প্রচলিত আছে এ সাপ কামড়ালে বেঁচে থাকার সম্ভাবনা খুবই কম এবং এর অ্যান্টিভেনম এখনো পর্যন্ত বাংলাদেশে নেই। এমন বিষধর রাসেল ভাইপার সাপ পিটিয়ে মেরে ফেললে হবে না, পরিবেশ সম্মত উপায়ে জীবিত অবস্থায় ধরতে পারলে তবেই নাকি দেওয়া হবে ৫০ হাজার টাকা পুরস্কার। একদিন অতিবাহিত না হতেই নিজেদের অবস্থান এভাবেই পাল্টে ফেলে পুরস্কার দেওয়ার বিষয়টি পরিষ্কার করলেন ফরিদপুর জেলা আওয়ামী লীগ।

শুক্রবার (২১ জুন) সন্ধ্যায় জেলা আওয়ামী লীগের দপ্তর সম্পাদক সৈয়দ আলী আশরাফ পিয়ার স্বাক্ষরিত এক প্রেস বিজ্ঞপ্তি থেকে এ তথ্য জানা যায়।

প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে তাদের অবস্থান পরিষ্কার করে বলা হয়েছে, ফরিদপুর জেলা আওয়ামী লীগের কার্যনির্বাহী কমিটির প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর প্রস্তুতি সভায় আলোচ্যসূচির ‘বিবিধ’ পর্যায়ে বিষধর রাসেল’স ভাইপার সর্প প্রসঙ্গে জনস্বার্থে প্রতিকার সম্পর্কিত আলোচনা হয়। এক পর্যায়ে জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি শামীম হক এবং সাধারণ সম্পাদক শাহ্ মোহাম্মদ ইশতিয়াক আরিফ ঘোষণা দেন যে, ফরিদপুর সদর উপজেলাধীন কেউ যদি নিজেকে রক্ষাকারী পোশাক সম্বলিত হয়ে এবং সব ধরনের সাবধানতা অবলম্বনপূর্বক জনস্বার্থে রাসেল’স ভাইপার সর্পটি জীবিতাবস্থায় ধরতে পারেন- তবে তাকে ৫০ হাজার টাকায় পুরস্কৃত করা হবে। দুর্ভাগ্যজনকভাবে, ভুল বুঝাবুঝির কারণে ফেসবুকসহ নানা সামাজিক মাধ্যমে বক্তব্যটি বিকৃত আকারে ‘সাপ মারতে পারলে’ হিসাবে প্রকাশিত হয়, যা অত্যন্ত দুঃখজনক।

আরও পড়ুনঃ  ‘চাটমোহরে জয় বাংলা স্লোগান দিলে মাটির সঙ্গে মিশিয়ে দেয়া হবে’

অথচ এর একদিন আগে বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় জেলা আওয়ামী লীগের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী পালনের প্রস্তুতি সভার বিবিধ প্রসঙ্গ আলোচনায় জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক শাহ মোহাম্মদ ইশতিয়াক আরিফের এক বক্তব্যে রাসেল ভাইপার সাপের উপদ্রবের বিষয়টি উঠে আসে। জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি শামীম হক, মহিলা সংরক্ষিত আসনের সংসদ সদস্য ঝর্ণা হাসানসহ অন্যান্য নেতৃবৃন্দের উপস্থিতিতে শাহ আরিফকে স্পষ্টত বলতে দেখা যায় ‘ফরিদপুরের আজকের পর থেকে রাসেল ভাইপার সাপ যদি কেউ মারতে পারে আমাদের সভাপতি সাহেব তাকে ৫০ হাজার টাকা পুরস্কার দেবে।

রাসেল ভাইপার মারলেই ৫০ হাজার টাকা পুরস্কার
জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদকের এই বক্তব্য বিভিন্ন মিডিয়ায় খুব ফলাও করে প্রকাশিত হয়। প্রায় সবকটি গণমাধ্যমে বলা হয়, কোতয়ালী থানা এলাকায় কেউ রাসেল ভাইপার সাপ মারতে পারলে তাকে ৫০ হাজার টাকা পুরস্কার দেওয়া হবে। এ বক্তব্যে বন ও পরিবেশ কর্মীদের মাঝে আপত্তি থাকলেও সাধারণ মানুষ এই ঘোষণাকে স্বাগত জানান। কিন্তু ঘোষণা দেওয়ার ২৪ ঘণ্টা পার না হতেই নিজেদের অবস্থান পাল্টে ফেলে জেলা আওয়ামী লীগ।

আরও পড়ুনঃ  আখাউড়ায় ব্যালট বাক্স ছিনতাই, পুকুর থেকে উদ্ধার

এদিকে আগের দিন রাসেল ভাইপার পিটিয়ে মারতে পারলে ৫০ হাজার টাকা পুরস্কার দেওয়া হবে জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ইশতিয়াক আরিফের এমন ঘোষণা অনুযায়ী জেলা আওয়ামী লীগের প্রেস বিজ্ঞপ্তির আগেই শুক্রবার সকালে ফরিদপুর সদর উপজেলার ডিক্রিরচর ইউনিয়নের আইজউদ্দীন মাতুব্বরের ডাঙ্গি গ্রামে ক্ষেতে কাজ করার সময় একটি রাসেলস ভাইপার সাপ পিটিয়ে মারেন ওই গ্রামের তোতা মোল্লার ছেলে মুরাদ মোল্লা (৪৫)। আগের দিন একই গ্রামের হারুন শেখের ছেলে ইউসুফ আরও একটি রাসেল ভাইপার সাপ পিটিয়ে মেরে ফেলেছে বলে জানা যায়। সাংবাদিক প্রশ্নের মুখে পড়ার আগেই প্রেস বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে জেলা আওয়ামী লীগ তাদের অবস্থান পরিষ্কার করল। এ যেন কথা দিয়ে কথা রাখলেন না আওয়ামী লীগ নেতা।

আরও পড়ুনঃ  পাহাড়ধসে নিখোঁজ একই পরিবারের ৩ জনের মরদেহ উদ্ধার

সার্বিকভাবে বিষয়টি জানতে জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ইশতিয়াক আরিফের মোবাইলে ফোন করলে তিনি জানান, হয়তো বিষয়টি বলার ভুল কিংবা বোঝার ভুল হতে পারে। বিষধর হলেও এসব সাপ পরিবেশের বাস্তু সংস্থানের একটি অংশ। কিন্তু বর্তমানে ফরিদপুরের চরের মানুষেরা ভীষণ আতঙ্কগ্রস্ত এ নিয়ে। এ জন্যই আমরা সবাইকে সতর্ক হতে এ ঘোষণা দিয়েছি। তবে সাপ মারা যাবে না, জীবিত অবস্থায় ধরতে পারলে তাকে পুরস্কার দেওয়া হবে।

এ বিষয়ে ফরিদপুরের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা গোলাম কুদ্দুস ভুঁইয়া কালবেলাকে জানান, যেকোনো বন্যপ্রাণী নিধন আইনগত দণ্ডনীয় অপরাধ। রাসেলস ভাইপার এ দেশ থেকে বিলুপ্ত হওয়ার পরে ২০১৪ সাল থেকে আবার সাপটির দেখা যাচ্ছে। পুরস্কারের এ ঘোষণায় উদ্বুদ্ধ হয়ে কেউ যদি রাসেলস ভাইপার সাপ ধরতে অথবা মারতে গিয়ে সাপের কামড়ে মারা যায়, তবে এ দায় কে নেবে?

সর্বশেষ সংবাদ
জনপ্রিয় সংবাদ