26 C
Dhaka
Thursday, November 21, 2024

চরিত্র পাল্টে ‘যমদূত’ রাসেলস ভাইপার কেন এত ভয়ঙ্কর হয়ে উঠছে?

ভয়াবহ বিষধর রাসেলস ভাইপার সাপের আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে সারা দেশে। এক সময়ের বিলুপ্তপ্রায় এই সাপ ক্রমেই সারা দেশে ছড়িয়ে পড়েছে। বরেন্দ্র এলাকা ছেড়ে সাপটির দেখা মিলছে বরিশাল, পটুয়াখালী, চাঁদপুর এমনকি ঢাকার আশপাশেও। চলতি বছর এ সাপের কামড়ে মারা গেছেন ১০ জন।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, খাদ্যশৃঙ্খল নষ্ট হওয়ায় বেড়েছে এ সাপের প্রাদুর্ভাব। তাই কৃষকদের গামবুট পরা উচিত।

রাসেলস ভাইপার দেখতে অনেকটা অজগরের বাচ্চার মতো। ছোট ও সরু লেজের সরীসৃপটি দৈর্ঘ্যে তিন থেকে পাঁচ ফুট পর্যন্ত হয়ে থাকে। মাথা চ্যাপ্টা, ত্রিভুজাকার এবং ঘাড় থেকে আলাদা। শরীরজুড়ে অনেকটা চাঁদের মতো গাঢ় বাদামি গোলগোল দাগ। দৈহিক এই বৈশিষ্টের কারণে শুকনো পাতা বা ধানক্ষেতের মধ্যে খুব সহজেই লুকিয়ে রাখতে পারে নিজেকে।

বলছি বিশ্বের অন্যতম বিষধর সাপ রাসেলস ভাইপারের কথা। যা স্থানীয়ভাবে চন্দ্রবোড়া বা উলুবোড়া নামেও পরিচিত।

আরও পড়ুনঃ  বাংলাদেশে নাকি ওড়িশা কোথায় আঘাত হানবে ঘূর্ণিঝড় ডানা?

সাধারণত সাপ মানুষকে এড়িয়ে চললেও ঠিক উল্টো স্বভাব রাসেলস ভাইপারের। নিজেকে বিপন্ন মনে করলেই করে বসে আক্রমণ। এক্ষেত্রে এটি এত ক্ষিপ্র যে, এক সেকেন্ডের ১৬ ভাগের একভাগ সময়ে শেষ করতে পারে পুরো প্রক্রিয়া। ক্ষেপে গেলে শব্দ করে প্রচণ্ড জোরে। ঠিক যেন প্রেসার কুকারের মতো।

রাসেলস ভাইপারের বিষ হেমাটোটক্সিক। যার কারণে ছোবল দিলে আক্রান্ত স্থানে পচন ধরে। ছোবলের পাঁচ মিনিটের মধ্যে ফুলে যায় ক্ষতস্থান। এর বিষ নষ্ট করে দিতে পারে ফুসফুস, কিডনিসহ বিভিন্ন অঙ্গপ্রত্যঙ্গ।

বেশিরভাগ সাপ ডিম পাড়লেও রাসেলস ভাইপার বাচ্চা দেয়। গর্ভধারণ শেষে স্ত্রী রাসেলস ভাইপার সাধারণত ২০ থেকে ৪০টি বাচ্চা দেয়। তবে ৮০টি পর্যন্ত বাচ্চা দেয়ার রেকর্ডও আছে। একদিকে উচ্চ প্রজনন ক্ষমতা অন্যদিকে বেজি, গুইসাপসহ প্রকৃতি থেকে সাপের শত্রু বিলীন হয়ে যাওয়া। অন্যদিকে ইঁদুর, ব্যাঙ রাসেলস ভাইপারের প্রিয় খাবার, যা ফসলের ক্ষেতে থাকে। ফলে ওইসব জায়গায় সাপের পর্যাপ্ত খাবারের উপস্থিতি থাকায় বাড়ছে রাসেলস ভাইপার।

আরও পড়ুনঃ  কবে খুলবে ফেসবুক, জানালেন প্রতিমন্ত্রী পলক

বন্যপ্রাণী ও পরিবেশ বিশেষজ্ঞ মো. আবু সাঈদ সময় সংবাদকে বলেন,
দেশের সব অঞ্চলে শিয়াল, গুইসাপ ও বেজি দেখলেই লোকজন মেরে ফেলছেন। তারা জানেন না, এগুলোর উপকারিতা কত! এ কারণেই রাসেলস ভাইপারের সংখ্যা বেড়ে যাচ্ছে। কারণ তার খাদক নেই। ইকো সিস্টেমে ব্রেক হয়ে গেছে।

দেশে একটা সময় বিলুপ্ত বলা হলেও দেশজুড়ে এখন মাথাব্যথার কারণ এই রাসেলস ভাইপার। বরেন্দ্র অঞ্চলের বাসিন্দা হলেও সাপটির রাজত্ব এখন দেশের অন্তত ২৫টি জেলায়। পৌঁছে গেছে চাঁদপুর, বরিশাল, পটুয়াখালী পর্যন্ত। সবথেকে বেশি আনাগোন মানিকগঞ্জ, ফরিদপুর, শরিয়তপুরসহ পদ্মা, মেঘনা ও যমুনার অববাহিকায়। যার ছোবলে চলতি বছর এরই মধ্যে মারা গেছেন অন্তত ১০ জন। যাদের অধিকাংশই কৃষক এবং জেলে।

আরও পড়ুনঃ  যুগপৎ আন্দোলনে জামায়াতকে নেয়ার পরামর্শ

পর্যাপ্ত সুরক্ষা সামগ্রী ছাড়া মাঠে কাজ করা এবং সাপে কাটার পর গ্রামীণ জনপদ এখনো ঝাড়ফুঁকের মতো কুসংস্কার থেকে মুক্ত না হওয়ার মৃত্যুর সংখ্যা বাড়ছে। যদিও উপজেলা পর্যায়ে পর্যাপ্ত এন্টিভেনম না থাকারও অভিযোগ আছে।

বন্যপ্রাণী ও পরিবেশ বিশেষজ্ঞ মো. আবু সাঈদ বলেন,
সাপ দংশন করলে দ্রুত হাসপাতালে যাওয়া উচিত। ওঝার বাড়িতে গিয়ে অনেকে সময় নষ্ট করেন। এতে বিষক্রিয়া পুরোপুরি প্রকাশ পেয়ে গেলে আইসিইউ সাপোর্ট ছাড়া রোগীকে বাঁচানো যাবে না।

স্বাস্থ্য অধিদফতরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. আহমেদুল কবির বলেন, অ্যান্টিভেনম উপজেলা পর্যায় পর্যন্ত দেয়া আছে। যেসব এলাকায় সাপের উপদ্রব বেশি, সেসব জায়গায় সংরক্ষিত আছে। এনসিডির (নন কমিউনিকেবল ডিজিজ) সঙ্গে যোগাযোগ করলে সেটি পৌঁছে দেয়া হচ্ছে।

দেশে বছরে চার লাখেরও বেশি মানুষকে সাপে কাটে, যাদের মধ্যে সাত হাজারের বেশি মানুষের মৃত্যু হয়।

সর্বশেষ সংবাদ
জনপ্রিয় সংবাদ