চোখ ধাঁধানো বিজ্ঞাপন আর নানা চমকের কারণে বারবার আলোচনায় আসে সাদিক এগ্রো। দেখেশুনে মনে হয় এই ‘সাদিক এগ্রো’ দেশের গরু খামারীদের জন্য বড় দৃষ্টান্ত। কিন্তু এই খামারের আড়ালেই দিনে দিনে উত্থান ঘটেছে এক গরু চোরাচালান সিন্ডিকেটের। আর এই সিন্ডিকেটের নিয়ন্ত্রণ করেন গরু মাফিয়া মোহাম্মদ ইমরান হোসাইন।
ভারত, থাইল্যান্ড, মিয়ানমার, যুক্তরাষ্ট্রসহ বিভিন্ন দেশ থেকে চোরাইপথে গরু আনেন ইমরান হোসাইন। সেজন্য স্তরে স্তরে রাখা হয় দালাল। নানা জাতের এসব বিদেশি গরু রাখার জন্য দেশের বিভিন্ন প্রান্তে গড়ে তোলা হয়েছে গোপন ডেরা।
অনুসন্ধানে জানা গেছে, কক্সবাজারের উখিয়া সীমান্ত দিয়ে গরু চোরাচালানের রুট নিয়ন্ত্রণ করেন ইমরান হোসাইন। এর সঙ্গে যুক্ত সেখানকার হলদিয়াপালং ইউনিয়নের চেয়ারম্যান ইমরুল কায়েস। তিনি চোরাই পথে আসা গরু সীমান্ত পারাপার এবং স্থানীয়ভাবে দেখভালের দায়িত্ব পালন করেন। এ-সংক্রান্ত অনেক ভিডিও এবং ছবিও কালবেলার কাছে রয়েছে।
অনুসন্ধানে প্রাপ্ত তথ্য বলছে, থাইল্যান্ড থেকে উন্নত জাতের গরু মিয়ানমার হয়ে উখিয়া সীমান্ত দিয়ে বাংলাদেশে প্রবেশ করে। এর নেপথ্যে ভূমিকা রাখেন ইমরান। তবে এই প্রক্রিয়ায় দেশে আসা গরু বছিলার সাদেক এগ্রোর খামারে রাখা হয় না। নানা মাধ্যমে সেগুলো রাখা হয় নরসিংদীর শেখ ক্যাটল ফার্মে।
বিভিন্ন সূত্রে পাওয়া একাধিক ভিডিওতে দেখা গেছে, থাইল্যান্ড থেকে আসা গরু উখিয়া সীমান্ত দিয়ে বাংলাদেশে প্রবেশ করছে। এরপর সেগুলো দীর্ঘদিন রাখা হয় ইমরুল কায়েসের জিম্মায়। সেজন্য উখিয়ার গহিন জঙ্গলে তৈরি করা হয়েছে গোপন ডেরা। সেখানে সাধারণত আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী এবং সাধারণ মানুষের চোখ পড়ে না।
একাধিক ভিডিওতে দেখা যায়, থাইল্যান্ড থেকে আসা গরু ওই ডেরায় দেখভাল করছেন ইমরুল কায়েস। একটি ভিডিওতে সেখানে সাদেক এগ্রোর মালিক ইমরান হোসাইনকেও গরুর তদারকি করতে দেখা যায়।
অনুসন্ধান বলছে, উখিয়া থেকে সুযোগ মতো গরু এনে দীর্ঘদিন রাখা হয় নরসিংদীর শেখ ক্যাটল ফার্মে। এ ছাড়া বছিলার নবীনগর হাউজিংয়ের একটি গোপন ফার্মেও রাখা হয় এসব গরু। সরেজমিন এর প্রমাণও মিলেছে।
কালবেলার হাতে থাকা ছবিতে দেখা যায়, নরসিংদীর ওই ক্যাটল ফার্মে রাখা রয়েছে থাইল্যান্ড থেকে আসা গরু। প্রতিটি গরুর ওপর রয়েছে থাইল্যান্ডের মার্ক করা সিরিয়াল নম্বরও। আর প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের তথ্য বলছে, বৈধভাবে থাইল্যান্ড থেকে কোনো গরু বাংলাদেশে আসেনি। সেই সুযোগও নেই। সুতরাং এসব গরু আনা হয়েছে চোরাই পথে।