18 C
Dhaka
Wednesday, December 11, 2024

কমিশন ছাড়া ফাইল ছাড়েন না ফেরদাউছ

পদে সার্টিফিকেট সহকারী, দায়িত্ব পালন করেন উপজেলা নির্বাহী কার্যালয়ের গোপনীয় শাখায়। অভিযোগ রয়েছে গোপনীয় শাখায় বসে গোপনভাবেই বিভিন্ন সেবাপ্রার্থীদের কাছ থেকে কমিশন নিয়ে থাকেন তিনি। এ জন্য উপজেলা ইউএনও অফিসের সবাই তাকে চেনে কমিশন বয় হিসেবে।

বলছি বগুড়ার সোনাতলা উপজেলার সার্টিফিকেট সহকারী ফেরদাউছ রহমানের কথা। যিনি উপজেলায় ইউএনও অফিসের ‘সিএ সাহেব’ হিসেবে সবার কাছে পরিচিত।

অভিযোগ রয়েছে তিনি ইউএনওর নাম ভাঙিয়ে বিভিন্ন ফাইল আটকে কমিশন দাবি করেন সেবা প্রার্থীদের কাছে। এমন একাধিক ভুক্তভোগী কালবেলার এ প্রতিবেদকের কাছে অভিযোগ করেন।

ইউএনও অফিসের একাধিক কর্মচারী নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, ফেরদাউছ সাহেব বিভিন্নভাবে যে কমিশন খায় এটা উপজেলার ভেতর ওপেন সিক্রেট। সোনাতলায় যোগদানের পর থেকেই তিনি এ কমিশন খেয়ে আসছেন। তবে কেউ তাকে কিছু বলে না। কারণ ইউএনও স্যারের সঙ্গে কাজ করেন তিনি। বললেই যদি আমাদের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেয়। তাই আমরা ভয়ে মুখ খুলতে পারি না। এটা বিগত ইউএনও স্যারদের সময় থেকেই হয়ে আসছে।

তারা আরও বলেন, কমিশনের টাকা দিয়ে বগুড়া শহরের জ্বলেশরী তলার মতো একটি জায়গায় ১ কোটি টাকা দিয়ে ফ্ল্যাট কিনেছেন, ৫০ লাখ টাকা দিয়ে জমি কিনেছেন। দুর্নীতি ছাড়া এগুলো কীভাবে সম্ভব আপনারাই বলুন।

আরও পড়ুনঃ  সিরাজগঞ্জে থানায় হামলা চালিয়ে ১১ পুলিশকে হত্যা

শুধু তাই না তার বিরুদ্ধে আরও অভিযোগ রয়েছে তিনি কর্মচারীদের বেতনের টাকা থেকেও কমিশন চান। এর প্রতিবাদ করতে গিয়ে এক কর্মচারী ফেরদাউছ রহমানের রোষানলেও পরেন।

এ ছাড়াও তার বিরুদ্ধে অভিযোগ রয়েছে তিনি উপজেলার বিভিন্ন দপ্তরের চেক হস্তান্তরের সময় কমিশন চান। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, ক্লিনিক, হোটেল, ডেকোরেটরদের বিভিন্ন বিল দেওয়ার সময়ও তার কমিশন কেটে রাখেন। শুধু তাই না টিসিবির ভুয়া তিনটি কার্ড ব্যবহার করেও পণ্য তোলার অভিযোগ রয়েছে তার বিরুদ্ধে।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক ঠিকাদার অভিযোগ করে বলেন, বিলের চেক নিতে গেলে ফেরদাউছ সাহেব কমিশন দাবি করেন।

উপজেলার হিলফুল ডেকোরেটরের স্বত্বাধিকারী জাহিদুল ইসলাম বলেন, আগে উপজেলার জাতীয়সহ সব প্রোগ্রামে আমি কাজ করতাম। প্রতিটি বিলের ক্ষেত্রে ফেরদাউছ সাহেব ঝামেলা করত। সরকারিভাবে যে বিল হতো তা উত্তোলনে তাকে কমিশন ছাড়া বিল নিতে পারতাম না। কয়টা টাকাই আর বিল পাই, সেখান থেকে তাকেই যদি কমিশন দেই তাহলে আমার থাকে কী! সবশেষে আমি কমিশন দিতে অপারগতা প্রকাশ করায় আমাকে দিয়ে আর কোনো কাজ করান না ফেরদাউছ সাহেব।

আরও পড়ুনঃ  খালেদা জিয়াকে হত্যাচেষ্টা মামলার আসামি জায়েদ খান-জয়-সাজু খাদেম

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক উপজেলার এক ক্লিনিকের পরিচালক বলেন, বিভিন্ন সময়ে ফেরদাউছ সাহেব আমাদেরকে ফোন দিয়ে বিভিন্ন দিবসের কথা বলে টাকা নেন।

উপজেলা পরিষদের সাবেক মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান জান্নাতুল ফেরদৌস রূম্পা বলেন, আমি দায়িত্ব পালনকালে প্রকল্পের কাজ পেলে বলতেন, আপা কমিশন দিতে হবে ১০ পার্সেন্ট। ১ লাখ টাকার কাজে যদি ১০ পার্সেন্ট কমিশন দেই তাহলে কাজটা করবো কীভাবে? এ ছাড়াও বিভিন্ন বিল আটকে আমার থেকেও কমিশন চাইতেন।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে এক কর্মকর্তা বলেন, ইউএনও অফিসটাই পচাচ্ছেন ফেরদাউছ। ইউএনওদের কমিশন খাওয়ার পথও দেখান তিনি। তিনি সার্টিফিকেট সহকারী হয়েও সিএ’র দায়িত্ব পালন করেন। অথচ টেবিলে বা তার দরজার সামনে কোথাও তার পদবি উল্লেখ নেই। অথচ টেবিলে হলেও সার্টিফিকেট সহকারীর নেমপ্লেট ইউজ করা উচিত ছিল।

জানা যায়, সোনাতলা উপজেলায় সিএ’র পদটা দীর্ঘদিন ধরে শূন্য রয়েছে। তবে সেখানে সিএ হিসেবে দায়িত্ব পালন করার কথা ছিল উপজেলার আরেক কর্মচারী শাহাদাত হোসেনের।

আরও পড়ুনঃ  অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের পদত্যাগের দাবিতে বিক্ষোভ

শাহাদাত হোসেন বলেন, বর্তমানে আমি ওই উপজেলায় নেই। তবে ডিসি অফিসে এডিসি স্যারের সিএ হিসেবে দায়িত্ব পালন করছিলাম। সোনাতলাতেও আমাকে এই দায়িত্বে দেওয়ার কথা ছিল কিন্তু দায়িত্ব পাইনি।

কেন দায়িত্ব পাননি এ কথার জবাবে তিনি বলেন, ওখানকার সিএ’র দায়িত্ব পালন করেন ফেরদাউছ সাহেব। তিনি সার্টিফিকেট সহকারী হওয়া সত্ত্বেও এ কাজ করেন। তার ইউএনও স্যারদের সঙ্গে ভালো সম্পর্ক, হয়ত তাই তিনি এ দায়িত্ব পালন করেন।

আরও জানা যায়, গাবতলিতেও ফেরদাউছের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ ছিল।

এ অভিযোগগুলোর বিষয়ে জানতে চাইলে ফেরদাউছ রহমান বলেন, আমি এ মুহূর্তে আপনাদের সঙ্গে কোনো কথা বলতে চাচ্ছি না, যেহেতু আমার দোষের অন্ত নেই। আমার স্যারের নির্দেশনা বা অনুমতি ছাড়া কোনো কথা বলা যাবে না।

এ বিষয়ে জানতে চাইল উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সাবরিনা শারমিন বলেন, এ বিষয়ে আমি লিখিত অভিযোগ পেলে তদন্ত অনুযায়ী ব্যবস্থা নেব।

সর্বশেষ সংবাদ
জনপ্রিয় সংবাদ