ইসরায়েলের বিমান ও স্থল হামলায় যখন মরছিল ফিলিস্তিনের গাজাবাসী, তখন মার্কিন মুল্লুকে বসে অশ্রুপাত করছিলেন চট্টগ্রামের তরুণ আহমেদ রাফসান। গাজায় ক্ষুধার্ত শিশুদের অসহায় চোখ তাঁকে আর বসে থাকতে দেয়নি। আমেরিকার কিছু স্বেচ্ছাসেবক নিয়ে ছুটে যান মিশরের কাছের রাফা সীমান্তে। সেখান থেকে গাজার নানা ক্যাম্পে অসহায় ফিলিস্তিনিদের পাশে দাঁড়ান খাবার ও চিকিৎসা সামগ্রী নিয়ে।
রাফা সীমান্তে থেকে কয়েক মাস ত্রাণ সহয়তা দিয়ে সম্প্রতি দেশে ফেরেন রাফসান। আজ বুধবার ইনডিপেনডেন্ট টেলিভিশনের চট্টগ্রাম কার্যালয়ে আসেন তিনি। এ সময় গাজার অসহায় মানুষদের সহায়তা ও সেখানকার পরিস্থিতি নিয়ে কথা হয় তাঁর সঙ্গে।
রাফসান জানান, তিনি আমেরিকা প্রবাসী। ফিলিস্তিনিদের সহায়তার জন্য মা ও বোনের নামে ‘শিরিন-সাজমিলা ফাউন্ডেশন’ একটি প্রতিষ্ঠান খোলেন। প্রতিষ্ঠানটির নির্বাহী পরিচালক তিনি নিজেই। এরপর রাফা সীমান্ত থেকে খুঁজে নেন স্থানীয় কিছু স্বেচ্ছাসেবক। অন্তত ৩০ জন স্বেচ্ছাসেবক নিয়ে ফেব্রুয়ারিতে প্রথমে ত্রাণ ও চিকিৎসা সেবা দেন গাজার ‘দের আল বালাহ’ ক্যাম্পে। এরপর গাজা ও রাফার দুর্গত এলাকায় চিকিৎসা ও ত্রাণ সেবা নিয়ে ছুটে যায় তাঁর প্রতিষ্ঠান ‘শিরিন-সাজমিলা ফাউন্ডেশন’।
ফিলিস্তিনিদের সহায়তার বিষয়ে রাফসান জানান, মা ও বোনের নামে প্রতিষ্ঠিত সংগঠনের ব্যানারে তিনি এ পর্যন্ত গাজার অন্তত ১০ হাজার অসহায় ফিলিস্তিনিকে চিকিৎসা ও খাবার সহায়তা দিয়েছেন। এ ছাড়া মিশর সীমান্তে শরণার্থী হিসেবে যাওয়া ২০০ পরিবারকে থাকার ব্যবস্থা করে দিয়েছেন। এ ছাড়া গাজার কিছু মানুষকে অনলাইনে চাকরির ব্যবস্থাও করে দিচ্ছেন তিনি।
গাজার অসহায় মানুষদের সহায়তা ও সেখানকার পরিস্থিতি নিয়ে কথা হয় রাফসানের সঙ্গে।
গাজার অসহায় মানুষদের সহায়তা ও সেখানকার পরিস্থিতি নিয়ে কথা হয় রাফসানের সঙ্গে। ছবি: ইনডিপেনডেন্ট টেলিভিশন
ফিলিস্তিনিদের অবস্থা সম্পর্কে রাফসান বলেন, ‘গাজা সীমান্তে গিয়ে হত্যাযজ্ঞ দেখে কয়েক রাত ঘুমাতে পারেনি আমার টিম। পরে রাফা সীমান্ত থেকে স্থানীয় তরুণদের নিয়ে ক্যাম্পে খাবার বিতরণ শুরু করি। একজন চিকিৎসক দিয়ে প্রাথমিক চিকিৎসা সেবা ও ওষুধ বিতরণ করা হয়।’
আহমেদ রাফসানের মাধ্যমে ভিডিও কলে কথা হয় গাজায় দ্বায়িত্বরত কয়েকজন সেচ্ছাসেবকের সঙ্গে। এ সময় তাঁরা ফিলিস্তিনিদের পাশে বাংলাদেশকে পেয়ে ইন্ডিপেন্ডেন্ট টিভির মাধ্যমে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন।
শিরিন-সাজমিলা ফাউন্ডেশনে সেচ্ছাসেবক হিসেবে কাজ করছেন আব্দুল্লাহ নামে গাজার এক অধিবাসী। তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশের মানুষকে ধন্যবাদ জানাই, যেভাবে তারা আমাদের সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিয়েছেন আশা করছি সামনেও এটা অব্যাহত থাকবে।’
ফাতেমা আনসারী নামে গাজার আরেক অধিবাসী ও স্বেচ্ছাসেবক বলেন, ‘আমরা শিরিন‑সাজমিলা ফাউন্ডেশনের পক্ষে গাজার অসহায় শিশু আর মানুষদের সঙ্গে আছি। সবাই পাশে থাকবেন, এটা আশা করি।’
শিরিন সাজমিলা ফাউন্ডেশনের নির্বাহী পরিচালক আহমেদ রাফসান বলেন, ‘গাজায় গুলির চেয়ে খাবারের অভাবে বেশি মানুষ মারা যাচ্ছে। গাজায় থাকা আমার ফিলিস্তিনি স্বেচ্ছাসেবকেরা জানিয়েছে, তারা গাজা ও রাফার মানুষের মৃত্যু মেনে নেবে, কিন্তু মাথা নত করবে না।’