21 C
Dhaka
Sunday, December 1, 2024

রহস্যজনকভাবে পাল্টে যাচ্ছে ঋতুচক্র-নারীত্বের ধরন, নেপথ্যে কী

সম্প্রতি গবেষণায় দেখা গেছে, জলবায়ু পরিবর্তনজনিত কারণে সবচেয়ে ঝুঁকিপূর্ণ দেশগুলোতে নারীদের ঋতুচক্র শুরু হয় প্রত্যাশিত বয়সের অনেক আগে কিংবা বেশ দেরি করে। সাংবাদিক আলিজেহ ফাতিমাহ পাকিস্তানের প্রভাবশালী সংবাদমাধ্যম দ্য ডনে বুধবার (৩ জুলাই) প্রকাশিত নিবন্ধে জানিয়েছেন, মাত্র সাড়ে সাত বছর বয়সে তার ছোট বোনের প্রথম ঋতুস্রাব হয়। জৈবিক এই পরিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে যে তীব্র ব্যথা, মানসিক এবং শারীরিক ক্লান্তি আসে তার জন্যে মোটেও প্রস্তুত ছিলো না সে। এক বছর পরে, তার ঋতুচক্র রহস্যজনকভাবে বন্ধ হয়ে যায় এবং ১২ বছর বয়স পর্যন্ত আর কখনও হয়নি।

কিশোরীর বয়ঃসন্ধিকালে প্রথম মাসিক, সাধারণত ১০ থেকে ১৬ বছর বয়সের মধ্যে হয়ে থাকে। গড়ে ১২ বছর চার মাস বয়সে শুরু হয়। এটি প্রায়ই অপ্রত্যাশিতভাবে ঘটে এবং সাধারণত ব্যথাহীন হয়ে থাকে। তবে, ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অফ হেলথ (এনআইএইচ) সাম্প্রতিক গবেষণায় দেখা গেছে, জলবায়ু পরিবর্তনের জন্য সবচেয়ে ঝুঁকিপূর্ণ দেশগুলোতে প্রথম ঋতুস্রাব শুরু হয় বিলম্বিত হয়ে অথবা প্রত্যাশার চেয়ে অনেক আগে।

আরও পড়ুনঃ  ভালোবাসার মানুষকে নিজের করতে আমেরিকা থেকে ফেনীতে এলেন সেন্ডোরা

যেসব দেশগুলোর ওপর এই বৈশ্বিক সংকটের নেতিবাচক প্রভাব সরাসরি পড়েছে সেই তালিকায় শীর্ষে রয়েছে পাকিস্তান। গত ৫০ বছরে, দেশের বার্ষিক গড় তাপমাত্রা প্রায় শূন্য দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস বেড়েছে। আর তাপপ্রবাহের সংখ্যা প্রায় পাঁচগুণ বেড়েছে। ২০২২ সালের মে মাসে, যখন সারা দেশে তাপমাত্রা গত ৬০ বছরের রেকর্ড ভাঙে, তখন ১৬ বছর বয়সী ফারিহা আতিক যার ৯ বছর বয়সে ঋতুস্রাব শুরু হয়েছিলেন সে সম্ভবত তার জীবনের সবচেয়ে খারাপ সময় পার করেছিলো।

দ্য ডনকে ফারিহা আতিক বলেন, ‘আমি আমার পিরিয়ডের জন্য সম্পূর্ণরূপে অপ্রস্তুত ছিলাম। কোনোভাবে আমি এটার সঙ্গে খাপ খাইয়ে নিয়েছি, কিন্তু সময় পার হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে ঋতু পরিবর্তনের কারণে আমার ব্যাথা আরও তীব্রতর হতে থাকে। আমার মনে আছে ২০২২ সালের গ্রীষ্মে, এপ্রিল থেকে আগস্ট পর্যন্ত আমার ঋতুচক্র চলাকালীন সময় ভয়াবহ ব্যাথায় আমার পা পর্যন্ত নড়াচড়া করতে পারিনি।’

আরও পড়ুনঃ  ‘বর্তমানের কোর্টে বিচার চলে নোটে’: র‍্যাপার আলী হাসানকে লিগ্যাল নোটিশ

ফারিহার মা তাকে বিভিন্ন গাইনোকোলজিস্টের কাছে নিয়ে গিয়েছিলেন কিন্তু তারা সবাই বর্ণনা করেছেন যে কিশোরীটি কী অনুভব করছিল তাকে ‘স্বাভাবিক’ বলে, যা তার সহ্য করা ব্যথা থেকে অনেক দূরে ছিল। ঋতুস্রাবের আগে এবং সময়কালে হালকা থেকে মাঝারি ব্যথা সাধারণ, তবে বিভিন্ন কারণের কারণে গুরুতর ক্র্যাম্প হতে পারে।

তার মা একজন গাইনোকোলজিস্টের খোঁজ চালিয়ে যান যিনি তার মেয়ের এমন ব্যথার কারণ ব্যাখ্যা করতে পারবেন। অবশেষে, তিনি করাচির আব্বাসি শহীদ হাসপাতালের একজন প্রসূতি বিশেষজ্ঞ ডা. জুনাইদ আনসারিকে খুঁজে পান। চিকিৎসক তার ব্যাখ্যায় বলেন, ‘ব্যথাটি কর্টিসল নামক হরমোনের উচ্চ মাত্রার নিঃসরণের কারণে হচ্ছে। এই স্ট্রেস হরমোনটি তাপদাহের কারণে অস্বাভাবিক আচরণ করছে। তাপমাত্রার কারণে কর্টিসল বেড়ে যায়, যা ডিসমেনোরিয়া বাড়িয়ে দেয়। যা দুই বছর আগে ওই কিশোরীকে প্রায় অচল করে দিয়েছিল।

বেশিরভাগ নারীদের জন্য,ঋতুস্রাব সাধারণত ‘বেদনাহীন’ হয়ে থাকে। তবে অনেকে তীব্র ব্যাথা অনুভব করেন। এই ব্যাথা ডিসমেনোরিয়ার উপসর্গ। ঋতুচক্রের সময়কার ওই ব্যথা কর্টিসল হরমোন নিঃসরণের কারণে হয়ে থাকে।

আরও পড়ুনঃ  শেখ হাসিনার জন্মদিন উপলক্ষে টিএসসিতে গণ জুতা নিক্ষেপ

কর্টিসল হলো এমন একটি হরমোন যা মানসিক চাপের সময় নিঃসৃত হয়। এটি নারীর শারীরে বিভিন্ন প্রভাব রাখে। এটি রক্তে শর্করার মাত্রা, বিপাক এবং রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ করে এবং ব্যাথানাশক এজেন্ট হিসেবে কাজ করে। এছাড়া, এই হরমোন মাসিক চক্রকে প্রভাবিত করে এবং শরীরকে গর্ভধারণের জন্য প্রস্তুত করে।

ড. আনসারি দ্য ডনকে বলেন, দীর্ঘায়িত বা বিলম্বিত ঋতুস্রাবের প্রাথমিক কারণ হতে পারে কর্টিসলের অস্বাভাবিক নিঃসরণ। এটি যা ঋতু থেকে ঋতুতে পরিবর্তিত হয়। উদাহরণস্বরূপ, শীতকালে, এই হরমোনের নিঃসরণ বেশি হয়, যা ঋতুচক্রকে ব্যাহত করে।’

ওই চিকিৎসক জানিয়েছেন, তীব্র গরমের কারণে গ্রীষ্মকালে হরমোনের নিঃসরণ চরম মাত্রায় পৌঁছায়। খুব সম্প্রতি, ১২ বছর বয়সী একটি মেয়ে অভিভাবকসহ আমার কাছে এসেছিলো। মে ও জুলাই মাসে তীব্র গরমের কারণে তার ঋতুচক্রকালীন ব্যাথা এতোটা তীব্র হয়েছিলো যে ওই মেয়েটি পা পর্যন্ত নাড়াতে পারেনি।

সর্বশেষ সংবাদ
জনপ্রিয় সংবাদ