বগুড়ায় রথযাত্রায় বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে পাঁচজনের মৃত্যু ঘটনা একজনের ভুলের কারণে ঘটেছে বলে জানিয়েছে জেলা প্রশাসন।
রোববার (৭ জুলাই) বিকেলে বগুড়া শহরের সেউজগাড়ি আমতলা মোড় এলাকায় এ ঘটনা ঘটে।
জানা গেছে, বিকেল পাঁচটার পরে বগুড়ার সেউজগাড়ি পালপাড়া এলাকা থেকে রথযাত্রা নিয়ে কয়েক হাজার পুণ্যার্থী বের হন। রথটি আমতলা সেউজগাড়ী মোড়ে স্টেশন রোডে ওঠার পর রথের মাস্তুলের সঙ্গে ১১ হাজার ভোল্টের বিদ্যুৎ সঞ্চালন লাইনের সংযোগ ঘটে যায়। এতে মুহূর্তেই রথের সঙ্গে থাকা অসংখ্য পুণ্যার্থী বিদ্যুতায়িত হয়ে পড়েন। এতে বগুড়া সদরের ছোট বেলঘড়িয়া এলাকার নরেন্দ্র নাথ সরকারের ছেলে অলোক কুমার সরকার (৪০), বগুড়া শহরের পুরান বগুড়া হিন্দুপাড়ার বাসিন্দা নন কিশোর চন্দ্র সরকারের স্ত্রী আতশি রানী (৪৫), আদমদীঘি উপজেলার কুন্দগ্রামের ভবানী মহন্তের ছেলে নরেশ মোহন্ত (৬০), বগুড়া সদরের রঞ্জিতা মহন্ত (৫৫) ও সারিয়াকান্দি উপজেলার সাহাপাড়ার বাসুদেব সাহার স্ত্রী জলি রানী সাহা (৪০) নিহত হন। এ ঘটনায় হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় আছেন আরও ৪২ জন।
জেলা প্রশাসক মো. সাইফুল ইসলাম বলেন, ‘বছরে দুই দফা রথযাত্রা ও উল্টোরথযাত্রা বের হয়। শহরের রাস্তার ওপরে থাকা বৈদ্যুতিক তারের অবস্থান অনুযায়ী ঠিক কত ফুট উচ্চতায় রথ ওঠানো যাবে, তা আয়োজকদের আগে থেকেই সতর্ক করা হয়েছিল। কিন্তু প্রশাসনের সেই সতর্কতা সত্ত্বেও ২৫ ফুট উচ্চতায় রথের চূড়া ওঠানো হয়। রথের চূড়া ওঠানো-নামানোর দায়িত্ব ছিল একজনের হাতে। কিন্তু তার ভুলেই ঘটে গেল মর্মান্তিক এই দুর্ঘটনা।’
তিনি বলেন, ‘এটি আয়োজকদের ভুলে নিছক দুর্ঘটনা। তবুও দুর্ঘটনার কারণ অনুসন্ধান এবং বিদ্যুৎ বিভাগ ও পুলিশের কোনো গাফিলতি ছিল কি না, তা খতিয়ে দেখতে তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। পাঁচ সদস্যবিশিষ্ট কমিটির প্রধান অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট (এডিএম) পি এম ইমরুল কায়েস। কমিটিকে সাত কার্যদিবসের মধ্যে তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করতে সময় বেঁধে দেওয়া হয়েছে। নিহত ব্যক্তিদের লাশ সৎকারের জন্য প্রত্যেকের পরিবারকে জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে ২৫ হাজার টাকা এবং আহত ব্যক্তিদের চিকিৎসাসহায়তা দেওয়া হচ্ছে।’
রথযাত্রায় অংশ নেওয়া বগুড়া শহর পূজা উদ্যাপন পরিষদের সভাপতি পরিমল প্রসাদ বলেন, ‘প্রায় ১৫ হাজার সনাতন ধর্মাবলম্বী মানুষের অংশগ্রহণে রথযাত্রা পুলিশ লাইনসসংলগ্ন মন্দিরের উদ্দেশে রওনা করে। ১০ মিনিটের মাথায় রথযাত্রা শহরের সেউজগাড়ি আমতলা মোড়ে পৌঁছালে রথের চূড়ার সঙ্গে রাস্তার ওপরে থাকা বৈদ্যুতিক তারের স্পর্শ লাগে। সঙ্গে সঙ্গে তার ও রথের চূড়ায় আগুন ধরে যায়। বিদ্যুতায়িত হন রথ ধরে থাকা অর্ধশতাধিক রথযাত্রী। প্রাণ বাঁচাতে হুড়োহুড়ি, ছোটাছুটিতে পদদলিত হয়ে আহত হয়েছেন অনেকেই।’
রথযাত্রা উৎসব আয়োজক কমিটির দায়িত্বপ্রাপ্ত ব্যক্তি (অধ্যক্ষ) খরাজিতা কৃষ্ণদাস ব্রহ্মচারী বলেন, ‘বহুকাল থেকে বগুড়া শহরে রথযাত্রা ও উল্টোরথযাত্রা উৎসব হয়ে আসছে। অতীতে কখনো এ রকম মর্মান্তিক দুর্ঘটনা ঘটেনি। রথযাত্রার সবকিছু দেখভাল করতে কমিটির পক্ষ থেকে ১০০ জন সেবক নিয়োগ ছিল। সড়কের ওপর বৈদ্যুতিক তারে যাতে রথের স্পর্শ না লাগে, এ জন্য রথের চূড়া ওঠানো-নামানোর জন্য দুজনকে দায়িত্ব দেওয়া ছিল। আমতলা মোড়ে ভুলক্রমে রথের চূড়া নিচে নামানোর আগেই বৈদ্যুতিক তারের স্পর্শ লেগে আগুন ধরে যায়। রথে হাত রাখা সবাই বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হন। চূড়া ওঠানো-নামানোর দায়িত্বে থাকা অলোক কুমার ঘটনাস্থলেই মারা গেছেন। সুশান্ত দাসের অবস্থা আশঙ্কাজনক।’
শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের উপপরিচালক আবদুল ওয়াদুদ বলেন, ‘এখানে ভর্তি হওয়া ৩৮ জনের মধ্যে আশঙ্কাজনক দুজনকে আইসিইউতে নেওয়া হয়েছে। অন্যরা এখনো ঝুঁকিমুক্ত নন।’
অন্যদিকে মোহাম্মদ আলী হাসপাতালের আবাসিক চিকিৎসা কর্মকর্তা শফিক আমিন কাজল বলেন, এ হাসপাতালে বিদ্যুতায়িত পাঁচজন ভর্তি হন। তাদের মধ্যে জলি রানী সাহাকে মৃত ঘোষণা করা হয়েছে।