সৈয়দ আবেদ আলী জীবন পিএসসির চেয়ারম্যানের সাবেক গাড়িচালক। অথচ রাতারাতি এই গাড়িচালক আলাদিনের আশ্চর্য চেরাগ পেয়ে বদলে ফেললেন নিজের জীবন। কুয়াকাটায় থ্রি স্টার হোটেল, ঢাকায় বহুতল বাড়ি। খায়েশ পূরণ করতে হতে চান জনপ্রতিনিধি। তাই করছেন উপজেলা চেয়ারম্যান।
এই চেরাগের আলো ছেলে সৈয়দ সোহানুর রহমান সিয়ামকেও আলোকিত করেছে। গত কোরবানি ঈদে তিনি ১ কেজি করে মাংস ১০০ জনকে দিয়েছেন। অর্থাৎ ১০০ কেজি মাংস বন্টন করেছেন। শুধুই তাই নয়, সেই মাংস বন্টন করেছেন দামি গাড়িতে চড়ে। সিয়াম শুধু একটি গাড়ি নয়, একাধিক দামি গাড়ি ব্যবহার করেন। সবই দামি, ঝকঝকে। পড়েছেনও ভারতে। তারপর দেশের একটি ব্যয়বহুল বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়েও। করেন ছাত্রলীগ। নিজ উপজেলা মাদারীপুরের ডাসায় ছাত্রলীগের পদ রয়েছে তার। এসব তথ্য বাবা-ছেলের ফেসবুক থেকেই পাওয়া।
এতোকিছু সম্ভব হয়েছে শুধুই একটি চেরাগের কল্যাণে। সেই চেরাগটি হলো প্রশ্ন যেটি ফাঁস করে তার বাবা গাড়ি চালক আবেদ আলি কামিয়েছেন অঢেল টাকা- এমনই অভিযোগ পাওয়া গেছে।
সম্প্রতি দেশের বেসরকারি টেলিভিশ চ্যানেল টোয়েন্টিফোরের অনুসন্ধানে বেরিয়ে আসে বিসিএসসহ ৩০টি নিয়োগ পরীক্ষায় প্রশ্ন ফাঁসের তথ্য। বাংলাদেশ সরকারি কর্মকমিশনের (বিপিএসসি) ছয় কর্মকর্তা-কর্মচারীর একটি সিন্ডিকেট দীর্ঘদিন ধরে প্রশ্ন ফাঁসের সঙ্গে জড়িত বলে প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়।
অভিযুক্ত কর্মচারীদের একজন পিএসসির চেয়ারম্যানের সাবেক গাড়িচালক সৈয়দ আবেদ আলী জীবন। মাদারীপুরের ডাসার উপজেলার বাসিন্দা আবেদ আলী একজন ড্রাইভার হলেও তাঁর কোটি কোটি টাকার সম্পদের তথ্য সামনে আসছে। প্রশ্ন ফাঁসের সঙ্গে জড়িত থাকার তথ্য সামনে আসার পরই সোশ্যাল মিডিয়ায় তাঁর বিপুল সম্পদের তথ্য তুলে ধরছেন নেটিজেনরা। ছেলে ছাত্রলীগ নেতা, পড়েছেন বিদেশে, এরপর দেশের একটি ব্যয়বহুল বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে। ঢাকার ভেতর তাঁর দুইটি বহুতল ভবন, মাদারীপুরে আলিশান রয়েছে এমন তথ্যও সামনে আসছে।
তবে সৈয়দ আবেদ আলীর ফেসবুক পেজে নিজের একটি হোটেলের তথ্য তুলে ধরেছেন তিনি নিজেই। ১৮ মে এক পোস্টে তিনি লেখেন, ‘আমাদের নতুন হোটেল এর ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করলাম আজ। হোটেল সান মেরিনা, কুয়াকাটা।’
পিএসসির চেয়ারম্যানের সাবেক গাড়িচালক সৈয়দ আবেদ আলী জীবনসহ একাধিক কর্মচারী ও কর্মকর্তা। অনুসন্ধানী সাংবাদিক ইমরান এ বিষয়ে নিজের ফেসবুকে লিখেছেন, দীর্ঘ অনুসন্ধানে বিপিএসসিকেন্দ্রীক এই চক্রটিকে চিহ্নিত করেছি আমরা, যারা এক যুগেরও বেশি সময় ধরে বিসিএসের প্রিলি, রিটেন, ভাইভাসহ গুরুত্বপূর্ণ প্রায় সকল সরকারি নিয়োগ পরীক্ষায় প্রশ্নপত্র ফাঁস করেছে। সর্বশেষ ৪৬তম বিসিএসও বাদ যায়নি এদের খপ্পড় থেকে। একটি দুটি তো নয়, ৩৩তম বিসিএস থেকে প্রায় ৩০টি ক্যাডার-ননক্যাডাার পরীক্ষায় প্রশ্নফাঁসের প্রমাণ পেয়েছি আমরা।