21 C
Dhaka
Thursday, November 21, 2024

দান করেছেন লাখ লাখ টাকা, ভাইদের জন্য কিছুই করেননি আবেদ আলী

সরকারি কর্ম কমিশনে (পিএসসি) চাকরি পাওয়ার এক বছরের মধ্যে বিয়ে করেছিলেন সৈয়দ আবেদ আলী। এরপর তিনি তার পরিবারের সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্ন করেন। বর্তমানে আবেদ আলীর কোটি টাকা মূল্যের বাড়ি, গাড়িসহ বহুজাতিক কোম্পানি থাকলেও তার আপন দুই ভাই থাকেন টিনের ভাঙা ঘরে।

মঙ্গলবার (৯ জুলাই) মাদারীপুরের ডাসার উপজেলার বালিগ্রাম ইউনিয়নের পশ্চিম বোতলা গ্রামে গিয়ে এমন চিত্র দেখা যায়।

আবেদ আলীর পরিবার ও স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, পশ্চিম বোতলা গ্রামের সৈয়দ আব্দুর রহমান ও জয়গুন নেছা দম্পতির ঘরে তিন ছেলে ও এক মেয়ের জন্ম নেয়। প্রায় ৩০ বছর আগে আব্দুর রহমানের পরিবারে ছিল অমানবিক অভাবের কষাঘাত। অভাবের মধ্যেই আবেদ আলী দ্বিতীয় শ্রেণির শিক্ষার্থী থাকা অবস্থায় মারা যান আব্দুর রহমান। এরপর জীবিকার তাগিদে আবেদ আলী ঢাকায় চলে যান। সেখানে সিরাজগঞ্জের শাহজাদপুর এলাকার শাহিন নামে একজনের মাধ্যমে পিএসসিতে গাড়িচালক হিসেবে চাকরি হওয়ার পরে আবেদ আলী যেন আলাদিনের চেরাগ পেয়ে যান। চাকরি পাওয়ার এক বছরের মধ্যে তিনি মাদারীপুরের খাখদি এলাকার হাবিবুর রহমান খানের মেয়ে শিল্পী বেগমকে বিয়ে করেন। বিয়ে করার পরে আবেদ আলী তার দুই ভাই সৈয়দ জাবেদ আলী, সৈয়দ সাবেদ আলী ও বোন মোহরজানের সঙ্গে পারিবারিক বিষয় নিয়ে বনিবনা না হওয়ায় সম্পর্ক ছিন্ন করেন।

আরও পড়ুনঃ  কোকা-কোলার বিজ্ঞাপন বিতর্কে ২ অভিনেতাকে লিগ্যাল নোটিশ

এরপর আবেদ আলী ২০০৪ সাল পর্যন্ত পিএসসির চেয়রাম্যানের গাড়িচালক হিসেবে চাকরি করে কোটি টাকা দুর্নীতি করে চাকরি ছেড়ে দেন। পরে তিনি বিভিন্ন ব্যবসা-বাণিজ্য করে কোটি টাকার সম্পত্তির মালিক হয়ে রাজধানী ঢাকা, কুয়াকাটাসহ গ্রামের বাড়িতে বড় বড় অট্টালিকা নির্মাণ করে বিলাসবহুল জীবন যাপন করেন। আবেদ আলী এমন বিলাসবহুল জীবন যাপন করলেও তার আপন দুই ভাই এখনো থাকেন টিনের ভাঙা ঘরে। গ্রামে কৃষি কাজ ও অটোরিকশা চালিয়ে তাদের করতে হয় জীবিকা নির্বাহ। আবেদ আলী চেয়ারম্যান হওয়ার জন্য ডাসার উপজেলায় লাখ লাখ টাকা দান করলেও তার ভাইদের জীবন সুন্দর করার জন্য নেননি কোনো উদ্যোগ। এমনকি ঢাক-ঢোল পিটিয়ে উপজেলাজুড়ে বড় বড় সমাবেশ করলেও সেসব সমাবেশে যাননি তার ভাইয়েরা।

আরও পড়ুনঃ  স্বেচ্ছাসেবক দলের কর্মীকে পেটালেন অটোচালকরা

এছাড়াও আবেদ আলীর বড় ছেলে সৈয়দ সোহানুর রহমান সিয়াম ও শাফিন ভারতের স্কুল-কলেজে পড়াশোনা করে। মেয়ে আমরিন ইংরেজি মাধ্যমের ও লেবেলের শিক্ষার্থী। কিন্তু তার ভাই সাবেদ আলীর এক ছেলে আব্দুল্লাহ আনসারি এতিমখানায় থেকে মাদরাসায় পড়াশোনা করে। আরেক ছেলে রাজন নানা বাড়ির সম্পদ বিক্রি করে লিবিয়া হয়ে অবৈধ পথে ইতালি গিয়েছে দুই বছর আগে।

কোটি টাকার মালিক বনে গিয়ে আবেদ আলী এলাকায় কোটি টাকা দান করলেও আপন ভাইদের পরিবারের কারও খবর না নেওয়ায় আশ্চর্য অনেকেই।

আবেদ আলীর ভাই সৈয়দ সাবেদ আলী ঢাকা পোস্টকে বলেন, সকালে বাজার থেকে শাপলা কিনে এনেছি। এই শাপলার তরকারি দিয়ে আজ ভাত খাব। আমি অটোরিকশা চালানোর পাশাপাশি কৃষি কাজ করে জীবিকা নির্বাহ করি। বাবা আমাদের ছোট বয়সে গরিব রেখে মারা গেছেন। বড় ভাই পিএসসিতে চাকরি নিয়ে টাকা আয় করে বড়লোক হলেও আমাদের সঙ্গে কোনো সম্পর্ক রাখেননি। এমনকি আমার বিয়েতেও তিনি আসেননি। আমি আমার ছেলেমেয়েকে নিয়ে একটু সুখের আশায় কঠোর পরিশ্রম যাচ্ছি। একদিন আমার দিন ঘুরবে আশা করছি।

আরও পড়ুনঃ  আমেরিকা কনভিন্স হয়েছিল, নয়তো তখনই আওয়ামী লীগের পতন হয়ে যেত: সালমান

তিনি বলেন, আমার ভাই যদি অবৈধ পথে টাকা আয় করে থাকেন তাহলে আমি তার বিচার চাই। আর যদি অন্যায় না করে থাকেন তাহলে সম্মানসহ তার মুক্তির দাবি জানাই।

বিষয়টি নিয়ে বালিগ্রাম ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মজিবুর রহমান খান ঢাকা পোস্টকে বলেন, আবেদ আলীর সঙ্গে তার অন্যান্য ভাইদের পারিবারিক সম্পর্ক নেই বলে আমি জানি। মূলত টাকা হওয়ার পরেই তিনি তার নিকট আত্মীয়সহ আসল পরিচয় ভুলে গিয়েছিলেন।

প্রসঙ্গত, সরকারি নিয়োগ পরীক্ষার প্রশ্নপত্র ফাঁসে জড়িত থাকার অভিযোগে গতকাল সোমবার (৮ জুলাই) পিএসসির দুজন উপপরিচালক, একজন সহকারী পরিচালকসহ ১৭ জনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি)। গ্রেপ্তারকৃতদের মধ্যে পিএসসির সাবেক গাড়িচালক সৈয়দ আবেদ আলী এবং তার ছেলে সৈয়দ সোহানুর রহমান সিয়ামও রয়েছেন।

সর্বশেষ সংবাদ
জনপ্রিয় সংবাদ