সূর্যের চেয়ে প্রায় ৮ হাজার ২০০ গুণ বড় কৃষ্ণগহ্বরের (ব্ল্যাক হোল) সন্ধান পেয়েছেন জ্যোতির্বিজ্ঞানীরা। পৃথিবী থেকে ১৮ হাজার আলোকবর্ষ দূরের এ কৃষ্ণগহ্বরটি পার্শ্ববর্তী স্টার ক্লাস্টারে অবস্থিত। তবে এ কৃষ্ণগহ্বর সম্পর্কে রহস্যময়তার অনেক প্রশ্ন এখনো অমীমাংসিত রয়েছে। আকারে এটি বিশাল বলে মনে হলেও তা অন্যগুলোর তুলনায় মাঝারি আকারের।
১৮ হাজার আলোকবর্ষ দূরের ওমেগা সেন্টোরি ক্লাস্টারের কেন্দ্রস্থলে অবস্থিত এই অতিঘন বস্তুটি এখন পর্যন্ত আবিষ্কৃত একটি বিশাল কৃষ্ণগহ্বরের সবচেয়ে কাছের উদাহরণ। ম্যাক্স প্ল্যাঙ্ক ইনস্টিটিউট ফর অ্যাস্ট্রোনমি ও যুক্তরাষ্ট্রের উটাহ বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষকরা বলছেন, যদিও এটি বিশাল আকারের মনে হচ্ছে। তবে বাস্তবে এটি একটি মাঝারি ধরনের কৃষ্ণগহ্বর। এ ধরনের প্রথম আবিষ্কার কৃষ্ণগহ্বরের রহস্যময় বিবর্তনে ‘মিসিং লিঙ্ক’ থাকতে পারে।
বিজ্ঞানীদের তথ্যমতে, যখন বড় নক্ষত্র জ্বালানি শেষ করে নিজেদের কেন্দ্রে ভেঙে পড়ে তখন কৃষ্ণগহ্বরের বিকাশ হয়। নক্ষত্র সেই সময় তাদের অবশিষ্ট ভর নিয়ে একটি বস্তুতে সংকুচিত হয়ে ঘন আকার লাভ করে, যেখানে অন্য আলোসহ শক্তি তার মহাকর্ষীয় টান এড়াতে পারে না। নাক্ষত্রিক কৃষ্ণগহ্বর থেকে শুরু করে সত্যিকারের বিশাল দানবের মতো সুপারম্যাসিভ ব্ল্যাক হোল দেখা যায়। এসব কৃষ্ণগহ্বরের ভর অনেক বেশি থাকে। মধ্যম কৃষ্ণগহ্বর পর্যবেক্ষণ করা অত্যন্ত কঠিন। ছায়াপথের কেন্দ্রে শুধু এসব ব্ল্যাক হোল থাকে। এ মধ্যবর্তী ভরের ব্ল্যাক হোল ভিন্ন ধরনের হওয়ায় তাদের শনাক্ত করা কঠিন। এ বিষয়ে বিজ্ঞানী ম্যাথিউ হুইটেকার বলেন, ‘আমাদের সূর্যের চেয়ে একটু ভারী ব্ল্যাক হোল রয়েছে, যা কিছুটা পিঁপড়া বা মাকড়সার মতো দেখায়। এসব চিহ্নিত করা কঠিন। মহাবিশ্বের সর্বত্র এ ধরনের কৃষ্ণগহ্বরের খোঁজ মেলে।’
জ্যোতির্বিজ্ঞানীরা মনে করেন, ওমেগা সেন্টোরি ক্লাস্টারের একসময় নিজস্ব একটি গ্যালাক্সি ছিল, যা কোটি কোটি বছর আগে মিল্কিওয়ে গ্রাস করে নেয়। বর্তমানে জ্যোতির্বিজ্ঞানীরা হাবল স্পেস টেলিস্কোপের তোলা ছবি পরীক্ষা করে কৃষ্ণগহ্বরটির বিভিন্ন তথ্য জানার চেষ্টা করছেন। হাবল স্পেস টেলিস্কোপ থেকে পর্যবেক্ষণের তথ্য ব্যবহার করে সাতটি উচ্চগতির নক্ষত্র শনাক্ত করা গেছে।
ম্যাক্স প্ল্যাঙ্ক ইনস্টিটিউট অব অ্যাস্ট্রোনমির জ্যোতির্বিজ্ঞানী ম্যাক্সিমিলিয়ান হ্যাবারলে জানিয়েছেন, উচ্চগতির নক্ষত্রের সন্ধান ও তাদের গতিবিধি পর্যালোচনা করা খড়ের গাদায় সুঁই খোঁজার মতোই। একই অঞ্চলে দ্রুত গতিতে ছুটতে থাকা সাতটি তারার উপস্থিতি জোরালোভাবে প্রমাণ করে যে কৃষ্ণগহ্বরের মাধ্যাকর্ষণ বলয়ের মধ্যে আছে তারাগুলো।
গবেষকরা এখন আরও বিস্তারিতভাবে ওমেগা সেন্টোরির কেন্দ্রস্থল অধ্যয়ন করার পরিকল্পনা করছেন এবং এরই মধ্যে নাসার জেমস ওয়েব স্পেস টেলিস্কোপ ব্যবহার করার অনুমতি পেয়েছেন। এর মানে এই যে, এ ব্ল্যাক হোলের সম্পূর্ণ অধ্যয়ন করা ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য একটি কাজ হতে পারে। সূত্র: ডেইলি মেইল