21 C
Dhaka
Thursday, November 21, 2024

যে সব শাস্তির মুখোমুখি ‘নিষিদ্ধ’ জামায়াত-শিবির

কোটা সংস্কার আন্দোলনকে ঘিরে তাণ্ডবে সম্পৃক্ততার অভিযোগে জামায়াতে ইসলামী ও এর ছাত্র সংগঠন ইসলামী ছাত্র শিবিরসহ অন্যান্য সব অঙ্গ সংগঠনকে ‘সন্ত্রাসী সত্তা’ হিসেবে তালিকাভুক্ত করে নিষিদ্ধ করেছে সরকার। বৃহস্পতিবার স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ২০০৯ সালের সন্ত্রাস বিরোধী আইনে নির্বাহী আদেশে এই সংগঠন দুটিকে নিষিদ্ধ করেছে। ফলে এই দুই সংগঠন ও এর সব অঙ্গ সংগঠন ‘সন্ত্রাসী সংগঠন’ হিসেবে গণ্য হবে।

এই আইনের ১৮ ধারায় বলা আছে, কোনো ব্যক্তি বা সত্তা সন্ত্রাসী কাজের সাথে জড়িত রয়েছে বলে সরকারের কাছে যুক্তিসঙ্গত কারণ থাকলে সরকার গেজেট প্রজ্ঞাপন দ্বারা, ব্যক্তি বা সত্তাকে তফসিলে তালিকাভুক্ত করতে পারবে বা সত্তাকে নিষিদ্ধ ঘোষণা ও তফসিলে তালিকাভুক্ত করতে পারবে।

একাত্তরে বাংলাদেশের স্বাধীনতার বিরোধিতা করা জামায়াত আগেই রাজনৈতিক দলের নিবন্ধন হারিয়েছে। গঠনতন্ত্র সংবিধানের সঙ্গে সাংঘর্ষিক হওয়ায় ২০১৩ সালের ১ আগস্ট হাইকোর্ট জামায়াতের নিবন্ধন ‘অবৈধ ও বাতিল’ ঘোষণা করে রায় দেয়। গত বছর আপিল বিভাগ হাইকোর্টের ওই রায় বহাল থাকে। যার ফলে বিএনপির এক সময়ের শরিক জামায়াত নির্বাচন করার যোগ্যতা হারায়।

১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তানি বাহিনীকে সহায়তা করতে রাজাকার, আলবদর, আলশামস্ নামে বিভিন্ন দল গঠন করে জামায়াত ও এর তখনকার ছাত্র সংগঠন ইসলামী ছাত্র সংঘ, যার পরে নাম হয় ইসলামী ছাত্র শিবির। সারা দেশে সেময় হত্যা, ধর্ষণ, লুটপাটের মতো যুদ্ধাপরাধ ঘটায় জামায়াত। যুদ্ধাপরাধ মামলার বিভিন্ন রায়েও বিষয়গুলো উঠে আসে। একটি মামলার রায়ে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল জামায়াতকে ‘ক্রিমিনাল দল’ আখ্যা দেন।

দেশ স্বাধীন হওয়ার পর ‘ধর্মের অপব্যবহারের’ কারণে নিষিদ্ধ হয় জামায়াত। জাতির বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হত্যাকাণ্ডের পর বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা সামরিক শাসক জিয়াউর রহমানের আমলে দলটিকে রাজনীতি করার অধিকার দেওয়া হয়। উল্লেখ্য, পাকিস্তানের সাবেক স্বৈরশাসক আইয়ুব খানের আমলেও জামায়াতে ইসলামি নিষিদ্ধ করা হয়েছিলো।

আরও পড়ুনঃ  ‘দক্ষতা বাড়াতে বিদেশ যেতে আবদার’ ১১০৬ কর্মকর্তার, ব্যয় ১২০ কোটি টাকা

এবার, সাম্প্রতিক ছাত্র আন্দোলনে ব্যাপক তাণ্ডব ও নাশকতায় জড়িত থাকার অভিযোগে জামায়াত নিষিদ্ধ হলো। কোটা সংস্কার আন্দোলনকে ঘিরে সহিংসতায় বিভিন্ন এলাকায় রাষ্ট্রীয় স্থাপনায় হামলা করা হয়।

রাজধানীর রামপুরায় বিটিভি ভবন, বনানীতে সেতু ভবন, মহাখালীতে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ভবন ও স্বাস্থ্য অধিদপ্তরে ভাঙচুর করে আগুন ধরিয়ে দেওয়া হয়।

আগুন দেওয়া হয় এক্সপ্রেসওয়ের টোল প্লাজা এবং মেট্রোরেলের দুইটি স্টেশনে। সংঘাতে ১৫০ মানুষের মৃত্যুর হিসাব দিয়েছে সরকার। সংবাদমাধ্যমের খবরে দুই শতাধিক মানুষের মৃত্যুর খবর এসেছে। সরকারের ভাষ্য, শিক্ষার্থীদের ঘাড়ে চেপে নাশকতা করেছে জামায়াত ও শিবির। মদদ দিয়েছে বিএনপি।

সন্ত্রাসি কে?

সন্ত্রাসবিরোধী আইনে ‘সন্ত্রাসি কাজের’ সংজ্ঞায় বলা হয়েছে, যদি কোনো ব্যক্তি, সত্তা বা বিদেশি নাগরিক বাংলাদেশের অখণ্ডতা, সংহতি, জননিরাপত্তা বা সার্বভৌমত্ব বিপন্ন করার জন্য জনসাধারণ বা জনসাধারণের কোনো অংশের মধ্যে আতঙ্ক সৃষ্টির মাধ্যমে সরকার বা কোন সত্তা বা কোনো ব্যক্তিকে কোনো কাজ করতে বা করা থেকে বিরত রাখতে বাধ্য করার জন্য অন্য কোনো ব্যক্তিকে হত্যা, গুরুতর আঘাত, আটক বা অপহরণ করে বা করার চেষ্টা করে, এ ধরনের কাজের জন্য অন্য কারো সঙ্গে ষড়যন্ত্র বা সহায়তা বা প্ররোচিত করে; অথবা অন্য কোনো ব্যক্তি, সত্তা বা প্রজাতন্ত্রের কোনো সম্পত্তির ক্ষতি করে বা করার চেষ্টা করে; অথবা ক্ষতি করার উদ্দেশ্যে ষড়যন্ত্র বা সহায়তা বা প্ররোচিত করে; অথবা এ ধরনের উদ্দেশ্য নিয়ে কোনো বিস্ফোরক দ্রব্য, দাহ্য পদার্থ ও আগ্নেয়াস্ত্র ব্যবহার করে বা নিজ দখলে রাখে, কোনো সশস্ত্র সংঘাতময় দ্বন্দ্বের বৈরী পরিস্থিতিতে অংশ নেয়, তাহলে তা ‘সন্ত্রাসী কাজ’ হিসেবে গণ্য হবে।

আরও পড়ুনঃ  ইমামের মেয়ের প্রেমের টানে চীনা যুবক নাটোরে

শাস্তি কী?

সন্ত্রাস দমন আইনে কোনো অপরাধ করলে সর্বোচ্চ মৃত্যুদণ্ড এবং অন্যূন চার বছরের সশ্রম কারাদণ্ড এবং অর্থদণ্ডের বিধান রয়েছে। আইনের ছয় ধারায় শাস্তির বিষয়ে বলা হয়েছে- যদি কোনো ব্যক্তি, সত্তা বা বিদেশি নাগরিক অন্য কোনো ব্যক্তিকে হত্যা, গুরুতর আঘাত, আটক বা অপহরণ করে বা করার চেষ্টা করে, তাহলে তিনি মৃত্যুদণ্ড বা যাবজ্জীবন কারাদণ্ডে দণ্ডিত হবেন বা এর অতিরিক্ত অর্থদণ্ড আরোপ করা যাবে।
এ ধরনের কাজের জন্য অন্য কোন ব্যক্তিকে ষড়যন্ত্র বা সহায়তা বা প্ররোচিত করে, তাহলে এই অপরাধের নির্ধারিত শাস্তি যদি মৃত্যুদণ্ড হয়, সেক্ষেত্রে তিনি যাবজ্জীবন কারাদণ্ড বা অনূর্ধ্ব ১৪ বছর ও অন্যূন চার বছরের সশ্রম কারাদণ্ড এবং অর্থদণ্ডে দণ্ডিত হবেন।

যদি কোনো ব্যক্তি, সত্তা বা বিদেশি নাগরিক অন্য কোনো ব্যক্তি, সত্তা বা প্রজাতন্ত্রের কোনো সম্পত্তির ক্ষতি করে বা করার চেষ্টা করে, তাহলে তিনি যাবজ্জীবন কারাদণ্ড বা অনূর্ধ্ব ১৪ বছর ও অন্যূন চার বছরের সশ্রম কারাদণ্ড এবং অর্থদণ্ডে দণ্ডিত হবেন।

যদি কোনো ব্যক্তি বা সত্তা প্রজতিন্ত্রের কোনো সম্পত্তির ক্ষতি করার উদ্দেশ্যে ষড়যন্ত্র বা সহায়তা বা প্ররোচিত করে, তাহলে তিনি অনূর্ধ্ব ১৪ বছর ও অন্যূন চার বছরের সশ্রম কারাদণ্ড এবং অর্থদণ্ডে দণ্ডিত হবেন।

কোনো ব্যক্তি বা সত্তা এ ধরনের উদ্দেশ্য নিয়ে কোনো বিস্ফোরক দ্রব্য, দাহ্য পদার্থ ও আগ্নেয়াস্ত্র ব্যবহার করে বা নিজের দখলে রাখে, তাহলে তিনি যাবজ্জীবন কারাদণ্ড বা অনূর্ধ্ব ১৪ বছর ও অন্যূন চার বছরের সশ্রম কারাদণ্ড এবং অর্থদণ্ডে দণ্ডিত হবেন।

যদি কোনো সত্তা সন্ত্রাসী কার্য সংঘটন করে, তাহলে তার বিরুদ্ধে ১৮ নম্বর ধারা অনুযায়ী পদক্ষেপ গ্রহণ করা যাবে এবং এর অতিরিক্ত অপরাধের সাথে সংশ্লিষ্ট সম্পত্তির মূল্যের তিনগুণ পরিমাণ অর্থ বা ৫০ লাখ টাকা বা এর বেশি অর্থদণ্ড আরোপ করা যাবে।

আরও পড়ুনঃ  কোনো দল বা গোষ্ঠীর ক্ষমতার ইচ্ছা পূরণের জন্য যুদ্ধ করিনি : আসিফ

ওই সত্তার প্রধান, তিনি চেয়ারম্যান, ব্যবস্থাপনা পরিচালক, প্রধান নির্বাহী বা অন্য যে কোন নামে অভিহিত কেউ অনূর্ধ্ব ২০ বছর ও অন্যূন চার বছরের সশ্রম কারাদণ্ডে দণ্ডিত হবেন এবং এর অতিরিক্ত অপরাধের সাথে সম্পৃক্ত সম্পত্তির মূল্যের দ্বিগুণ পরিমাণ অর্থ বা ২০ লাখ টাকা বা এর বেশি অর্থদণ্ড আরোপ করা যাবে, যদি না তিনি প্রমাণ করতে পারেন যে, এই অপরাধ তার অজ্ঞাতসারে হয়েছিল বা এটি সংঘটন নিবৃত্ত করার জন্য তিনি সর্বাত্মক প্রচেষ্টা চালিয়েছিলেন।

কেউ যদি নিষিদ্ধ সত্তার সদস্য হন বা সদস্য বলে দারি করেন, তাহলে অনধিক ছয় মাস পর্যন্ত যে কোনো মেয়াদের কারাদণ্ড, অথবা অর্থদণ্ড, অথবা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত হবেন।

যদি কোন ব্যক্তি কোনো নিষিদ্ধ সত্তাক সমর্থন করার উদ্দেশ্যে কাউকে অনুরোধ বা আহ্বান করেন, অথবা সমর্থন বা কাজকে গতিশীল ও উৎসাহিত করতে কোনো সভা আয়োজন, পরিচালনা বা পরিচালনায় সহায়তা করেন, অথবা বক্তৃতা দেন তাহলে সেটা অপরাধ হবে।

কেউ কোনো নিষিদ্ধ সত্তার জন্য সমর্থন চেয়ে অথবা কর্মকাণ্ড সক্রিয় করতে কোনো সভায় বক্তৃতা করেন অথবা রেডিও, টেলিভিশন অথবা কোন মুদ্রণ বা ইলেকট্রনিক মাধ্যমে তথ্য সম্প্রচার করেন, তাহলে তা অপরাধ বলে বিবেচিত হবে।

এই দুই অপরাধের জন্য অনধিক সাত বৎসর ও অন্যূন দুই বৎসর পর্যন্ত যে কোনো মেয়াদের কারাদণ্ডে এবং অতিরিক্ত অর্থদণ্ডের বিধা রয়েছে আইনে।

সর্বশেষ সংবাদ
জনপ্রিয় সংবাদ