26 C
Dhaka
Thursday, November 21, 2024

বাংলাদেশে আন্দোলনের সমর্থনে রেমিট্যান্স বর্জন নিয়ে কী বলছে আন্তর্জাতিক গণমাধ্যম

সম্প্রতি জাপানের গণমাধ্যম নিক্কেই এশিয়া বাংলাদেশে কোটা আন্দোলনের সমর্থনে রেমিট্যান্স বর্জন নিয়ে একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করে। যেখানে বলা হয়েছে, বাংলাদেশে কয়েক সপ্তাহ ধরে চলমান ভয়াবহ প্রতিবাদ বিক্ষোভকে সমর্থন দিতে বিদেশি রেমিট্যান্সকে নতুন এক অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করছেন সমালোচকরা। তারা এই সহিংসতাকে রাষ্ট্র আরোপিত বলে অভিহিত করছেন।

এ উদ্যোগের আয়োজকরা বিদেশে অবস্থানরত প্রায় এক কোটি (১০ মিলিয়ন) বাংলাদেশির প্রতি আহ্বান জানাচ্ছেন দেশে রেমিট্যান্স না পাঠাতে। এসব প্রবাসীরা প্রতি মাসে প্রায় ২০০ কোটি ডলার রেমিট্যান্স পাঠান। বর্তমান সরকার অর্থনৈতিক সঙ্কটে পড়ে গত বছর আইএমএফের কাছে ঋণ চাইতে বাধ্য হয়, এমন অবস্থার মধ্যে প্রবাসীরা এই উদ্যোগ নিয়েছেন।

দক্ষিণ এশিয়ার দেশ বাংলাদেশের দ্বিতীয় বৃহৎ বৈদেশিক মুদ্রার উৎস হলো রেমিট্যান্স। এ উদ্যোগের আয়োজকদের একজন ইউরোপে একটি টেলিকম কোম্পানিতে ইঞ্জিনিয়ার হিসেবে কর্মরত ফয়েজ আহমেদ তৈয়ব।

আরও পড়ুনঃ  দেশ ছেড়েছেন সব উপদেষ্টা, সোর্স: চালাই দেন

তিনি বলেন, রেমিট্যান্স কমিয়ে দিয়ে স্বৈরাচার সরকারের অর্থনৈতিক লাইফলাইন কেটে দিতে পারি আমরা। নতুন এই উদ্যোগে সমর্থন করছেন বেশ কিছু সুপরিচিত বাংলাদেশি প্রবাসী।

এদিকে গত বুধবার ইউরোপিয়ান ইউনিয়ন বলেছে, অস্থিরতায় ঢাকা যেভাবে পদক্ষেপ নিয়েছে তার কড়া সমালোচনা করে তারা। এরপরই বাণিজ্য ও অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিষয়ক বাংলাদেশের সঙ্গে নতুন সহযোগিতামুলক চুক্তির আলোচনা স্থগিত করে তারা। দুই বছর আগে বাংলাদেশের রিজার্ভ প্রায় ৪৯০০ কোটি থেকে কমে দাঁড়ায় ১৮০০ কোটি ডলারে।

গত বছরে প্রবাসীদের পাঠানো রেমিট্যান্সের পরিমাণ ছিল প্রায় ২৪০০ কোটি ডলার। তারা যে অর্থ পাঠান তাতে সরকারি ট্যাক্স থেকে এই আয় আসে।

এই বর্জন আন্দোলনের একজন নেতা টোকিও ভিত্তিক তৈরি পোশাকের মার্চেন্ডাইজার সাদ্দাম হোসেন। জাপান ও দক্ষিণ কোরিয়াতে অবস্থানরত বাংলাদেশিদের প্রতি তিনি আহ্বান জানাচ্ছেন অস্থায়ীভিত্তিতে অর্থনৈতিক সঙ্কট থাকা সত্ত্বেও দেশে বন্ধুবান্ধব ও পরিবারের কাছে অর্থ পাঠানো বন্ধ রাখতে। তিনি বলেন, আমি এটা করছি আমার মাতৃভূমির জন্য।

আরও পড়ুনঃ  নারীসহ ওই ফ্ল্যাটে প্রবেশ করেন এমপি আনার

তবে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের তথ্য ও গবেষণা সম্পাদক সেলিম মাহমুদ প্রবাসীদের রেমিট্যান্স বন্ধ রাখাকে দেশদ্রোহিতা এবং দীর্ঘ মেয়াদে অবাস্তব বলে বর্ণনা করেছেন। তিনি নিক্কেই এশিয়াকে বলেন, দেশে অবস্থানরত আত্মীয়রা এই অর্থের ওপর নির্ভরশীল।

বৈধ চ্যানেল পরিহার করার আহ্বানের মাধ্যমে তারা অবৈধ উপায়কে উৎসাহিত করছেন। এর মধ্য দিয়ে তিনি রেমিট্যান্স এড়াতে অনানুষ্ঠানিক চ্যানেলের উল্লেখ করেন। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে এই প্রচারণার ফলে সরকারের শীর্ষ স্থানীয় মন্ত্রীরা দেশে অর্থ পাঠাতে প্রবাসীদের অনুরোধ করছেন।

বাংলাদেশ ব্যাংকের রিপোর্ট বলছে, গত ১৯ জুলাই থেকে ২৪ জুলাই পর্যন্ত মাত্র ৭ কোটি ৮০ লাখ ডলার রেমিট্যান্স এসেছে, যা একদিনের রেমিট্যান্সের সমান। তবে বাংলাদেশ ব্যাংকের মুখপাত্র মেজবাহ উল হক বলেন, বিক্ষোভের সময় ৫ দিন ইন্টারনেট বন্ধ থাকার কারণে দ্রুত রেমিট্যান্সের এই পতন হয়ে থাকতে পারে।

আরও পড়ুনঃ  জামায়াত আমিরের ‘ক্ষমা’ নিয়ে মাসুদ সাঈদীর স্ট্যাটাস

অস্ট্রেলিয়াভিত্তিক অর্থনীতিবিদ জ্যোতি রহমান বলেন, রেমিট্যান্স বর্জনের ফলে এই অবস্থা কিনা তা এখনই বলা যাবে না। তবে যারা রেমিট্যান্স পাঠান তাদের ভগ্নাংশও যদি দেশে অর্থ পাঠানো থেকে বিরত থাকেন, তার মানে হবে বৈদেশিক মুদ্রার বিনিময় কম আসবে। এর ফলে দেশীয় মুদ্রা টাকার ওপর নিম্নমুখী চাপ বাড়বে। যদি রেমিট্যান্স অর্ধেক কমে যায় তাহলে বাংলাদেশ অস্বচ্ছল হয়ে পড়বে। স্থানীয় মুদ্রা ‘ক্র্যাশ’ করবে বলে মনে করেন যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক শিক্ষাবিদ রাব্বি।

সর্বশেষ সংবাদ
জনপ্রিয় সংবাদ