বড় পরিবর্তনের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে বাংলাদেশ। সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ৫ আগস্ট পদত্যাগ করে দেশ ছেড়েছেন। আজ ৮ আগস্ট শান্তিতে নোবেলজয়ী ড. মুহাম্মদ ইউনূসকে প্রধান করে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠন হচ্ছে। এর মধ্যে বাংলাদেশের ক্রিকেট বিশেষ করে বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের (বিসিবি) ভবিষ্যৎ নিয়ে কৌতূহল জাগছে।
২০১৩ সালের পর থেকে বিসিবি প্রধানের দায়িত্ব পালন করছেন নাজমুল হাসান। সর্বশেষ নির্বাচনে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত সভাপতি এ বছরের শুরুতে ক্রীড়ামন্ত্রীর দায়িত্বও পেয়েছেন। তবে দ্বাদশ সংসদ অবলুপ্ত ঘোষণা হওয়ায় সে দায়িত্ব আর থাকছে না তাঁর। এতেই প্রশ্ন জেগেছে বিসিবিতে কি ফিরবেন তিনি?
নিয়ম অনুযায়ী নাজমুল হাসানের বিসিবির পদ নিয়ে কোনো সমস্যা থাকবার কথা নয়। প্রথমত, বিসিবি প্রধানের পদ নির্বাচনের মাধ্যমে নির্ধারিত হয়, এটি সরকারি কোনো পদ নয়। দ্বিতীয়ত, বিসিবির পরবর্তী নির্বাচন ২০২৫ সালের অক্টোবরে। তার আগ পর্যন্ত বিসিবি প্রধানের পদে হিসেবে নাজমুল হাসানের থাকায় আইনত কোনো বাধা নেই।
তবে বাংলাদেশের ক্রিকেট বোর্ড ও এতে রাজনৈতিক হস্তক্ষেপের অতীত ইতিহাস বলে, বাস্তবতা এত সহজ নয়। শুধু বোর্ড প্রধান নন, আরেক বিসিবি পরিচালক শফিউল আলম চৌধুরীও সদ্য অবলুপ্ত সংসদের এমপি নির্বাচিত হয়েছিলেন। এছাড়া সাবেক এমপি নাইমুর রহমান দুর্জয়, এজিএম নাসির উদ্দিন ও শেখ সোহেলের মতো পরিচালকরাও আওয়ামী লীগের রাজনীতির সঙ্গে বেশ ভালোভাবে জড়িত।
ক্ষমতার পালাবদলে তাদের পদ টিকে থাকবে কি না, এ নিয়ে সন্দেহ জাগা অমূলক নয়। এরই মধ্যে দেশের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ পদ থেকে অনেককেই পদত্যাগ করতে দেখা গেছে। ক্রিকেট-বোর্ডের কর্তারা সে পথে হাঁটতেও পারেন।
কিন্তু যদি তাঁরা সে পথে না হাঁটেন, সেক্ষেত্রে? তখন কি এই কর্মকর্তাদের ছাঁটাই করতে পারবে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার?
আইসিসির নিয়ম বলে নির্বাচিত ক্রিকেট বোর্ডে তৃতীয় পক্ষের হস্তক্ষেপ তারা ভালোভাবে নেয় না। গত বছর আইসিসি শ্রীলঙ্কা ক্রিকেটকে দুই মাসের জন্য নিষিদ্ধ করেছিল ‘বোর্ড পরিচালনায় সরকারি হস্তক্ষেপের’ অভিযোগে।
এতে অনূর্ধ্ব-১৯ বিশ্বকাপ আয়োজনের অধিকার হারিয়েছিল শ্রীলঙ্কা বোর্ড। তবে দেশটির ক্রিকেটারদের কোনো ক্ষতি হয়নি, কারণ আন্তর্জাতিক ক্রিকেট খেলায় কোনো বাধা ছিল না। মজার ব্যাপার, শ্রীলঙ্কা বোর্ড নিজ থেকেই নিষেধাজ্ঞা চেয়েছিল, যাতে শ্রীলঙ্কা সরকার বোর্ডের কাজে আর বাড়তি হস্তক্ষেপ না করতে পারে।
শ্রীলঙ্কার আগে প্রথম পূর্ণ সদস্য দল হিসেবে নিষেধাজ্ঞা জুটেছিল জিম্বাবুয়ের। তবে শ্রীলঙ্কার মাঠের ক্রিকেটে নিষেধাজ্ঞার কোনো প্রভাব না পড়লেও জিম্বাবুয়ের ক্ষেত্রে সে নিষেধাজ্ঞা সত্যিকার অর্থেই নিষেধাজ্ঞা ছিল। ২০১৯ সালে সব ধরণের ক্রিকেট থেকে সরে যেতে হয়েছিল জিম্বাবুয়েকে, এমনকি আইসিসির কাছ থেকে অর্থ বরাদ্ধও ফ্রিজ করে দেওয়া হয়েছিল।
এর কারণ, তখন ভয়ংকর আর্থিক মন্দার মধ্যে ছিল জিম্বাবুয়ে। আইসিসি শঙ্কায় ছিল, জিম্বাবুয়ে সরকার আইসিসি থেকে পাওয়া বরাদ্ধের অর্থ ক্রিকেটে ব্যবহার না করে সরকারী অন্য কাজে ব্যবহার করে ফেলতে পারে।
এর আগে ২০১৪-১৫ সালেও বোর্ডে সরকারী হস্তক্ষেপের সম্ভাবনা জাগায় শ্রীলঙ্কা বোর্ডের প্রাপ্য অর্থ কিছুদিনের জন্য এসক্রো ফান্ডে রাখা হয়েছিল এবং তাদের ভোটাধিকার স্থগিত করা হয়েছিল। তবে কোনো ধরনের নিষেধাজ্ঞা জোটেনি।
বাংলাদেশের ক্রিকেটে বোর্ড কর্মকর্তাদের অনিচ্ছায় যদি বড় ধরনের রদবদল হয়, তবে আইসিসি পদক্ষেপ নিতেই পারে। তবে আইসিসি পুরো ব্যাপারটা কীভাবে দেখছে, তার ওপর অনেক কিছু নির্ভর করছে। পাকিস্তানে যেমন গত কয়েক বছরে সরকার বদলের কারণে এবং এর বাইরেও বহুবার বোর্ডে কোনো নির্বাচন ছাড়াই বেশ বড় বড় রদবদল হয়েছে। এবং আইসিসি কোনো ক্ষেত্রেই কোনো পদক্ষেপ নেয়নি।