সাধারণ ছাত্রদের আন্দোলনে শেখ হাসিনার সরকারের পতনের পর দেশের শেয়ারবাজার ইতিবাচক ধারায় ফিরেছে। এরইমধ্যে শেয়ারবাজারে ৩ কার্যদিবস লেনদেন হয়েছে। এই ৩ কার্যদিবসেই প্রধান শেয়ারবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) বাজার মূলধন ৫৮ হাজার কোটি টাকার উপরে বেড়েছে। আর প্রধান মূল্যসূচক বেড়েছে প্রায় ৭০০ পয়েন্ট
বিশ্লেষকরা মনে করছেন স্বৈরাচারী সরকারের পতনে শেখ হাসিনার আস্থাভাজন মুক্ত হবে নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিএসইসি আর বাজার থেকে বিদায় হবে কারসাজিকারী দুষ্টচক্র। ফলে পুঁজিবাজারে আবারো আস্থা ফিরছে বিনিয়োগকারীদের।
হাসিনা সরকার পতনের পর শেয়ারবাজারে সপ্তাহের ব্যবধানে মূল্যসূচক ও বাজার মূলধনের বড় উত্থান হয়েছে। গত সপ্তাহে লেনদেন হওয়া ৪ কার্যদিবসের মধ্যে হাসিনা সরকারের অধীনে লেনদেন হয়েছে ১ কার্যদিবস। বাকি যে ৩ কার্যদিবস লেনদেন হয়, সে সময় দেশে কোনো সরকার ছিল না। ছাত্র-জনতার আন্দোলনের মুখে ৫ই আগস্ট প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে পদত্যাগ করেন শেখ হাসিনা। তার আগে ৪ঠা আগস্ট শেয়ারবাজারে লেনদেন হয়। এটিই হাসিনা সরকারের আমলে শেয়ারবাজারের শেষ লেনদেন ছিল।
৪ঠা আগস্ট ডিএসইর প্রধান মূল্যসূচক কমে ১০৪ পয়েন্ট। আর বাজার মূলধন কমে ৭ হাজার ৯২৪ কোটি টাকা। আন্দোলন ঘিরে পরিস্থিতি অশান্ত হয়ে উঠলে দেশে কারফিউ জারি করে ৩ দিন সাধারণ ছুটি ঘোষণা করা হয়। তবে হাসিনা সরকারের পতন হলে ৬ই আগস্ট থেকে আবার সরকারি-বেসরকারি সব অফিস খুলে দেয়া হয়। ফলে শেয়ারবাজারেও লেনদেন চালু হয়। এরপর লেনদেন হওয়া ৩ কার্যদিবসেই শেয়ারবাজারে উল্লম্ফন হয়েছে। এই ৩ কার্যদিবসে ডিএসইর প্রধান মূল্যসূচক বেড়েছে ৬৯৫ পয়েন্ট। এর মধ্যে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান ড. ইউনূস দেশে ফেরার দিন বৃহস্পতিবারই ডিএসইর প্রধান মূল্যসূচক ডিএসইএক্স বেড়েছে ৩০৬ পয়েন্ট। ২০১৩ সালের ২৮শে জানুয়ারি ডিএসইর প্রধান মূল্যসূচক হিসেবে যাত্রা শুরু করে ডিএসইএক্স। এরপর একদিনে সূচকটির এত বড় উত্থান আর কখনো হয়নি। ডিএসইএক্স সূচক রেকর্ড লাফ দেয়ার পাশাপাশি লেনদেন বেড়ে ১ হাজার ৬০৬ কোটি টাকা হয়েছে। আর বাজার মূলধন বেড়ে দাঁড়ায় ৫৮ হাজার ৪৬৯ কোটি টাকা।
এতে সপ্তাহের ব্যবধানে দাম বাড়ার তালিকায় নাম লিখিয়েছে সিংহভাগ প্রতিষ্ঠান। গত সপ্তাহ জুড়ে ডিএসইতে লেনদেন হওয়া প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে ৩৩৯টির স্থান হয়েছে দাম বাড়ার তালিকায়। দাম কমেছে ১১টির। আর ৪৭টির দাম অপরিবর্তিত রয়েছে।
বেশির ভাগ প্রতিষ্ঠানের দাম বাড়ায় গত সপ্তাহের শেষ কার্যদিবসের লেনদেন শেষে ডিএসইর বাজার মূলধন দাঁড়িয়েছে ৭ লাখ ৩ হাজার ৯১৩ কোটি টাকা। যা আগের সপ্তাহের শেষ কার্যদিবসে ছিল ৬ লাখ ৫৩ হাজার ৩৬৮ কোটি টাকা। অর্থাৎ সপ্তাহের ব্যবধানে ডিএসইর বাজার মূলধন বেড়েছে ৫০ হাজার ৫৪৫ কোটি টাকা বা ৭.৭৪ শতাংশ।
এদিকে ডিএসইর প্রধান মূল্যসূচক ডিএসইএক্স গত সপ্তাহে বেড়েছে ৫৯০.৮৭ পয়েন্ট বা ১১.০৮ শতাংশ। প্রধান মূল্যসূচকের পাশাপাশি বেড়েছে বাছাই করা ভালো কোম্পানি নিয়ে গঠিত ডিএসই-৩০ সূচক। গত সপ্তাহ জুড়ে এই সূচকটি বেড়েছে ২৩১.৮৮ পয়েন্ট বা ১২.২০ শতাংশ। আর ইসলামী শরিয়াহভিত্তিতে পরিচালিত কোম্পানি নিয়ে গঠিত ডিএসই শরিয়াহ্সূচক বেড়েছে ১০৯.৫৩ পয়েন্ট বা ৯.৪০ শতাংশ।
মূল্যসূচক বাড়ার পাশাপাশি লেনদেনের গতিও বেড়েছে। সপ্তাহের প্রতি কার্যদিবসে ডিএসইতে গড়ে লেনদেন হয়েছে ৮৩৪ কোটি ৯৬ লাখ টাকা। আগের সপ্তাহে প্রতিদিন গড়ে লেনদেন হয় ৪৭৮ কোটি ৯২ লাখ টাকা। অর্থাৎ প্রতি কার্যদিবসে গড় লেনদেন বেড়েছে ৩৫৬ কোটি ৪ লাখ টাকা বা ৭৪.৩৪ শতাংশ।
সপ্তাহ জুড়ে ডিএসইতে টাকার অঙ্কে সব থেকে বেশি লেনদেন হয়েছে বৃটিশ আমেরিকান টোব্যাকোর শেয়ার। কোম্পানিটির শেয়ার প্রতিদিন গড়ে লেনদেন হয়েছে ৩৪ কোটি ৭২ লাখ টাকা, যা মোট লেনদেনের ৪.১৬ শতাংশ। দ্বিতীয় স্থানে থাকা স্কয়ার ফার্মাসিউটিক্যালসের শেয়ার প্রতিদিন গড়ে লেনদেন হয়েছে ২৮ কোটি ৪৬ লাখ টাকা। প্রতিদিন গড়ে ২৫ কোটি ৬৯ লাখ টাকা লেনদেনের মাধ্যমে তৃতীয় স্থানে রয়েছে সিটি ব্যাংক।
এদিকে হাসিনা সরকার পতনের পর ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে দায়িত্ব নেয়া অন্তর্বর্তী সরকারকে অভিনন্দন জানিয়েছে পুঁজিবাজারের নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি)। সেইসঙ্গে দেশের প্রধান শেয়ারবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ থেকেও অন্তর্বর্তী সরকারকে অভিনন্দন জানানো হয়েছে।