21 C
Dhaka
Thursday, November 21, 2024

বিশেষ সাক্ষাৎকারে সারজিস আলম

একজন সর্বোচ্চ দুবারের বেশি প্রধানমন্ত্রী নয়

সারজিস আলম বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের অন্যতম সমন্বয়ক ও সংগঠক। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিষয়ে পড়াশোনা করেছেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ডাকসু নির্বাচনে অমর একুশে হল সংসদে ছাত্রলীগের প্যানেল থেকে সদস্য পদে জয়লাভ করেছিলেন।

এ ছাড়া তিনি নানা পর্যায়ে বিতর্ক প্রতিযোগিতায় বিতার্কিক হিসেবে অংশ নেন। সাম্প্রতিক সময়ের আন্দোলন ও ভবিষ্যৎ পরিকল্পনাসহ নানা বিষয় নিয়ে কালবেলার সঙ্গে কথা বলেন তিনি। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন অন্তু মুজাহিদ

রাষ্ট্র ১৬ বছর নয়, ৫৩ বছর ধরে যেদিকে যাওয়ার কথা ছিল সেদিকে যায়নি। গত ১৬ বছরে রাষ্ট্রের কফিনে সর্বশেষ পেরেকটি মেরে দেওয়া হয়েছে। সে জায়গা থেকে রাষ্ট্রকে সঠিক জায়গায় নিতে চাইলে সবার আগে রাষ্ট্রের সিস্টেমগুলো বদলাতে হবে। দুর্নীতিগ্রস্তদের বিচারের আওতায় আনতে হবে। দৃশ্যমান বিচার করতে হবে, দ্রুত বিচার করতে হবে। জবাবদিহিতা সৃষ্টি করতে হবে। মানুষের ভোটের মাধ্যমে জনপ্রতিনিধি নির্বাচিত হতে হবে।

কালবেলা: কোটা সংস্কার আন্দোলনের মূল উদ্দেশ্য কী ছিল এবং কীভাবে এই লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়েছিল? কোন কৌশল ও পদ্ধতি ব্যবহার করে আপনারা আন্দোলন পরিচালনা করেছেন?

সারজিস আলম: ৫ জুন যখন হাইকোর্ট ২০১৮ সালে জারি করা সরকারের পরিপত্র বাতিল করে দেয়, তখন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগারের সামনে থেকে একটা বিক্ষোভ মিছিল করা হয়। পরদিন কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে আমরা বিক্ষোভ মিছিল করি। যেখানে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা অংশগ্রহণ করে। কোটার স্থায়ী সমাধানের জায়গা থেকে আমরা আন্দোলন করেছি। ২০১৮ সালে কোটা একেবারে বাতিল করে দেওয়া হয়েছিল, এটা যৌক্তিক ছিল না। কিছু কোটা সুবিধা আমাদের পিছিয়ে পড়া ভাইবোনদের দেওয়া উচিত। আবার ৫৬ শতাংশ কোটা অযৌক্তিকতার সব মাত্রাকে ছাড়িয়ে যায়। সে জায়গা থেকে আমরা এই কোটা সংস্কার আন্দোলন করেছিলাম। আমাদের দাবি ছিল কোটাকে যেন একটি যৌক্তিক পর্যায়ে নির্ধারণ করা হয়।

কিন্তু সরকার রাষ্ট্রযন্ত্রকে ব্যবহার করে আমাদের ওপর হামলা চালিয়েছে, মামলা করেছে, আমাদের অসংখ্য ভাইবোনকে নির্যাতন করেছে, হত্যা করেছে। কোটা সংস্কার আন্দোলন গণআন্দোলনে পরিণত হয়। এই গণআন্দোলনে পুরো দেশের সব ধর্মের-বর্ণের-পেশার মানুষ সম্পৃক্ত হয়। তারা ১৬ বছর ধরে ক্ষমতায় থাকা একটি ফ্যাসিস্ট সরকারের স্বৈরতান্ত্রিক আচরণের কারণে ক্ষিপ্ত ছিল। এ কারণে সবাই রাস্তায় নেমে আসে। সরকার আন্দোলন নিয়ন্ত্রণ করার জন্য গুলি চালায়। পুলিশকে ব্যবহার করে, অন্যান্য বাহিনীকেও ব্যবহার করে তারা। তখন মানুষের ক্ষোভ সব লিমিট ক্রস করে যায়। মানুষ একসঙ্গে আমাদের ব্যানারে রাস্তায় নেমে আসে এবং ফ্যাসিস্ট স্বৈরাচারের পতন হয়।

কালবেলা: আন্দোলন চলাকালে চ্যালেঞ্জগুলো কী ছিল এবং আপনারা কীভাবে সেগুলো মোকাবিলা করেছেন? এখন কী ধরনের চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হচ্ছেন এবং কীভাবে তা মোকাবিলা করছেন?

সারজিস আলম: প্রশাসনিকভাবে ও ক্ষমতাসীন দলের বিভিন্ন অঙ্গ-সংগঠনের একটি চাপ ছিল। প্রথম দিকে চাপ সহনীয় পর্যায়ে ছিল। আন্দোলন বড় হতে থাকলে তাদের চাপও বাড়তে থাকে। ক্ষমতাসীন দল বিভিন্ন বাহিনীকে ব্যবহার করেছে, সরকারের অভ্যন্তরীণ এজেন্সিকে ব্যবহার করেছে। তারা রাষ্ট্রীয় বিভিন্ন সংস্থাকে ব্যবহার করেছে। তারা ভয় দেখানোর চেষ্টা করেছে, চাপ প্রয়োগ করার চেষ্টা করেছে। গুম করার চেষ্টা করেছে, নাহিদসহ আমাদের অনেক সমন্বয়ককে অত্যাচার করা হয়েছে। তাদের তুলে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। এ সমস্যাগুলো আমাদের মোকাবিলা করতে হয়েছে। পাশাপাশি তৎকালীন ক্ষমতাসীন দলের ‘বি’ টিম, ‘সি’ টিম প্রোপাগান্ডা ছড়িয়েছে। আমাদের মধ্যে দ্বিমত বা বিভাজন দেখানোর চেষ্টা করেছে। আমাদের বিভিন্ন মিস ইনফরমেশন দিয়ে পুরো দেশের মানুষকে বিভ্রান্ত করার চেষ্টা করা হয়েছে। সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ছিল, আমাদের পরিবারকে হুমকি দেওয়া হয়েছে। আমাদের মেরে ফেলার হুমকি দেওয়া হয়েছে। পরিবার থেকে যেন আমাদের সাবধান করে দেওয়া হয়, তার জন্য বহু চেষ্টা তারা করেছে।

আরও পড়ুনঃ  ক্ষমতা নেওয়ার আগেই ভারতকে যে বার্তা দিয়েছিলেন ইউনূস

আমাদের একটি প্রাথমিক বিজয় অর্জিত হয়েছে। সামনের চ্যালেঞ্জ আরও বড় ও ব্যাপক। বৈশ্বিক বিভিন্ন পরাশক্তি, যারা ফ্যাসিস্ট সরকারকে আগে থেকে মদদ দিয়েছে, তারা তাদের ফিরিয়ে আনার চেষ্টা করছে। একদিনে ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগের পতন হয়ে গেছে আর তার সব দোসর চলে গেছে, ব্যাপারটি এমন নয়। সবাই আছে। তারা তাদের জায়গা থেকে বিভিন্ন সময়ে পাল্টা একটি ক্যু ঘটানোর চেষ্টা করছে। তাদের জায়গা থেকে চক্রান্ত করার চেষ্টা করছে। এই মুহূর্তে আমরা আমাদের জীবনের নিরাপত্তা নিয়ে সন্দিহান। আমরা মনে করি বিভিন্ন দেশের বিভিন্ন গুপ্তচর থেকে শুরু করে বিভিন্ন সংস্থার সদস্য হয়তো দেশে রয়েছে। যারা আমাদের টার্গেট করছে, বিভিন্ন সমন্বয়ককে টার্গেট করছে, আমাদের উপদেষ্টামণ্ডলীকে টার্গেট করছে—সে জায়গায় একটি হুমকি রয়েছে। তবে যে কোনো হুমকি, দেশের ও জনগণের স্বার্থে মোকাবিলা করার জন্য আমরা প্রস্তুত আছি।

কালবেলা: আন্দোলনের মাধ্যমে অর্জিত সাফল্যগুলো কীভাবে রক্ষা করবেন এবং স্থায়ী পরিবর্তন আনা সম্ভব হবে বলে মনে করেন?

সারজিস আলম: প্রাথমিক যে সাফল্য অর্জিত হয়েছে, সেগুলো রক্ষা করতে হবে। এ ক্ষেত্রে যতটুকু দায়িত্ব রয়েছে, তা পালন করতে হবে। ৫ আগস্টের কর্মসূচিতে দেশব্যাপী সব মানুষ ঢাকায় না আসত তাহলে এ গণঅভ্যুত্থানটি কখনো সফল হতো না। মানুষ মনে করেছে তাদের এটি করা উচিত, মানুষ এসেছে, তারা সফল হয়েছে। একইভাবে এখন অসংখ্য চক্রান্ত চলছে, অসংখ্য চাপ আসবে, কিন্তু যারাই এ চক্রান্ত করুক, তাদের এ মানসিক জায়গাটি দুর্বল। যখন দেখবে পুরো দেশের মানুষ আমাদের সঙ্গে রয়েছে, তখন তারা আর সাহস দেখাবে না। মানুষ রাস্তায় নেমে এলে বাংলাদেশ নিয়ে যত ধরনের চক্রান্ত করা হোক না কেন, তা আর কখনো সফল হবে না।

কালবেলা: রাষ্ট্র সংস্কারের প্রস্তাবিত মডেল বা রূপ কেমন হওয়া উচিত বলে মনে করেন?

সারজিস আলম: রাষ্ট্র ১৬ বছর নয়, ৫৩ বছর ধরে যেদিকে যাওয়ার কথা ছিল সেদিকে যায়নি। গত ১৬ বছরে রাষ্ট্রের কফিনে সর্বশেষ পেরেকটি মেরে দেওয়া হয়েছে। সে জায়গা থেকে রাষ্ট্রকে সঠিক জায়গায় নিতে চাইলে সবার আগে রাষ্ট্রের সিস্টেমগুলো বদলাতে হবে। দুর্নীতিগ্রস্তদের বিচারের আওতায় আনতে হবে। দৃশ্যমান বিচার করতে হবে, দ্রুত বিচার করতে হবে। জবাবদিহিতা সৃষ্টি করতে হবে। মানুষের ভোটের মাধ্যমে জনপ্রতিনিধি নির্বাচিত হতে হবে। এতদিন যারা জনপ্রতিনিধি হিসেবে ছিলেন, তারা জনগণের ভোটে নির্বাচিত ছিলেন না। তারা নির্দিষ্ট কিছু মানুষকে তেল দিয়ে মনোনয়ন কিনতেন। টাকা দিয়ে এমপি হতেন। তারা ছুটতেন দুটি জিনিসের পেছনে—এক. ব্যক্তিটির পেছনে ছুটে মনোনয়ন নিতেন। দুই. টাকার পেছনে ছুটতেন। একজন ব্যক্তি যখন টাকার পেছনে ছোটেন, তখন তাকে জনগণকে শোষণ করতে হবে। তারা জনগণের সেবক না হয়ে শোষক হয়েছেন। এ ক্ষেত্রে অবশ্যই নির্বাচন ব্যবস্থা ঠিক করতে হবে। শিক্ষা খাত, স্বাস্থ্য খাত, বিচার বিভাগ, আইন বিভাগ, আইনশৃঙ্খলা বাহিনী—সব জায়গায় স্বচ্ছতা, নিরপেক্ষতা, জবাবদিহিতা নিশ্চিত করতে হবে। কেউ যদি কোনোরকম দুর্নীতি বা অন্যায়ের সঙ্গে যুক্ত থাকেন, তাকে দ্রুত বিচারের আওতায় আনতে হবে।

আরও পড়ুনঃ  বঙ্গভবনে শেখ মুজিবের ছবি সরানো নিয়ে দেয়া বক্তব্যে রিজভীর দুঃখ প্রকাশ,

কালবেলা: আপনারা নতুন দল গঠন করতে যাচ্ছেন। আপনাদের লক্ষ্য কী, কীভাবে কাজ করবেন? দেশের এ সংক্রান্ত অতীত অভিজ্ঞতা খুব সুখকর নয়। এবার কীভাবে এগোবেন আপনারা?

সারজিস আলম: আমরা গণঅভ্যুত্থানের পর থেকে বিষয়টি নিয়ে চিন্তাভাবনা করেছি। রাজনৈতিক দল তৈরির বিষয়টি প্রথম দিকে আমাদের চিন্তার মধ্যে ছিল না। ১৬ বছর ধরে ক্ষমতায় থাকা ফ্যাসিস্ট সরকারকে যখন কেউ উৎখাত করতে পারছিল না, তখন তরুণরা একটি সৎ ও ন্যায়ভিত্তিক ন্যায়সংগত নেতৃত্বের মাধ্যমে তাদের পতন ঘটিয়েছে। পরবর্তীকালে জনগণের পক্ষ থেকে চাওয়াটি এলো, তরুণদের সমন্বয়ে নতুন একটি রাজনৈতিক দল গঠিত হোক। বাংলাদেশের আগের রাজনৈতিক দলগুলোর প্রতি মানুষের আস্থার সংকট, পেছনে তাদের দায় রয়েছে। তারাই আস্থা নষ্ট করে ফেলেছে। এটি এখনো আলোচনার পর্যায়ে রয়েছে, চিন্তা করছি যে মানুষের চাওয়ার পরিপ্রেক্ষিতে আমরা নতুন আরেকটি রাজনৈতিক দল করতে পারি কি না। যারা সত্যের জন্য লড়বে, ন্যায়ের জন্য লড়বে, মানুষের জন্য লড়বে। এটি আমরা এখনো আলোচনা করছি। এই রাজনৈতিক প্ল্যাটফর্মটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের জন্য নয়, এটি হচ্ছে শুধু জাতীয় পর্যায়ের জন্য। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে এই ধরনের দখলদারি, লেজুড়বৃত্তিক রাজনীতি আমরা সমর্থন করি না। আমরা চাই, নির্বাচনের মাধ্যমে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে ছাত্র সংসদ থাকুক। এভাবেই নেতৃত্ব উঠে আসুক। আমরা বলছি, জাতীয় রাজনীতির কথা। আপনি যদি দিনশেষে জাতীয় রাজনীতিতে সৎ-যোগ্য মানুষগুলোকে না বসাতে পারেন, তাহলে অসৎ ও অযোগ্যদের দ্বারাই আপনাকে শোষিত হতে হবে। তরুণ প্রজন্মকে এই দায়িত্ব নিতে হবে।

কালবেলা: নির্বাচনী ব্যবস্থায় স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করতে আপনারা কী ধরনের সংস্কারের প্রস্তাব করছেন?

সারজিস আলম: আমাদের অবস্থান একদম স্পষ্ট। যে নির্বাচন ব্যবস্থা বাংলাদেশ থেকে উঠে গিয়েছিল, ভোটাধিকার হারিয়ে গিয়েছিল, সবার আগে সেটি ফিরিয়ে আনতে হবে। এর জন্য নির্বাচন কমিশন থেকে শুরু করে সব জায়গায় সংস্কার আনতে হবে। তারা দুর্নীতির আশ্রয় ও প্রশ্রয়দাতা। তাদের বহিষ্কার করতে হবে, পদত্যাগ করতে হবে। সবার কাজে গ্রহণযোগ্য ব্যক্তিকে গুরুত্বপূর্ণ জায়গায় পদায়ন করতে হবে। বাংলাদেশের আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী থেকে শুরু করে যারা নির্বাচনকালে দায়িত্বে নিয়োজিত থাকবে, তাদের সর্বোচ্চ স্বচ্ছতার মাধ্যমে কাজ করতে হবে। যদি তারা সেটা না করতে পারে, তাদের শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে। মিডিয়া ও পর্যবেক্ষকদের মুক্তভাবে কাজ করার সুযোগ দিতে হবে। এখানে সবচেয়ে বড় স্টেকহোল্ডার হলো দেশের জনগণ। জনগণের যদি মনে হয়, কোথাও কারচুপি হচ্ছে, ঝামেলা হচ্ছে, সমস্যা হচ্ছে, সঙ্গে সঙ্গে প্রতিবাদ গড়ে তুলতে হবে, প্রয়োজনে ওই নির্দিষ্ট সেন্টারের ভোট বর্জন করতে হবে।

আরও পড়ুনঃ  পরীর মেয়ের নাম সাফিরা সুলতানা, নিয়ম মেনেই নিয়েছেন দত্তক

কালবেলা: গণতন্ত্র ও মানবাধিকার সুরক্ষায় দেশের সংবিধানে কোন ধরনের পরিবর্তন আনা প্রয়োজন বলে আপনারা মনে করেন?

সারজিস আলম: দেশের সংবিধানে অনেক পরিবর্তনের প্রয়োজন আছে। আমরা বিশ্বাস করি, এই পরিবর্তনগুলো অন্তর্বর্তী সরকারের মধ্য দিয়ে দ্রুত সময়ের মধ্যে আসবে। সংবিধানের বিভিন্ন অনুচ্ছেদ, পরিচ্ছেদ বা অংশ বিভিন্নভাবে ফ্যাসিস্ট সরকারকে প্রমোট করে। যেমন একজন চাইল বছরের পর বছর প্রধানমন্ত্রী থাকবে, এটি কখনো হতে পারে না। আমরা বিশ্বাস করি, একজনের সর্বোচ্চ দুবারের বেশি প্রধানমন্ত্রী থাকা উচিত নয়। যখন কারও মধ্যে ক্ষমতার লোভ আসে, তখন সে আর ক্ষমতা ছাড়তে চায় না। এজন্য সময় নির্ধারণ করে দিতে হবে। বাংলাদেশের রাজনীতিতে পরিবারতন্ত্র গেড়ে বসেছে। এটির পরিবর্তন প্রয়োজন।

কালবেলা: আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ওপর জনগণের আস্থা পুনরুদ্ধার করতে কী ধরনের সংস্কার প্রয়োজন?

সারজিস আলম: এই মুহূর্তে বাংলাদেশের স্থিতিশীলতার জন্য আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী খুব বেশি প্রয়োজন। ফ্যাসিস্ট সরকার তাদের ১৬ বছর ধরে টিস্যুর মতো ব্যবহার করেছে। তাদের সব অপকর্মকে বৈধতা দিতে এবং সব অপকর্মকে প্রমোট করতে তারা আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে ব্যবহার করেছে। গণঅভ্যুত্থানে যেমন তাদের আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর অতিউৎসাহী কিছু সদস্যের দায় রয়েছে, ঠিক তেমনি ফ্যাসিস্ট সরকারের দায়টা তার থেকে অনেক বড়। কারণ তারা তাদের এটা করতে বাধ্য করেছে। তারা তাদের চাকরির জন্য করেছে। কিন্তু আমাদের এসব থেকে বের হয়ে আসতে হবে। আমাদের আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে দেশের কাজের জন্য ব্যবহার করতে হবে, কোনো দল বা গোষ্ঠীর জন্য ব্যবহার করা চলবে না।

কালবেলা: সপ্তাহব্যাপী রেজিস্ট্যান্স উইক কর্মসূচির উদ্দেশ্য কী? কীভাবে পরিচালনা করছেন?

সারজিস আলম: আমাদের কাছে তথ্যটি আসছে যে, দেশের ভেতরে থেকে এবং দেশের বাইরে থেকে বিভিন্ন কুচক্রী মহল, বিভিন্ন অপচেষ্টাকারী, যারা সবসময় ফ্যাসিস্ট রেজিম রেখে দিতে চেয়েছিল, যারা তাদের দাসদের এ দেশের ক্ষমতায় রেখে দিতে চেয়েছিল, তারা এখন বিভিন্নভাবে ক্যু ঘটানোর জন্য সক্রিয় রয়েছে। তাদের আমাদের সত্যিকারভাবে প্রতিরোধ করতে হবে। আমরা আমাদের পুরো দেশকে রক্ষার জন্য তাদের অবশ্যই প্রতিরোধ করতে হবে। সে জায়গা থেকে আমরা সপ্তাহব্যাপী রেজিস্ট্যান্স উইক কর্মসূচি দিয়েছি। আমরা সপ্তাহব্যাপী রাজপথে থাকব, মাঠে থাকব। প্রয়োজন হলে আমাদের প্রত্যেকটি দিন হবে আমাদের একেকটি গণঅভ্যুত্থানের দিন। কেউ ভুলে এই সাহসটি না করে যে, বাংলাদেশে ওই ফ্যাসিস্ট রেজিমের পক্ষে আর কোনো পাল্টা অভ্যুত্থান হবে। আমরা এটা হতে দেব না। যতদিন বাংলাদেশের ছাত্র-জনতা বেঁচে রয়েছে, যতদিন তারা রাজপথে রয়েছে, ততদিন বাংলাদেশে আবার ওই ফ্যাসিস্ট রেজিমের পক্ষে কোনো পাল্টা অভ্যুত্থান আমরা হতে দেব না।

সর্বশেষ সংবাদ
জনপ্রিয় সংবাদ