ছাত্র-জনতার উত্তাল আন্দোলনের মুখে চলতি মাসের ৫ তারিখ শেখ হাসিনা যখন ভারতে আশ্রয় নিতে বাধ্য হয়েছিলেন তখন তার ডিপ্লোম্যাটিক বা অফিশিয়াল কূটনৈতিক পাসপোর্ট কার্যকর ছিল এবং এই বিশেষ লাল পাসপোর্টের সুবাদেই তিনি অন্তত ৪৫ দিন বিনা ভিসায় প্রতিবেশী দেশটিতে থাকতে পারবেন। এমন একটি প্রতিবেদন গত সপ্তাহে সংবাদমাধ্যম বিবিসির বাংলা বিভাগে প্রকাশিত হওয়ার পর দিনই শেখ হাসিনাসহ আওয়ামী লীগের মন্ত্রী-এমপিদের নামে ইস্যু করা সব কূটনৈতিক পাসপোর্ট ‘রিভোকড’ বা প্রত্যাহারের ঘোষণা আসে অন্তর্বর্তী সরকারের পক্ষ থেকে।
তিন সপ্তাহেরও বেশি সময় শেখ হাসিনা ভারতের আশ্রয়ে রয়েছেন। চরম গোপনীয়তা ও কড়া সুরক্ষা বলয়ের মধ্যে বিজেপির নেতৃত্বাধীন নরেন্দ্র মোদির সরকার আপাতত তার (সঙ্গে তার ছোট বোন শেখ রেহানার) থাকার ব্যবস্থা করেছে ঠিকই কিন্তু তার সম্পর্কে কী চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেয়া হবে সে বিষয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে এখনও কিছুই জানায়নি।
ইতোমধ্যে নোবেলজয়ী ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বাধীন অস্থায়ী সরকার শেখ হাসিনার কূটনৈতিক বা অফিশিয়াল পাসপোর্ট প্রত্যাহারের সিদ্ধান্ত নেয়ায় ভারতে এখন তার অবস্থানের বৈধ ভিত্তি আসলে কী, সে প্রশ্নই উঠতে নতুন করে। এই পটভূমিতে দিল্লিতে ভারতের শীর্ষ পর্যায়ের সরকারি কর্মকর্তা ও বিশ্লেষকদের সঙ্গে কথা বলে সংবাদমাধ্যমটি যে আভাস পেয়েছে, তা হলো এই মুহূর্তে শেখ হাসিনাকে নিয়ে নরেন্দ্র মোদির সামনে কার্যত তিনটি ‘অপশন’ বা সমাধানের উপায় রয়েছে।
প্রথম উপায়টি হলো, বাংলাদেশের সদ্য সাবেক প্রধানমন্ত্রীর জন্য তৃতীয় কোনও দেশে আশ্রয়ের ব্যবস্থা করা, যেখানে তিনি নিরাপদে ও সুরক্ষিত পরিবেশে থাকার নিশ্চয়তা পাবেন।
দ্বিতীয় অপশনটা হলো, শেখ হাসিনাকে রাজনৈতিক আশ্রয় বা পলিটিক্যাল অ্যাসাইলাম দিয়ে ভারতেই রেখে দেয়া। ধারণা করে হচ্ছে যেভাবে তিনি এখন সেখানে অবস্থান করছেন।
তৃতীয় উপায়টি হয়তো এখনই বাস্তবায়ন সম্ভব নয়– কিন্তু ভারতে কর্মকর্তা ও পর্যবেক্ষকদের একটা অংশ বিশ্বাস করেন কিছুদিন পরে উপযুক্ত পরিস্থিতি এলে বাংলাদেশে শেখ হাসিনার ‘রাজনৈতিক প্রত্যাবর্তনে’র জন্যও ভারত চেষ্টা করতে পারে। কারণ রাজনৈতিক দল বা শক্তি হিসেবে আওয়ামী লীগ এখনও ফুরিয়ে যায়নি এবং দলের সর্বোচ্চ নেত্রী বা সভাপতি হিসেবে তিনি দেশে ফিরে প্রবীণতম দলটির হাল ধরতেই পারেন, যেমনটি তিনি ১৯৮১ সালে করেছিলেন।
এর মধ্যে ভারতের কাছে অপশন হিসেবে প্রথমটাই যে ‘সেরা’– তা নিয়েও অবশ্য কূটনৈতিক বা থিঙ্কট্যাঙ্ক মহলে কোনও সন্দেহ নেই। কারণ, তিনি ভারতেই রয়ে গেলে সেটা আগামী দিনে দিল্লি-ঢাকা সম্পর্কের ক্ষেত্রে বিরূপ প্রভাব ফেলতে পারে বলে তারা মনে করছেন।
এর পাশাপাশি ভারত-বাংলাদেশ প্রত্যর্পণ চুক্তির আওতায় শেখ হাসিনাকে হস্তান্তরের জন্য ঢাকার কাছ থেকে যদি কোনও অনুরোধ আসে– সেটা যে কোনও না কোনও যুক্তিতে দিল্লি খারিজ করে দেবে তাও একরকম নিশ্চিত। কাজেই শেখ হাসিনাকে বিচারের জন্য বাংলাদেশের হাতে তুলে দেওয়াটাকে ভারতের জন্য কোনও বাস্তবসম্মত ‘অপশন’ বলে পর্যবেক্ষকরা মনে করছেন না।
সুতরাং অন্যভাবে বললে– শেখ হাসিনাকে নিয়ে স্বল্প বা দীর্ঘমেয়াদে ভারতের সামনে উপরে উল্লিখিত তিনটে রাস্তাই খোলা থাকছে। এই প্রতিটি অপশনের ভালোমন্দ, গুণাগণ বা সম্ভাব্যতা কী বা কতটা– এই প্রতিবেদনে সে দিকেই নজর দেয়া হয়েছে।