বিচ্ছিন্নতাবাদী দুই নেতা ২০১৯ সালের ২৯ অক্টোবর লন্ডন থেকে মণিপুরকে স্বাধীন রাষ্ট্র হিসাবে ঘোষণা দেন।
ভারতের উত্তরপূর্বাঞ্চলীয় রাজ্য মণিপুরে নতুন করে সংঘাত-সহিংসতা ছড়িয়ে পড়েছে। দেশটির এই রাজ্যের স্বাধীনতাকামী বিচ্ছিন্নতাবাদী গোষ্ঠীগুলোর সাথে আইনশৃঙ্খলাবাহিনীর সংঘর্ষে গত কয়েক দিনে অন্তত ছয়জনের প্রাণহানি ঘটেছে। চলমান এই সংঘাতে বিচ্ছিন্নতাবাদী গোষ্ঠীগুলোর প্রথমবারের মতো লক্ষ্যব্স্তুতে হামলার জন্য সশস্ত্র ড্রোন ও রকেট ব্যবহার করেছে।
মণিপুর উত্তপ্ত হয়ে ওঠায় সেখানকার বিচ্ছিন্নতাবাদী দুই নেতার স্বাধীনতা ঘোষণার একটি ভিডিও ও ছবি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল হয়ে ছড়িয়েছে। একটি পোস্টকার্ড শেয়ার করে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে অনেকেই দাবি করেছেন, রোববার (৮ সেপ্টেম্বর) ভারত থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে মণিপুরকে আলাদা স্বাধীন রাষ্ট্র হিসাবে ঘোষণা দিয়েছেন বিচ্ছিন্নতাবাদী দুই নেতা।
কার্ডটিতে একটি ছবি-সহ লেখা হয়েছে, ‘‘ভারত থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে স্বাধীনতার ঘোষণা দিয়েছেন মণিপুর রাজ্যের দুই বিদ্রোহী নেতা।’’ পাশাপাশি কার্ডটির ওপর ২০২৪ সালের ৮ সেপ্টেম্বর তারিখ লেখা আছে।
একজন ফেসবুক ব্যবহারকারী ভাইরাল পোস্টকার্ডটি শেয়ার করে লিখেছেন, ‘‘ভারত থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে স্বাধীনতার ঘোষণা দিয়েছেন মণিপুর রাজ্যের দুই বিদ্রোহী নেতা।’’ সরাসরি উল্লেখ না করলেও কার্ডটির ওপরে লেখা ৮ সেপ্টেম্বর তারিখের মাধ্যমে ইঙ্গিত করা হয়েছে, ওই দুই বিদ্রোহী নেতা গতকাল অর্থাৎ রোববার মণিপুরকে স্বাধীন রাষ্ট্র ঘোষণা করেছেন।
ভারতের ইংরেজি দৈনিক ইন্ডিয়া টুডে এই দাবির বিষয়ে ফ্যাক্ট চেক করে দেখেছে, ভাইরাল পোস্টকার্ডের দাবিটি অর্ধসত্য এবং বিভ্রান্তিকর। ওই দুই বিচ্ছিন্নতাবাদী নেতা সম্প্রতি নয়, ২০১৯ সালের ২৯ অক্টোবর লন্ডন থেকে মণিপুরকে স্বাধীন রাষ্ট্র হিসাবে ঘোষণা করেন।
• কোনটা সত্য?
প্রথমত, গত বছর থেকে স্থানীয় মেইতে ও কুকি চিন নামের দুই জনগোষ্ঠীর সংঘাতের জেরে অস্থিতিশীল হয়ে উঠেছে মণিপুর। এমন পরিস্থিতিতে গত ৮ সেপ্টেম্বর ওই রাজ্যের কোনও নেতা ভারত থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে আলাদা মণিপুর রাষ্ট্র ঘোষণা করলে সেই সংক্রান্ত খবর অবশ্যই জাতীয় ও আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত হতো। কিন্তু ইন্ডিয়া টুডে কিওয়ার্ড সার্চে এমন কোনও নির্ভরযোগ্য তথ্য বা প্রতিবেদন খুঁজে পায়নি; যা থেকে প্রমাণ হয় যে সম্প্রতি অর্থাৎ গতকাল মণিপুরের কোনও নেতা স্বাধীনতার ঘোষণা দিয়েছেন।
এরপর ভাইরাল দাবির সত্যতা জানতে পোস্টকার্ডটিতে ব্যবহৃত ছবিটি নিয়ে রিভার্স ইমেজ সার্চ করা হয়। তখন দেখা যায়, ২০১৯ সালের ৩০ অক্টোবর একই ছবি-সহ ভারতের আরেক সংবাদমাধ্যম ইন্ডিয়া টাইমস প্রতিবেদন প্রকাশ করেছিল।
ইন্ডিয়া টাইমসের ওই প্রতিবেদনে বলা হয়, ২৯ অক্টোবর লন্ডনে সংবাদ সম্মেলন করে মণিপুরের মহারাজার পক্ষ থেকে একটি প্রতিনিধি দল ভারত থেকে স্বাধীনতার ঘোষণা দিয়েছেন। মহারাজা সানাজাওয়াবার পক্ষ থেকে এই ঘোষণা দিয়েছেন রাজ্য পরিষদের মুখ্যমন্ত্রী ইয়ামবেন বীরেন ও রাজ্য পরিষদের পররাষ্ট্র ও প্রতিরক্ষাবিষয়ক মন্ত্রী নারেংবম সামারজিত। পৃথক রাষ্ট্র হিসেবে জাতিসংঘের স্বীকৃতি পেতে সেই সময় ব্রিটেনের তৎকালীন রানি দ্বিতীয় এলিজাবেথের কাছে আবেদন করেন ওই নেতারা।
ইন্ডিয়া টুডে বলছে, পরবর্তী সার্চে আমরা ২০১৯ সালের ৩০ অক্টোবর বাংলাদেশি সংবাদমাধ্যম চ্যানেল টোয়েন্টি ফোরের অফিশিয়াল ইউটিউব চ্যানেলে এই সংক্রান্ত একটি ভিডিও প্রতিবেদন দেখতে পাই। ‘‘ভারত থেকে স্বাধীনতার ঘোষণা মনিপুরের’’ শিরোনামের সেই ভিডিও প্রতিবেদনে ওই দুই বিচ্ছিন্নবাদী নেতাকে সাংবাদিক সম্মেলন করে ভারত থেকে আলাদা করে মণিপুরকে স্বাধীন রাষ্ট্র হিসাবে ঘোষণা দিতেও দেখা যায়।
এরপর ২০১৯ সালের ৩ নভেম্বর ভারতীয় দৈনিক হিন্দুস্তান টাইমসে মণিপুরের স্বাধীনতার বিষয়ে একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করা হয়। এতে ওই বিচ্ছিন্নতাবাদী নেতার ভাইরাল ছবি-সহ লেখা হয়েছে, লন্ডন থেকে ভারত-বিরোধী কার্যকলাপ ও মণিপুরকে আলাদা রাষ্ট্র ঘোষণা করার অভিযোগে দুই বিচ্ছিন্নবাদী নেতা ইয়ামবেন বীরেন ও নারেংবম সামারজিতের সব ব্যাংক অ্যাকাউন্ট জব্দ করার নির্দেশ দিয়েছে সরকার। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের বিশেষ সচিব রঘুমণি সিং এই নির্দেশ জারি করে বলেছেন, ওই দুই নেতার অ্যাকাউন্ট জব্দ করা না হলে তারা এর মাধ্যমে ভারত-বিরোধী কার্যকলাপে অর্থ ব্যবহার করতে পারেন।
ইন্ডিয়া টুডে বলেছে, এসব প্রতিবেদনের মাধ্যমে এটা প্রমাণ হয় যে, ২০২৪ সালের ৮ সেপ্টেম্বর নয়; বরং ২০১৯ সালের ২৯ অক্টোবর লন্ডন থেকে মণিপুরকে স্বাধীন রাষ্ট্র ঘোষণা করেন বিচ্ছিন্নতাবাদী দুই নেতা।
• দাবি
২০২৪ সালের ৮ সেপ্টেম্বর ভারত থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে মণিপুরকে আলাদা স্বাধীন রাষ্ট্র হিসাবে ঘোষণা করেছেন বিচ্ছিন্নতাবাদী দুই নেতা।
• সিদ্ধান্ত
গত ৮ সেপ্টেম্বর নয়, বরং ওই দুই বিচ্ছিন্নতাবাদী নেতা ২০১৯ সালের ২৯ অক্টোবর লন্ডন থেকে মণিপুরকে স্বাধীন রাষ্ট্র হিসাবে ঘোষণা করেন।
সূত্র: ইন্ডিয়া টুডে।