26 C
Dhaka
Thursday, November 21, 2024

মৃত ভেবে আমাকে কম্বল দিয়ে ঢেকে রেখে চলে যায়’

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে শত শত শিক্ষার্থীর নিহতের ঘটনায় ঘরে বসে থাকতে পারেন না গার্মেন্টস শ্রমিক নবী হোসেন (২০)। আন্দোলনে গিয়ে আহত হন তিনি। দেন ভয়াবহ বর্ণনা।

নবী হোসেন নেত্রকোনা বারহাট্টা উপজেলা বাউসী ইউনিয়নের দেউপুর গ্রামের নসর জামালের ছেলে।

গাজীপুরে গত ৪ আগস্ট আন্দোলনে অংশগ্রহণ করে নিজের শরীরে গুলি নিয়ে দেশের মানুষকে স্বৈরাচার থেকে মুক্ত করার অংশীদার হয়েছেন তিনি।

২২ আগস্ট বুকের সেলাই খুলতে ও একটু ভালো চিকিৎসা পেতে বারহাট্টা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে যান। কর্তব্যরত চিকিৎসক তার শরীর দেখে বলেন তার শরীরে অনেক গুলি ঢুকে আছে। এগুলো এখানে বের করা সম্ভব না। গুলি বের না করলে তিনি সুস্থ হবেন না।

৪ তারিখের বিভীষিকার বর্ণনা দিতে গিয়ে নবী হোসেন বলেন, আমি ছাত্রদের ওপর অন্যায়ভাবে গুলি করা হচ্ছে দেখে ঘরে থাকতে পারিনি। আমি তাদের দাবির সঙ্গে একাত্মতা পোষণ করে আন্দোলনে অংশ নিই। গাজীপুর এলাকায় আমরা জমায়েত হলে পুলিশ বাহিনী আমার ওপর এলোপাতাড়ি গুলি করে। আমি গুলিবিদ্ধ হয়ে রক্তাক্ত হয়ে মাটিতে পড়ে যাই। তখন ৮/৯ জন পুলিশ মিলে আমাকে এলোপাতাড়ি মারপিট করে। একপর্যায়ে আমার হাতের আঙুলে বুকে ও পায়ে বুট জুতা দিয়ে আঘাত করে।

আরও পড়ুনঃ  রাষ্ট্রধর্ম নিয়ে শায়খ আহমাদুল্লাহর স্ট্যাটাস

তিনি বলেন, একজন পুলিশ আমার বুকের উপর দাঁড়িয়ে মুখ দিয়ে রক্ত বের করে ফেলে। এভাবে আমার ওপর দেড় ঘণ্টার মতো আঘাত করা হয়। এরপর তারা আমাকে মৃত ভেবে একটি কম্বল দিয়ে ঢেকে রাখে। একপর্যায়ে আমার জ্ঞান ফিরলে আশপাশে মানুষের যাতায়াত অনুমান করে চিৎকার দিলে তারা আমাকে উদ্ধার করে জয়দেবপুর হাসপাতালে নিয়ে যায়। সেখানে তারা আমার চিকিৎসা না করে ভয় দেখিয়ে বিদায় করে দেয়। তখন আমার বড় ভাই জামাল হোসেন ঢাকা উত্তরা প্রাইভেট হাসপাতালে নিয়ে যায়। সেখানে আমাকে দুদিন আইসিউতে রাখে। এই দুদিনে মোটা অঙ্কের বিল পরিশোধে অপারগতা প্রকাশ করলে ৫০ হাজার টাকা দিয়ে ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চলে আসি। এই পর্যন্ত আমার প্রায় ২ লাখ টাকা খরচ হয়ে গেছে।

আরও পড়ুনঃ  বাংলাদেশে রোজা শুরুর সম্ভাব্য তারিখ

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে নবী হোসেনের ছবি পোস্ট করা হলে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী বারহাট্টা উপজেলা শাখার নেতারা তাকে নগদ অর্থ সহায়তা দিয়ে চিকিৎসার আশ্বাস দেন। গত ২ সেপ্টেম্বর নবী হোসেনকে ঢাকা সিএমএইস এ ভর্তি করে।

বারহাট্টা উপজেলা জামায়াতে ইসলামীর সাধারণ সম্পাদক বলেন, আমরা নবী হোসেনকে ১০ হাজার টাকা অর্থ সহায়তা ও ঢাকায় উন্নত চিকিৎসার ব্যবস্থা করেছি।

নবী হোসেনের বড় ভাই জামাল হোসেন বলেন, এখানে (সিএমএইস) নিয়ে আসার পর ডাক্তার বলেছে আমার ভাইয়ের পেটে ইনফেকশন হয়ে গেছে। ৬ সেপ্টেম্বর আমার ভাইয়ের পেটে অপারেশন করা হয়েছে। আজ ১২ সেপ্টেম্বর তাকে ছুটি দিয়ে দিয়েছে। আমরা আজ বাড়িতে চলে যাব।

আরও পড়ুনঃ  জান্নাতে হুরদের চেয়েও বহুগুণে সুন্দরী হবেন যারা

বারহাট্টা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ফারজানা আক্তার ববি বলেন, ১১ সেপ্টেম্বর নবী হোসেনের পরিবারের কাছে বারহাট্টা উপজেলা প্রশাসন থেকে ২০ হাজার ও জেলা প্রশাসক থেকে ১০ হাজার টাকা প্রদান করা হয়েছে। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে অংশগ্রহণকারীদের তালিকা ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে পাঠিয়েছি।

সর্বশেষ সংবাদ
জনপ্রিয় সংবাদ