শেখ হাসিনার সরকারের পতনের পর থেকে বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যকার সম্পর্ক নিয়ে চলছে নানা আলোচনা। এরমধ্যে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে ভারতে আশ্রয় নেয়া হাসিনাকে বিচারের জন্য বাংলাদেশে ফেরত পাঠানো বা তার প্রত্যর্পণের বিষয়টি। কেউ কেউ বলছেন, শেখ হাসিনার ভাগ্যের (দেশে ফেরত পাঠানো কিংবা না পাঠানো) ওপরই অনেকটা নির্ভর করছে ঢাকা-নয়াদিল্লি সম্পর্কের ভবিষ্যৎ।
সম্প্রতি এ নিয়ে এক প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে জার্মান সংবাদমাধ্যম ডয়চে ভেলে। এতে বলা হয়েছে, বিচারের মুখোমুখি করার জন্য বাংলাদেশে দিন দিন শেখ হাসিনাকে প্রত্যর্পণের দাবি জোরালো হচ্ছে।
আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের চিফ প্রসিকিউটর অ্যাডভোকেট মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম সম্প্রতি শেখ হাসিনাকে ভয়াবহ সহিংসতার জন্য দায়ী ‘প্রধান অপরাধী’ হিসেবে অভিহিত করেছেন।
সাংবাদিকদের তিনি বলেছেন,
ভারতের সঙ্গে বাংলাদেশের একটি অপরাধী প্রত্যর্পণ চুক্তি রয়েছে, যা ২০১৩ সালে স্বাক্ষরিত হয়েছিল, যখন শেখ হাসিনার সরকার ক্ষমতায় ছিল। যেহেতু তাকে (শেখ হাসিনা) বাংলাদেশে গণহত্যার প্রধান আসামি করা হয়েছে, আমরা তাকে আইনিভাবে দেশে ফিরিয়ে এনে বিচারের মুখোমুখি করার চেষ্টা করব।
ভারত সরকার শেখ হাসিনার অবস্থান সম্পর্কে বিস্তারিত কিছু না জানালেও, তিনি একটি ‘নিরাপদ জায়গায়’ আছেন বলে ধারণা করা হচ্ছে। বাংলাদেশের নতুন অন্তর্বর্তী সরকার এরমধ্যেই হাসিনার কূটনৈতিক পাসপোর্ট বাতিল করেছে।
হাসিনাকে ‘চুপ’ থাকার পরামর্শ
সরকারবিরোধী বিক্ষোভের সময় ‘হত্যা ও ভাঙচুরের সঙ্গে জড়িতদের শনাক্ত করে শাস্তি’ দেয়ার দাবি জানিয়ে ১৩ আগস্ট ভারতে বসে একটি বিবৃতি দিয়েছিলেন শেখ হাসিনা।
যুক্তরাষ্ট্রে অবস্থানরত তার ছেলের (সজীব ওয়াজেদ জয়) মাধ্যমে প্রকাশিত ওই বিবৃতিতে শেখ হাসিনা ১৫ আগস্টকে জাতীয় শোক দিবস হিসেবে পালনের জন্য বাংলাদেশের জনগণের প্রতি আহ্বান জানান।
তবে ভারতে বসে শেখ হাসিনার এমন কার্যকলাপ নিয়ে প্রতিক্রিয়া জানান অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান ড. মুহাম্মদ ইউনূস। তিনি হাসিনার মন্তব্যকে ‘সমস্যাজনক’ বলে বর্ণনা করেছেন।
ভারতীয় বার্তা সংস্থা পিটিআইকে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে প্রধান উপদেষ্টা বলেন,
ভারতে কেউই তার (শেখ হাসিনার) অবস্থানে স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করছে না। কারণ আমরা তাকে ফেরাতে চাই। তিনি ভারতে আছেন এবং মাঝে মাঝে তিনি কথা বলছেন, যা সমস্যার। তিনি চুপ থাকলে আমরা ভুলে যেতাম; মানুষ এটাকে ভুলে যেত। কিন্তু ভারতে বসে তিনি কথা বলছেন, নির্দেশ দিচ্ছেন। কেউ এটা পছন্দ করছে না।
পিটিআইকে তিনি আরও বলেন, ‘এটা আমাদের বা ভারতের জন্য ভালো নয়। এ নিয়ে অস্বস্তি রয়েছে।’
‘নিরাপদ’ স্থানান্তরের আশা
সাবেক কূটনীতিক এবং শিক্ষাবিদরা ডয়চে ভেলেকে বলেছেন, ঢাকা শেখ হাসিনাকে ফিরিয়ে দেয়ার আবেদন করলেও তা হয়তো প্রত্যাখ্যান করবে নয়াদিল্লি।