ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ভারতে অবস্থানের ৪৫ দিন অতিবাহিত হয়ে গেছে। দুই দেশের মধ্যে বিদ্যমান ব্যবস্থায় কূটনৈতিক পাসপোর্টধারীরা (লাল পাসপোর্ট) ভিসা ছাড়াই পরস্পরের দেশে যেতে পারেন।
তারা ৪৫ দিন পর্যন্ত অবস্থান করতে পারেন। তবে ৪৫ দিনের সময়সীমা পেরিয়ে যাওয়ায় তিনি এখন আর ভারতে অবস্থানের কূটনৈতিক দায়মুক্তি পাবেন না। এখন তিনি দিল্লির ‘রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত’ মোতাবেক ভারতে আছেন। মানবিক কারণ বিবেচনায় তাকে আশ্রয় দিয়েছে ভারত।
শেখ হাসিনা কিসের ভিত্তিতে ভারতে অবস্থান করছেন-সে সম্পর্কে দিল্লির তরফ থেকে প্রকাশ্যে কোনো ব্যাখ্যা দেওয়া হয়নি। যদিও দিল্লি বলছে, ভারতের কূটনৈতিক সম্পর্ক হবে অন্তর্বর্তী সরকারের সঙ্গে।
ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী সুব্রামনিয়াম জয়শঙ্কর বলেছেন, ‘আমরা যে সরকার ক্ষমতায় (গভর্নমেন্ট অব দ্য ডে) থাকে, তার সঙ্গে কাজ করি’। শেখ হাসিনা যে ভারতে আছেন, সেটা স্বীকার করলেও কিসের ভিত্তিতে তিনি আছেন সে সম্পর্কে দিল্লির তরফে কিছুই বলা হয়নি।
তবে বিশ্লেষকরা মনে করেন, শেখ হাসিনা ভারতের ঘনিষ্ঠ বন্ধু হিসাবে পরিচিত। এ কারণে তাকে মানবিক বিবেচনায় আশ্রয় দিয়েছে বলে দৃশ্যত মনে হচ্ছে। ১৯৫৯ সালে চীন তিব্বত অধিগ্রহণ করলে দালাইলামাকে ভারত আশ্রয় দিয়েছিল।
১৯৯২ সালে আফগানিস্তানের ভারতপন্থি নেতা মোহাম্মদ নজিবুল্লাহকে আশ্রয় দিয়েছিল ভারত। ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে পরিবারের অধিকাংশ সদস্যসহ হত্যা করা হলে শেখ হাসিনা ও শেখ রেহানাকে ভারতে আশ্রয় দিয়েছিলেন তদানীন্তন প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধী। ১৯৮১ সালে বাংলাদেশে ফিরে আসার পূর্ব পর্যন্ত শেখ হাসিনা ভারতে আশ্রিত ছিলেন।
কোন আইনে ভারত শেখ হাসিনাকে আশ্রয় দিয়েছে এমন প্রশ্নের জবাবে বাংলাদেশের পররাষ্ট্র উপদেষ্টা মো. তৌহিদ হোসেন বলেছেন, ‘সবকিছু আইন দিয়ে চলে না’।
তিনি আরও বলেন, ‘শেখ হাসিনা ভারতে অবস্থান করে রাজনৈতিক কথাবার্তা বলছেন। এটা অস্বস্তিকর।’ বিষয়টি ভারত সরকারকে অন্তর্বর্তী সরকার জানিয়েছে বলেও তিনি উল্লেখ করেন।
বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে প্রত্যর্পণ চুক্তি আছে। ২০১৩ সালে শেখ হাসিনার সরকারই চুক্তিটি সই করেছিল। এই চুক্তির আওতায় অন্তর্বর্তী সরকার ইচ্ছা করলে শেখ হাসিনাকে ফেরত চাইতে পারে।
এদিকে, লন্ডনভিত্তিক দ্য ফাইন্যান্সিয়াল টাইমস এক প্রতিবেদনে বলেছে, শেখ হাসিনা ভারতের একটি সেফহোমে আছেন। সেখানকার অভিজাত পার্ক লোদি গার্ডেনে তাকে হাঁটতে দেখা গেছে। তার কন্যা সায়মা ওয়াজেদও তার সঙ্গে ছিলেন। তার আরও কয়েকজন সঙ্গীকেও তার সঙ্গে হাঁটতে দেখা গেছে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার আঞ্চলিক পরিচালকের দায়িত্বে আছেন সায়মা। এর আঞ্চলিক অফিস দিল্লিতে অবস্থিত।