পুরান ঢাকার ঐতিহ্যবাহী শিক্ষা প্রতিষ্ঠান কবি নজরুল সরকারি কলেজ শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি-সাধারণ সম্পাদকসহ একাধিক নেতার বিরুদ্ধে দুই লাখের অধিক টাকা বাকি খেয়ে লাপাত্তা হওয়ার অভিযোগ দোকানীদের। স্বল্প পুঁজির ব্যবসায়ীরা ব্যবসা চালিয়ে যাওয়া নিয়ে শঙ্কা।
আওয়ামী লীগ সরকারের দীর্ঘ ১৫ বছরে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে দখলদারিত্ব ও আধিপত্য বিস্তারে সবচেয়ে বড় ভূমিকা ছিল দলটি ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠন বাংলাদেশ ছাত্রলীগের। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে বিরোধীমতের শিক্ষার্থী ও শিক্ষকদের দমন-নিপীড়নের পাশাপাশি ক্যাম্পাসগুলোর সামনের রাস্তা-ঘাট থেকে চাঁদাবাজি-ছিনতাই ও লুটপাটের সংস্কৃতি তাদের হাতে ছিল গত ১৫ বছর যাবত। এসময় তারা ক্যাম্পাস গুলোর আশেপাশের দোকানগুলোতে বাকি খেয়েছে লাখ লাখ টাকার। গত ৫ আগস্ট সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দেশত্যাগের পরপরই পালিয়ে যায় কবি নজরুল সরকারি কলেজ ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা। এরপর আর তাদের ক্যাম্পাসে দেখা যায়নি।
অভিযোগ রয়েছে বিভিন্ন দোকানে দুই লাখেরও বেশি টাকা বাকি খেয়ে উধাও হয়ে গেছে কলেজ শাখা ছাত্রলীগ নেতাকর্মীরা। এরমধ্যে বেশিরভাগ টাকা বাকি রয়েছে ক্যাম্পাসের আশপাশের খাবার হোটেলগুলোতে। বাদবাকি চা-সিগারেটের দোকানে। ক্যাম্পাসের প্রধান ফটকের অন্তত ২০টি দোকানের বাকির হিসাব থেকে এ তথ্য উঠে এসেছে। ক্যাম্পাসে থাকাকালে বিভিন্ন সময় খেয়ে তারা টাকা বাকি রাখতো বলে অভিযোগ দোকানীদের।
ক্যাম্পাসের পাশের প্রায় সকল দোকানের বাকির খাতায় নাম আছে ছাত্রলীগ নেতা ইমরান হোসেন বাবু, কাজী ইব্রাহীম, মেহেদী হাসান পলাশ, আনোয়ার, অমিত পাল, রাকিবসহ একাধিক নেতা-কর্মীদের।
বাহাদুর শাহ পার্ক এলাকার একাধিক দোকানদারের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, খাবার হোটেল ও চা-সিগারেটসহ অন্য দোকানগুলোতে ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীদের বাকি রয়েছে ২ লাখ ৮ হাজার ৭শত ১১ টাকা। এর মধ্যে চা-সিগারেটের দোকানে বাকি ৫৩ হাজার ৫০০ টাকা। আর খাবার হোটেলে ১ লাখ ৫৫ হাজার ২১১ টাকা বাকি রয়েছে।
কলেজের প্রধান ফটকের পাশে ফয়সাল হোটেলে ১৮ হাজার ৮৮০ টাকা ও রজ্জব আলীর হোটেলে ১ লাখ ৩৬ হাজার ৩৩১ টাকা বাকি রয়েছে। হোটেল গুলোর বকেয়া খাতা হিসাব করে এ তথ্য জানা গেছে।
এ বিষয়ে হোটেল ব্যবসায়ী ফয়সাল বলেন, আমার স্বল্প পুঁজি নিয়ে আমি ব্যবসা করি। এর মধ্যে যদি এত টাকা বাকি রেখে কেউ লাপাত্তা হয়ে যায় তাহলে আমাদের ব্যবসার অবস্থা কি হয় বুঝতে পারেন আপনারাই। আমরা চাই আগামী দিনে চাঁদা মুক্ত ও নিরাপদ ব্যবসার পরিবেশ।
এ বিষয়ে ক্যাম্পাসের পাশের সাইফুল চা স্টোরের সাইফুল জানান, তার দোকানের প্রায় ৪০ হাজার টাকা বাকি খেয়েছে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা। ৪ আগস্ট প্রধান ফটকের সামনের চায়ের দোকানে বাকি খেয়েছে ২হাজার ৬০০ টাকা। অন্য আরো দুটি দোকান থেকে বাকি খেয়েছে ৫হাজার ৯০০ টাকা। ডিম দোকানে প্রায় ৫হাজার টাকা বাকি ছাত্রলীগ নেতা-কর্মীদের।
দোকানিরা বলেন, তারা ইচ্ছে মতো বাকি খেতো। টাকা চাইলে শুধু নতুন তারিখ দিতো। আবার অনেক সময় দোকান বন্ধ করে দেওয়ার হুমকি দিতো। এজন্য ভয়ে তারা মুখ খুলতে পারতেন না। তারা আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সহযোগিতা চেয়েছেন।
ছাত্রলীগ নেতাদের সঙ্গে ফোনে কথা হয় কিনা এ প্রশ্নের জবাবে দোকানীরা বলেন, অধিকাংশের মোবাইলে ফোন দিলে ফোন বন্ধ পাওয়া যায়। যোগাযোগ করতে না পেরে হা-হুতাশ করছেন ছোট এই ব্যবসায়ীরা।
ক্যাম্পাসের পুরোনো ব্যবসায়ী ফয়সাল হোটেলের মালিক ফয়সাল হোসেন বলেন, অনেক কষ্টে এই হোটেল চালু করেছিলাম। ছাত্রলীগের বাকির চাপে শেষ আমরা। এখনতো বাকির কোন টাকাই পাবো না।
হোটেল ব্যবসায়ী রজ্জব আলী বলেন, আমার দোকানে সবচেয়ে বেশি বাকিতে খাবার খেয়েছে। এত টাকা বাকি থাকলে সামনে ব্যবসা করব কিভাবে? একেবারে নিঃস্ব হয়ে গেছি। তাদের বিচার আল্লাহ করবে।