গত কয়েক সপ্তাহে হিজবুল্লাহর ওপর ইসরাইলের কয়েক দফা আক্রমণ লেবাননের সশস্ত্র গোষ্ঠীটির নিরাপত্তা ব্যবস্থা প্রশ্নের মুখে ফেলেছে। তাদের অস্ত্রের সাইটগুলো ধ্বংস,যোগাযোগ ডিভাইসে হামলা এবং সবশেষ তাদের প্রধান হাসান নাসরুল্লাহকে হত্যার মধ্য দিয়ে সশস্ত্র গোষ্ঠীটর গভীরে চিরশত্রু ইসরাইলের সুক্ষ্ম অনুপ্রবেশ ঘটেছে বলে মনে করা হচ্ছে।
হিজবুল্লাহর ওপর দফায় দফায় ইসরাইলের হামলায় লেবাননের
শত শত পেজার এবং ওয়াকিটকিতে মারাত্মক বিস্ফোরণের এক সপ্তাহ পরে হিজবুল্লাহ নেতা নাসরুল্লাহ হত্যার ঘটনা ঘটল।
শুক্রবার (২৭ সেপ্টেম্বর) হিজবুল্লাহর সদর দফতরে বিমান থেকে বিশেষ ধরনের বোমা হামলা চালিয়ে হত্যা করা হয় লেবাননের এই ধর্মীয় নেতাকে। একইসঙ্গে গোষ্ঠীটির গোয়েন্দা প্রধানকেও হত্যা করা হয়। এর মধ্যদিয়ে হিজবুল্লাহর নেতৃত্ব দুর্বল এবং এর শীর্ষ সামরিক কমান্ড অনেকটাই ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
নাসরুল্লাহ হত্যাকাণ্ডের কয়েক ঘন্টা পরে রয়টার্স লেবানন, ইসরাইল, ইরান ও সিরিয়ার বেশ কয়েকটি সূত্রের সঙ্গে কথা বলে। যারা নাম প্রকাশ না করার শর্তে শক্তিশালী শিয়া আধাসামরিক গোষ্ঠীটির সরবরাহ লাইনসহ অন্যান্য ক্ষতির বিশদ বিবরণ দিয়েছেন।
হামলার ২৪ ঘন্টারও কম সময় আগে ইসরাইলি চিন্তাধারার সাথে পরিচিত একটি সূত্র রয়টার্সকে বলেছে, ইসরাইল হিজবুল্লাহর গভীরে অনুপ্রবেশ করতে এবং নাসরুল্লাকে যখন ইচ্ছা হত্যা করার পরিকল্পনা নিয়ে ২০ বছর গোয়েন্দা তৎপরতা চালিয়েছে। তিনি বিশদ বিবরণ না দিয়ে এই গোয়েন্দা তৎপরতাকে ‘ব্রিলিয়ান্ট’ বলে অভিহিত করেছেন।
বুধবার (২৫ সেপ্টেম্বর) নাসরুল্লাহকে হত্যার অনুমোদন দেন ইসরাইলের প্রধানমন্ত্রী বেনইয়ামিন নেতানিয়াহু এবং তার ঘনিষ্ঠ মন্ত্রীরা। দুই ইসরাইলি কর্মকর্তা রয়টার্সকে এ তথ্য জানিয়েছেন। নেতানিয়াহু জাতিসংঘের সাধারণ অধিবেশনে বক্তৃতার জন্য নিউইয়র্কে থাকাকালীন এই হামলার ঘটনা ঘটে।
২০০৬ সালের যুদ্ধের পর থেকে নাসরুল্লাহ জনসমক্ষে উপস্থিত হওয়া এড়িয়ে চলছিলেন। নাসরুল্লাহর নিরাপত্তা ব্যবস্থার সাথে পরিচিত একটি সূত্রের মতে, তিনি দীর্ঘদিন ধরে এই বিষয়ে সজাগ ছিলেন যে ইসরাইল তার ওপর হামলা চালাতে পারে। এছাড়া তার চলাফেরা সীমিত ছিল এবং তিনি যে লোকদের সঙ্গে মিশতেন তার পরিসরও খুবই ছোট ছিল। এই হত্যাকাণ্ডটি এই বার্তা দেয় যে তার দলটির মধ্য থেকেই এমন কেউ ছিল যে বা যারা ইসরাইলকে গোপনে তথ্য দিত।
১৭ সেপ্টেম্বরের পেজার বিস্ফোরণের পর থেকে হিজবুল্লাহ নেতা স্বাভাবিকের চেয়ে আরও বেশি সতর্ক ছিলেন। এই উদ্বেগ থেকে যে, ইসরাইল তাকে হত্যা করার চেষ্টা করবে। একটি নিরাপত্তা সূত্র রয়টার্সকে এক সপ্তাহ আগে কমান্ডারদের অন্ত্যেষ্টিক্রিয়ায় তার অনুপস্থিতির বরাত দিয়ে এ কথা জানিয়েছে।
এদিকে হিজবুল্লাহর মিডিয়া অফিস এই ঘটনায় মন্তব্যের জন্য রয়টার্সের অনুরোধে সাড়া দেয়নি। অন্যদিকে মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন শনিবার নাসরুল্লাহর হত্যাকে ‘ন্যায়বিচার’ বলে অভিহিত করেছেন এবং বলেছেন, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ইরান-সমর্থিত গোষ্ঠীগুলোর বিরুদ্ধে আত্মরক্ষার জন্য ইসরাইলের অধিকারকে পুরোপুরি সমর্থন করছে।
গত শুক্রবার (২৭ সেপ্টেম্বর) রাজধানী বৈরুতের ভূগর্ভস্থ সদর দফতরে ইসরাইল ভয়াবহ হামলা চালালে নিহত হন হিজবুল্লাহপ্রধান হাসান নাসরুল্লাহ। পরদিন শনিবার বৈরুতের দাহিহ জেলায় হামলা চালিয়ে হিজবুল্লাহর গোয়েন্দা বিভাগের প্রধান হাসান খলিল ইয়াসিনকে হত্যা করে ইসরাইল।
সূত্র: রয়টার্স