জামালপুরের মাদারগঞ্জে নাশকতার মামলার প্রধান আসামিকে নিয়ে পূজামণ্ডপ পরিদর্শন করেছেন মাদারগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ফাইযুল ওয়াসীমা নাহাত ও মাদারগঞ্জ মডেল থানার অফিসার ইনচার্জ শাহিনুর আলম। এ সময় তাদের সঙ্গে ছিলেন এসিল্যান্ড সায়েদা খানম লিজা, উপজেলা প্রশাসনের কয়েকজন কর্মকর্তা। এমন ছবি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে তোলপাড় সৃষ্টি হয়েছে জেলা জুড়ে। এ নিয়ে ক্ষোভ শুরু হয়েছে জনমনে। সচেতন মহলে চলছে নানা আলোচনা ও সমালোচনা।
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, গত ২ সেপ্টেম্বর উপজেলা বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক ও সিধুলী ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতি মিজানুর রহমান রতন বাদী হয়ে মাদারগঞ্জ মডেল থানায় একটি নাশকতার মামলা করেন। ওই মামলায় মাদারগঞ্জ উপজেলার সিধুলী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ও ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি মাহবুব আলম মিরনকে প্রধান আসামি করে ৫৩ জনের নাম উল্লেখ ও ৩০ থেকে ৪০ জনকে অজ্ঞাত আসামি করা হয়। এ মামলায় এখন পর্যন্ত পুলিশ এজাহারভুক্ত একজন ও অজ্ঞাতনামা আরও ১৪ জন আসামিকে গ্রেপ্তার করেছে। গ্রেপ্তার ব্যক্তিরা জামালপুর কারাগারে।
ইউএনও মাদারগঞ্জ জামালপুর ফেসবুক আইডিতে দেখা যায়, উপজেলার সিধুলী ইউনিয়নের মাল্লাবাড়ী, পাল চৌধুরী, মোধক বাড়ি মন্দিরসহ কয়েকটি মন্দিরে নাশকতার মামলার প্রধান আসামি মিজানুর রহমান রতনকে নিয়ে পূজামণ্ডপ পরিদর্শন করার ছবি বৃহস্পতিবার (১০ অক্টোবর) রাত ৮টা ৪০ মিনিটে পোস্ট করা হয়। ছবিতে এসিল্যান্ড সায়েদা খানম লিজা, মাদারগঞ্জ মডেল থানার অফিসার ইনচার্জ শাহিনুর আলম, উপজেলা তথ্য কর্মকর্তা দীপা খাতুন, সমাজ সেবা কর্মকর্তা তৌফিকুল ইসলাম খালেক, উপজেলা এলজিইডি প্রকৌশলী গোলাম কিবরিয়া তমাল, উপজেলা পল্লী উন্নয়ন কর্মকর্তা রহুল আমীনকে দেখা যায়।
এক ছবিতে দেখা গেছে মাদারগঞ্জ থানার অফিসার ইনচার্জ শাহিনুর আলমের পাশেই বসা এবং কয়েকটি ছবিতে দেখা গেছে ইউএনও ও অন্যান্য কর্মকর্তার পাশেই দাঁড়ানো নাশকতা মামলার প্রধান আসামি সিধুলী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ও ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি মাহবুব আলম মিরন।
স্থানীয় আওয়ামী লীগের কয়েকজন নেতা জানান, এই মামলার এজাহারে নাম নেই এমন ১৪ জনকে গ্রেপ্তার করে কারাগারে পাঠানো হয়েছে। তাই গ্রেপ্তারের ভয়ে পালিয়ে বেড়াচ্ছেন তারা। অথচ প্রধান আসামিকে সঙ্গে নিয়ে প্রশাসনের কর্তা-ব্যক্তিরা ঘুরে বেড়াচ্ছেন।
মামলার বাদী উপজেলা বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক ও সিধুলী ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতি মিজানুর রহমান রতন জানান, ইউএনও মামলা সম্পর্কে আগে থেকেই জানেন। চেয়ারম্যানকে তিনি ভালোভাবেই চেনেন। এরপরও তিনি তার গাড়িতে তুলে বিভিন্ন পূজামণ্ডপ পরিদর্শন করেছেন। তিনি মামলার আসামিকে দ্রুত গ্রেপ্তারের দাবি জানান।
এ বিষয়ে সিধুলী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ও ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি মাহবুব আলম মিরন জানান, তার বিরুদ্ধে মামলার বিষয়টি তিনি জানেন। তবে তার চলাফেরায় কোনো সমস্যা হচ্ছে না।
মাদারগঞ্জ মডেল থানার অফিসার ইনচার্জ শাহেনুর আলম বলেন, তিনি থানায় নতুন যোগদান করেছেন। সবাইকে ভালোভাবে চেনেন না। তবে পূজা শেষে বিশেষ অভিযান চালিয়ে ওই আসামিকে গ্রেপ্তার করবেন বলে জানান তিনি।
আরও পড়ুন: ট্রাভেল কার্ড ইস্যু ও ঠেকানো নিয়ে যা জানালেন পররাষ্ট্র উপদেষ্টা
এ বিষয়ে মাদারগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী অফিসার ফাইযুল ওয়াসীমা নাহাত জানান, সিধুলী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ও ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি মাহবুব আলম মিরন যে মামলার আসামি তা তিনি জানতেন না। তাছাড়া তার সঙ্গে তো থানার ওসি ছিলে।
এদিকে জামালপুর জেলা প্রশাসক হাসিনা বেগম সাংবাদিকদের বলেছেন, বিষয়টি তিনি জেনেছেন। এ ব্যাপারে এডিসি জেনারেলকে খোঁজ খবর নিতে বলেছেন। আলোচনা করে কি করা যায় সিদ্ধান্ত নেবেন।