ঐতিহাসিক ৭ মার্চ, ১৫ আগস্ট জাতীয় শোক দিবসসহ আট জাতীয় দিবস বাতিলে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের উপদেষ্টা পরিষদের সিদ্ধান্ত ও বক্তব্যের নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়েছে জার্মান আওয়ামী লীগ। বৃহস্পতিবার (১৬ অক্টোবর) জার্মান আওয়ামী লীগ প্রকাশিত এক প্রতিবাদলিপিতে এ তথ্য জানানো হয়।
উপদেষ্টা নাহিদ ইসলামকে অবিলম্বে অপসারণ করে আইনের আওতায় আনার দাবি জানিয়ে প্রতিবাদলিপিতে বলা হয়, জার্মান আওয়ামী লীগ বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের কাছে অনতিবিলম্বে ৭ই মার্চের ঐতিহাসিক জাগরণের ভাষণ দিবস, ১৭ই মার্চের শিশু দিবস এবং ১৫ই আগস্ট শোক দিবসসহ বাংলাদেশের মহান মুক্তিযুদ্ধের সাথে সম্পর্কিত ৮টি জাতীয় দিবস বাতিল করার সিদ্ধান্ত রদ ও রহিত করার জোর দাবি জানায়। একইসাথে ১৯৭১ সালের মহান মুক্তিযুদ্ধের চেতনাবিরোধী বক্তব্য প্রদান, মহান মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস বিকৃতি ও বাঙালি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে জাতির পিতা হিসেবে অস্বীকার করে অবমাননামূলক বক্তব্য প্রদানের কারণে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের উপদেষ্টা নাহিদ ইসলামকে অবিলম্বে অপসারণ করে আইনের আওতায় নিয়ে এসে বিচারের সম্মুখীন করারও দাবি জানায়।
প্রতিবাদলিপিতে বলা হয়, জার্মান আওয়ামী লীগ গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের বর্তমান অবৈধ ও অসাংবিধানিক সরকার গঠনের পর থেকেই লক্ষ্য করছে যে, এই ক্ষমতা দখলকারী সরকার বাংলাদেশের মহান মুক্তিযুদ্ধ, মুক্তিযুদ্ধের চেতনা, মুক্তিযুদ্ধের গৌরবোজ্জ্বল স্মৃতিসমূহ ও মহান মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণকারী বীর মুক্তিযোদ্ধাদের বর্তমান প্রজন্মের সামনে প্রতিপক্ষ হিসেবে দাঁড় করাতে প্রয়োজনীয় সকল পরিকল্পনাই গ্রহণ করছে। তাদের এই হীন প্রচেষ্টা এতটাই ঘৃণ্য পর্যায়ে চলে গিয়েছে যে, বর্তমানে কেউ প্রকাশ্যে ‘জয় বাংলা’ স্লোগান দিলেও তাকে শারীরিকভাবে লাঞ্ছনা ও নির্যাতনের শিকার হতে হচ্ছে।
উপদেষ্টা নাহিদ ইসলামের বক্তব্যের করা উল্লেখ করে এতে বলা হয়, চলমান এই পরিস্থিতিতে সম্প্রতি জার্মান আওয়ামী লীগ অত্যন্ত উদ্বেগের সাথে প্রত্যক্ষ করছে, বাংলাদেশের বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকার ৭ মার্চ, ১৭ মার্চ ও ১৫ আগস্টসহ বাংলাদেশের মহান মুক্তিযুদ্ধের সাথে সংশ্লিষ্ট ৮টি জাতীয় দিবস বাতিল করেছে। এবং উক্ত দিবসসমূহ বাতিল সংক্রান্ত বিষয়ে সাংবাদিকদের সামনে দেওয়া বক্তব্যে বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের একজন উপদেষ্টা নাহিদ ইসলাম গত ১৬ অক্টোবর বাংলাদেশের ১৯৭১ সালের মহান মুক্তিযুদ্ধের চেতনাবিরোধী বক্তব্য প্রদানের মধ্য দিয়ে মহান মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস বিকৃতি করার পাশাপাশি বাঙালি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে জাতির পিতা হিসেবে স্বীকৃতি দিতে দম্ভের সাথে অস্বীকৃতি জানান।
এতে আরও বলা হয়, ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধে বাংলাদেশের স্বাধীনতা অর্জন এবং সার্বভৌম একটি রাষ্ট্র হিসেবে বাংলাদেশের প্রতিষ্ঠার নেতৃত্ব প্রদান করেছেন শতবর্ষের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। এই সুদীর্ঘ কণ্টক বিস্তীর্ণ পথে তাঁর বিশ্বস্ত সহযাত্রীবৃন্দ, দেশের স্বাধীনতাকামী ছাত্র-জনতা ও তাঁর পরিবারের সদস্যবৃন্দের অবদান অনস্বীকার্য। একইসাথে, বঙ্গবন্ধুর দেওয়া ১৯৭১ সালের ৭ মার্চের ঐতিহাসিক গণজাগরণের ভাষণটি ইতোমধ্যেই ইউনেস্কো কর্তৃক বিশ্ব প্রামাণ্য ঐতিহ্য হিসেবে স্বীকৃত একটি অমূল্য দলিল।
বর্তমান সরকারকে অসাংবিধানিক উল্লেখ করে এতে বলা হয়, কিন্তু অত্যন্ত পরিতাপের বিষয় হলেও সত্য, বর্তমান অসাংবিধানিক সরকারের প্রতিহিংসামূলক আচরণের শিকার হচ্ছে মুক্তির লড়াইয়ে অংশগ্রহণকারী সকল ব্যক্তি, প্রতিষ্ঠান ও প্রতীকী স্থাপনাসমূহ। এসবের ধারাবাহিকতায় জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও জাতীয় ইতিহাসের সাথে সম্পর্কিত জাতীয় দিবসসমূহ রাষ্ট্রাচার থেকে বাদ দেওয়া হয়েছে। জার্মান আওয়ামী লীগ এই নীচ, ঘৃণ্য ও প্রতিহিংসামূলক পদক্ষেপের তীব্র নিন্দা, ধিক্কার ও প্রতিবাদ জানায়।
আলোচিত রিসেট বাটন নিয়ে এতে বলা হয়, জার্মান আওয়ামী লীগ মনেপ্রাণে বিশ্বাস করে যে, বর্তমান অসাংবিধানিক অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের অবৈধ প্রধান উপদেষ্টার ভাষায় ‘রিসেট বাটন’ চেপে বাঙালি জাতির মর্যাদাপূর্ণ অর্জনের ইতিহাস মুছে ফেলার এই ‘পূর্বপরিকল্পিত’ ষড়যন্ত্র বীর বাঙালি অত্যন্ত ঘৃণাভরে প্রত্যাখ্যান করবে এবং সমগ্র জাতি মহান মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় উদ্বুদ্ধ হয়ে ঐক্যবদ্ধভাবে সকল ষড়যন্ত্রের বিষবৃক্ষ অচিরেই সমূলে উৎপাটন করবে। ‘রিসেট বাটন’ চেপে কিংবা অন্য যেকোনও অবৈধ উপায়ে কেউ কোনোদিন বাঙালি জাতিকে দাবায় রাখতে পারেনি, ভবিষ্যতেও কোনোদিন দাবায় রাখতে পারবে না।