আলজাজিরার প্রতিবেদনে যেভাবে মিথ্যা নাটক সাজানো হয়েছিল, ঠিক তেমনি যুক্তরাষ্ট্রের নিষেধাজ্ঞাতেও অসত্য অভিযোগ তোলা হয়েছে বলে দাবি করেছেন সাবেক সেনাপ্রধান জেনারেল (অব.) আজিজ আহমেদ। দুটি অভিযোগেই তার কোনও সংশ্লিষ্টতা নেই বলেও দাবি করেন তিনি।
মঙ্গলবার (২১ মে) সময় সংবাদকে দেয়া সাক্ষাৎকারে আজিজ আহমেদ এসব কথা বলেন।
নিষেধাজ্ঞা নিয়ে আন্তর্জাতিক পর্যায়ে কোনও রাজনীতি চলছে কি না এ বিষয়ে কোনও ধারণা নেই জানিয়ে আজিজ আহমেদ বলছেন, ‘সরকারি কাজে তিনি এমন কোনও অপরাধ করেননি, যার জন্য শাস্তি পেতে হবে।’
সাবেক এ সেনাপ্রধান বলেন, ‘নিষেধাজ্ঞার বিষয়টা আজ সকালেই জানতে পেরেছি। বিষয়টা দুর্ভাগ্যজনক। বলা হচ্ছে, আমার ভাইদেরকে বাংলাদেশে অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডের জন্য জবাবদিহিতা এড়াতে আমার পদ-পদবি ব্যবহার করে তাকে সহযোগিতা করেছি এবং দুর্নীতি করেছি। কিন্তু আমার এতে কোনও সম্পৃক্ততা ছিল না।’
তিনি বলেন, ‘অভিযোগ করা হচ্ছে, সামরিক বাহিনীর একটা কাজে আমার ভাইকে কনট্রাক্ট দিয়ে ঘুষ গ্রহণ করেছি। সেটা হচ্ছে সিগন্যাল ইন্টেলিজেন্স ইউনিট ক্রয়ের ব্যাপারে। কিন্তু এতে আমার কোনও সম্পৃক্ততাই নেই। আমার ভাইকে কীভাবে আমি কন্ট্রাক্ট দেবো, আর সেখান থেকে আমি কীভাবে ঘুষ নেবো। অথচ আমার যে ভাইয়ের কথা বলা হচ্ছে, আলজাজিরাতেও বলা হয়েছিল, সে কিন্তু ২০০২ সালের পর থেকেই বাংলাদেশে নেই।’
আজিজ আহমেদ বলেন, ‘এটা একটা অবান্তর…। সেনাবাহিনীর ইকুইপমেন্ট ক্রয়ের ব্যাপারে আলজাজিরাও এমন অসত্য একটা অভিযোগ এনেছিল। এখানেও সেটিই দেখছি। কেউ যদি প্রমাণ করতে পারে যে, আমি আমার কোনও ভাইকে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশে (বিজিবি) ৪ বছর ডিজি থাকা অবস্থায় অথবা সেনাপ্রধান হিসেবে ৩ বছর থাকা অবস্থায় কোনও কনট্রাক্ট দিয়েছি…, সেই ব্যাপারে আবারও চ্যালেঞ্জ করছি। কারণ এ ব্যাপারে আমার কাছে সব তথ্যপ্রমাণ আছে।’
এর আগে সোমবার (২০ মে) মার্কিন পররাষ্ট্র দফতরের ওয়েবসাইটে প্রকাশিত এক বিবৃতিতে, দুর্নীতির অভিযোগে বাংলাদেশের সাবেক সেনাপ্রধান জেনারেল (অব.) আজিজ আহমেদ ও তার পরিবারের সদস্যদের নিষেধাজ্ঞার বিষয়টি জানানো হয়। আজিজ আহমেদ অবসরে যাওয়ার প্রায় ৩ বছর পর এ নিষেধাজ্ঞা এলো।
স্টেট ডিপার্টমেন্টের বিবৃতিতে বলা হয়, তার (আজিজ আহমেদ) কর্মকাণ্ডে বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠানসমূহের অবমূল্যায়ন এবং সরকারি প্রতিষ্ঠান ও প্রক্রিয়ার ওপর জনগণের আস্থা কমেছে। এছাড়া আজিজ আহমেদ তার ভাইকে বাংলাদেশে অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডের জন্য জবাবদিহিতা এড়াতে সহযোগিতা করেন।
‘এ সময় তিনি নিয়মতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় হস্তক্ষেপের মাধ্যমে উল্লেখযোগ্য দুর্নীতিতে জড়িয়েছেন বলেও জানায় মার্কিন পররাষ্ট্র দফতর। এছাড়া অন্যায্যভাবে সামরিক খাতে কাজ পাওয়া নিশ্চিত করতে তিনি তার ভাইয়ের সঙ্গে ঘনিষ্ঠভাবে কাজ করেছেন। তিনি নিজের স্বার্থের জন্য সরকারি নিয়োগের বিনিময়ে ঘুষ নিয়েছেন।’
মার্কিন পররাষ্ট্র দফতরের মুখপাত্র ম্যাথিউ মিলারের ওই বিবৃতিতে আরও বলা হয়, আজিজ আহমেদের বিরুদ্ধে এই ব্যবস্থার মধ্য দিয়ে বাংলাদেশে গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠান ও আইনের শাসন শক্তিশালী করতে যুক্তরাষ্ট্রের অঙ্গীকার পুনরায় নিশ্চিত করা হলো। সরকারি সেবা আরও স্বচ্ছ ও নাগরিকদের সেবা লাভের সুযোগ তৈরি, ব্যবসা ও নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থার উন্নয়ন এবং মুদ্রা পাচার ও অন্যান্য অর্থনৈতিক অপরাধের অনুসন্ধান ও বিচার নিশ্চিতে সক্ষমতা বৃদ্ধির মাধ্যমে বাংলাদেশে দুর্নীতিবিরোধী প্রচেষ্টায় সহায়তা দেয় যুক্তরাষ্ট্র।
সাবেক জেনারেল (অব.) আজিজ আহমেদকে ডিপার্টমেন্ট অব স্টেট, ফরেন অপারেশন অ্যান্ড রিলেটেড প্রোগ্রামস অ্যাপ্রোপ্রিয়েশনস অ্যাক্টের ৭০৩১ (সি) ধারার আওতায় অন্তর্ভুক্ত করার ঘোষণা দিয়েছে পররাষ্ট্র দফতর। এই পদক্ষেপের ফলে আজিজ আহমেদ এবং তার পরিবারের সদস্যরা সাধারণত যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশের জন্য অযোগ্য হিসেবে বিবেচিত হবেন বলেও জানায় মার্কিন পররাষ্ট্র দফতর।
প্রসঙ্গত, ২০১৮ সালের ২৫ জুন বাংলাদেশে চিফ অফ আর্মি স্টাফ নিযুক্ত হন আজিজ আহমেদ। তিন বছর দায়িত্ব পালনের পর ২০২১ সালের ২৪ জুন অবসরে যান তিনি।
এর আগে তিনি বর্ডার গার্ড বাংলাদেশের মহাপরিচালকের দায়িত্বে ছিলেন।