22 C
Dhaka
Sunday, November 24, 2024

হানি ট্র্যাপের শিকার হয়েই খুন হন এমপি আনার?

পশ্চিমবঙ্গের নিউ টাউনে হত্যাকাণ্ডের শিকার হওয়া ঝিনাইদহ-৪ আসনের এমপি আনোয়ার আজীম আনারকে কীভাবে ভারতে খুন করা হয়েছে সে বিষয়টি নিয়ে তদন্ত করছে বাংলাদেশ ও ভারতের গোয়েন্দা সংস্থাগুলো। কোন কৌশলে তাকে ভারতে নিয়ে যাওয়া হয়েছে, খুন করা হয়েছে এবং কীভাবে মরদেহ গুম করা হয়েছে এখন সেসব তথ্য বের করার চেষ্টা চালানো হচ্ছে।

এরমধ্যে ভারতের কলকাতাভিত্তিক একটি সংবাদমাধ্যমে দাবি করা হয়েছে, এমপি আনারকে হানি ট্র্যাপে ফেলে— অর্থাৎ তরুণীর মাধ্যমে লোভ দেখিয়ে কলকাতায় নিয়ে গিয়ে খুন করা হয়েছে।

সংবাদমাধ্যমটি বলেছে, এমপি আনারের ব্যবসায়িক পার্টনার আক্তারুজ্জামান শাহীন হত্যার পুরো পরিকল্পনা সাজান। আর এ কাজে তিনি ব্যবহার করেন শিলাস্তি রহমান নামের এক তরুণীকে। যার প্রকৃত নাম সিনথিয়া রহমান।

গত ১২ মে চিকিৎসার কথা বলে ভারতে যাওয়া এমপি আনার শিলাস্তি রহমানের সঙ্গে দেখা করেন। এই তরুণীকে ব্যবহার করে মূলত এমপি আনারকে ভারতে আনা হয়।

হত্যার ছক কষা আক্তারুজ্জামান শাহীন ১০ মে ভারত থেকে বাংলাদেশে আসেন। কিন্তু ওই সময় শিলাস্তি ওরফে সিনথিয়া ভারতে থেকে গিয়েছিলেন। এমপি আনারকে ভারতে নেওয়ার পাশাপাশি শিলাস্তি সরাসরি এই হত্যাকাণ্ডে অংশ নেন। এরপর আনারের মরদেহ গুম করতেও সক্রিয় ভূমিকা রাখেন তিনি।

আরও পড়ুনঃ  মোদি-হাসিনা জুটি বাংলাদেশে শাসন পরিবর্তন ঠেকাতে ব্যর্থ হয়েছে

কলকাতাভিত্তিক সংবাদমাধ্যমটি আরও জানিয়েছে, কিলিং মিশন সাকসেসফুল হওয়ার পর শিলাস্তি রহমান ওরফে সিনথিয়া রহমান গত ১৫ মে বিমানযোগে কলকাতা থেকে বাংলাদেশে ফেরেন।

হত্যার প্রধান পরিকল্পনাকারী আক্তারুজ্জামান শাহীন এবং এই তরুণী উভয়ই চরমপন্থি সংগঠন পূর্ব বাংলা কমিউনিস্ট পার্টির (পিবিসিপি) সঙ্গে যুক্ত ছিলেন বলে সংবাদমাধ্যমটি দাবি করেছে।

গত ১২ মে কলকাতায় যাওয়া এমপি আনার ১৩ মে নিউ টাউনের একটি বাড়িতে নির্মম হত্যার শিকার হন। হত্যার পর তার মরদেহ টুকরো টুকরো করে ফেলা হয়। এরপর সেগুলো ট্রলি দিয়ে সেই বাড়ি থেকে বের করে নিয়ে গুম করে ফেলা হয়।

এদিকে শিলাস্তি রহমান নামের এই তরুণীকে ইতিমধ্যে গ্রেপ্তার করেছে বাংলাদেশের পুলিশ। বর্তমানে তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে।

এদিকে, বৃহস্পতিবার (২৩ মে) বিকেল ৩টার দিকে রাজধানীর মিন্টো রোডের ডিবি কার্যালয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেছেন ডিএমপির অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার (গোয়েন্দা) মোহাম্মদ হারুন অর রশীদ। তিনি বলেছেন, ঢাকায় বসে ২/৩ মাস আগে আনোয়ারুল আজীমকে হত্যার পরিকল্পনা করা হয়। ঢাকায় না পেরে ঝিনাইদহ-৪ আসনের সংসদ সদস্যকে কৌশলে নেওয়া হয় কলকাতায়। সেখানে তাকে হত্যার পর শরীর টুকরা টুকরা করে হাড্ডি থেকে মাংস আলাদা করা হয়। এরপর হলুদ মিশিয়ে ব্যাগে ভরে ওই বাসা থেকে বের করা হয়। তবে কোথায় মরদেহের খণ্ডিত অংশ ফেলা হয়েছে তা এখনো স্পষ্ট নয়।

আরও পড়ুনঃ  ‘হাসিনাকে উৎখাত করা হয়েছে, এখানে পদত্যাগপত্রের ভূমিকা নেই’

ডিবি প্রধান বলেন, সংসদ সদস্য আনোয়ারুল আজীম আনারকে হত্যার পরিকল্পনা হয় দুই থেকে তিন মাস আগে। তারা পরিকল্পনা করেছিল ঢাকায় হত্যা করবে। কিন্তু বাংলাদেশ পুলিশের নজরদারি ও ঢাকায় হত্যাকাণ্ডের পরে সব হত্যার ক্লু পুলিশ বের করে নেবে বলেই হত্যাকারীরা কলকাতায় এ ঘটনা ঘটিয়েছে।

হারুন অর রশীদ বলেন, অপরাধীরা বিদেশের মাটিতে অপরাধ করলে বাংলাদেশ পুলিশের নজরে আসবে না বলেই কলকাতা বেছে নেয়। বাংলাদেশের মাটিতে অপরাধ করার সাহস পায়নি। তবে তারা এ হত্যাকাণ্ডের পর পালিয়ে থাকতে পারেনি। আমরা তিনজনকে গ্রেপ্তার করেছি। আরও কয়েকজনকে নজরদারিতে রাখা হয়েছে।

তিনি বলেন, মাস্টারমাইন্ড আখতারুজ্জামানের বাসা একটি গুলশানে, একটি বসুন্ধরা এলাকায়। এই দুই বাসাতেই অনেকদিন ধরে পরিকল্পনা করেছে। আনারকে হত্যার নেপথ্যে রাজনীতি বা অর্থনৈতিক যে কারণেই থাকুক না কেন বাংলাদেশের মাটি ব্যবহার করতে চেয়েছিল, কিন্তু পারেনি। পরিকল্পনার অংশ হিসেবে তারা কলকাতায় গত ২৫ তারিখ একটি বাসা ভাড়া নেয়। তারা ৩০ এপ্রিল ওই বাসায় ওঠে। যিনি হত্যার পরিকল্পনা করেছেন তিনিও আরেকজনসহ মোট তিনজন বিমানে করে কলকাতার ভাড়া বাসায় ওঠেন।

আরও পড়ুনঃ  সাথে টুপি নিয়ে জঙ্গলে কলাপাতায় শুয়ে ছিলেন বিচারপতি মানিক!

তারা দুই মাস ধরে খেয়াল রাখছে কখন আনারকে কলকাতায় আনা যাবে। সেখানে আরও দুজনকে হায়ার করা হয়। তারা ওই বাসায় আসা যাওয়া করবে। তারা হলেন, জিহাদ বা জাহিদ ও সিয়াম। মাস্টারমাইন্ড গাড়ি ঠিক করে। কাকে কত টাকা দিতে হবে। কারা কারা হত্যায় থাকবে, কার দায়িত্ব কী হবে। কিছু কাজ আছে বলে ৫/৬ জন রেখে ১০ মে বাংলাদেশে চলে আসেন আখতারুজ্জামান শাহীন।

হারুন অর রশীদ বলেন, গত ১২ মে আনার তার ভারতীয় বন্ধু গোপালের বাসায় যান। ১৩ তারিখ ওই ভাড়া বাসায় ওঠেন। ফয়সাল নামে একজন তাকে রিসিভ করেন। সেখান থেকে নিয়ে যিনি মূল হত্যাকারী তিনি আনার ও ফয়সালকে নিয়ে গাড়িতে করে ওই বাসায় যান। আগে থেকে অবস্থান করা মোস্তাফিজও বাসায় ঢোকেন। সেখানে আগে থেকে ভেতরে ছিল জাহিদ, সিয়াম। আধা ঘণ্টার মধ্যে নৃশংস ও বর্বরোচিত হত্যাকাণ্ড সংঘটিত হয়।

সর্বশেষ সংবাদ
জনপ্রিয় সংবাদ