Sunday, February 2, 2025

আতঙ্কিত নারী কেবিন ক্রুরা

আরও পড়ুন

বিমানে নারী কেবিন ক্রুদের যৌন হয়রানির ঘটনা বেড়েই চলেছে। সাম্প্রতিক সময়ের ঘটে যাওয়া বেশকয়েকটি ঘটনার পর আতঙ্কিত হয়ে পড়েছেন বিমানের বিভিন্ন ফ্লাইটে কর্মরত নারী কেবিন ক্রুরা। বেশকিছুদিন ধরে বিমানের ভিতরে ও সুরক্ষিত ককপিটে নারী কেবিন ক্রুদের যৌন হয়রানির ঘটনায় সহকর্মীদের মাঝে দেখা দিয়ে উৎকণ্ঠা। নারী কেবিন ক্রুরা পাইলট কিংবা অন্য পুরুষ কেবিন ক্রুদের দ্বারাই নির্যাতনের শিকার হচ্ছেন।

আবারো বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের টরন্টোগামী ফ্লাইটে এক পুরুষ কেবিন ক্রুর বিরুদ্ধে যৌন হয়রানির অভিযোগ করেছেন আরেক নারী কেবিন ক্রু। ঘটনার পর বিমানের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) বরাবর অভিযোগ দিয়েছেন ওই নারী। তবে এখনো অভিযুক্ত ব্যক্তির বিরুদ্ধে দৃশ্যমান শাস্তিমূলক কোনো ব্যবস্থা নেয়নি বিমান। এতে আতঙ্কে আছেন নারী কেবিন ক্রু ও তাদের পরিবারের সদস্যরা। সম্প্রতি বিমানের সবচেয়ে সুরক্ষিত জায়গা ককপিটে পাইলটের আসনে আরো দুটি যৌন হয়রানির ঘটনা ঘটে। এ দুটি ঘটনায় যৌন হয়রানির শিকার হন দুই নারী কেবিন ক্রু। তারা অভিযুক্ত পাইলটদের বিরুদ্ধে বিমান এমডির কাছে অভিযোগ করেন। তবে কোনো ঘটনায়ই এখন পর্যন্ত ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে বলে জানা যায়নি।

নারী কেবিন ক্রুদের অভিযোগ, বিমানের ফ্লাইটে নারী কেবিন ক্রুরা নিরাপদ নয়। তারা প্রায়ই পুরুষ সহকর্মী ও ক্যাপ্টেন দ্বারা যৌন হয়রানির শিকার হচ্ছেন। একের পর এক এমন ঘটনায় তোলপাড় চলছে বিমানে। কিন্তু তারপরও অজানা কারণে দৃশ্যমান শাস্তির ব্যবস্থা নিচ্ছে না কর্তৃপক্ষ। ফলে এ ধরনের কর্মকা- বেড়েই চলছে।

আরও পড়ুনঃ  ফিলিস্তিনকে স্বীকৃতির ঘোষণা স্লোভেনিয়ার

গত ১৯ নভেম্বর বিমানের এমডি বরাবর যৌন হয়রানির অভিযোগ দেন এক কেবিন ক্রু। অভিযোগে বলা হয়, ওই নারী কেবিন ক্রু বিমানের ফ্লাইট সার্ভিস উপ-বিভাগে ফ্লাইট স্টুয়ার্ডেস হিসেবে কর্মরত। গত ১৮ অক্টোবর তিনি ঢাকা থেকে টরন্টো ফ্লাইটে ওঠেন। ঢাকা থেকে ইস্তাম্বুল সেক্টরে তার পজিশন ছিল এ ফোর। ওই ফ্লাইটে এ টু ছিলেন আরেক কেবিন ক্রু এফ এস শিশির। ঢাকা থেকে ইস্তাম্বুল সেক্টরে গ্যালিতে কাজের সময় এফ এস শিশির প্রথমবার খারাপভাবে তার শরীর স্পর্শ করেন। বিষয়টি শিশিরকে বুঝতে না দিয়ে তিনি এড়িয়ে যান। কিন্তু ফ্লাইটে অন্যদের অগোচরে কাজের ফাঁকে বারবার শিশির নারী কেবিন ক্রুর স্পর্শকাতর অঙ্গে ইচ্ছাকৃতভাবে অশালীন স্পর্শ করতে থাকেন, যা কুরুচিপূর্ণ ও যৌন হয়রানির পর্যায়ে পড়ে। ওই নারী কেবিন ক্রু তখন ফ্লাইটেই প্রতিবাদ করেন। অভিযোগে আরো বলা হয়, ওই ঘটনায় নারী কেবিন ক্রু মানসিকভাবে বিপর্যস্ত হয়ে যান। বিষয়টি অন্য কলিগদের সঙ্গে শেয়ার করেন। কিন্তু তারপরও ইস্তাম্বুল থেকে টরন্টো যাওয়ার আগ পর্যন্ত তাকে আবারও শিশিরের সঙ্গে উড়োজাহাজের মিড পজিশন দেওয়া হয়। এসময় শিশিরের সঙ্গে সখ্য থাকা অন্য পুরুষ ও নারী কেবিন ক্রুরা তার সঙ্গে খারাপ আচরণ করেন।

তবে ভুক্তভোগী ওই নারী কেবিন ক্রু বলেন, শিশিরের যৌন হয়রানির বিষয়টি প্রথমে গুরুত্ব দেইনি। কিন্তু যখন দেখি ইস্তাম্বুল থেকে টরন্টো ফ্লাইটে ফের তার সঙ্গে একই সেক্টরে কাজ পড়েছে, তখন আগের ঘটনাটি চিফ পার্সারকে জানাই। তখন চিফ পার্সারসহ শিশিরের পক্ষের কয়েকজন আমার ওপর ক্ষিপ্ত হন। পরে টরন্টোতে হোটেলে পৌঁছানোর পর ব্রিফিংয়ে আমাকে তারা স্যরি বলতে বাধ্য করেন। আমি এ ঘটনার সুষ্ঠু তদন্তের মাধ্যমে বিচার চাই।

আরও পড়ুনঃ  এবার ইরান ইসরাইল ইস্যুতে মুখ খুললেন খামেনি

এ বিষয়ে এফ এস শিশির ইনকিলাবকে বলেন, বিমানের নিয়ম অনুযায়ী টরন্টোগামী ফ্লাইটে ইস্তাম্বুলে ক্রু সেট পরিবর্তন হয়। সেখানে দুদিন থেকে আবার আরেক ফ্লাইটে ওঠেন কেবিন ক্রুরা। এই হিসেবে যেদিন আমরা ইস্তাম্বুল থেকে টরন্টো যাত্রা শুরু করবো, তখন ওই নারী কেবিন ক্রু ফ্লাইটের চিফ পার্সারের কাছে আমার বিরুদ্ধে অভিযোগ দেন। অভিযোগের পর থেকে আমি বিব্রতকর পরিস্থিতিতে আছি। এছাড়াও আমি পারিবারিকভাবেও বিষয়টি নিয়ে অনেক চাপে রয়েছি।

শিশিরের বিরুদ্ধে অভিযোগ তদন্ত করছেন বিমানের মহাব্যবস্থাপক (জনসংযোগ) বোসরা ইসলাম। তিনি বলেন, শিশিরের বিরুদ্ধে যৌন হয়রানির যে অভিযোগ উঠেছে তার তদন্ত চলছে। আশা করি দ্রুত সময়ের মধ্যে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দিতে পারবো। তদন্তের কাজ চলাকালীন এ বিষয়ে মন্তব্য করবো না।

গত ১৪ নভেম্বর বিমানের সিইও বরাবর এক পাইলটের বিরুদ্ধে যৌন হয়রানি এবং অপেশাদার আচরণের অভিযোগ করেন ফ্লাইট সার্ভিস উপ-বিভাগের এক কেবিন ক্রু। ওই অভিযোগে বলা হয়, গত ১০ নভেম্বর বিজি-১৩৫ নম্বর ফ্লাইট (ঢাকা-চট্টগ্রাম-জেদ্দা) অপারেট করেন ওই নারী কেবিন ক্রু। ফ্লাইটে অপারেটিং পাইলট ছিলেন মুনতাসীর ও আবেদ। ফ্লাইটের মাঝামাঝি সময় তারা ওই নারী কেবিন ক্রুকে ককপিটে ডাকেন। কুশল বিনিময়ের একপর্যায়ে পাইলট আবেদ তার সঙ্গে অপেশাদার (ব্যক্তিগত) কথাবার্তা বলেন। ফিরতি ফ্লাইটে এই কেবিন ক্রুর ‘ওয়ার্কিং পজিশন’ ছিল সামনে। এ কাজের জন্য তাকে বেশ কয়েকবার ককপিটে যেতে হয়। তখন পাইলট আবেদ অশ্লীল মন্তব্য করেন। এছাড়া নোংরা দৃষ্টিতে তাকিয়ে অশ্লীল অঙ্গভঙ্গিও করেন বলে অভিযোগ।

আরও পড়ুনঃ  গাজায় যুদ্ধ শুরুর পর ইসরায়েলের ভেতর গভীরতম হামলা হিজবুল্লাহ

গত ৩ নভেম্বর ঢাকা থেকে মাসকাটগামী ফ্লাইট ছেড়ে যায়। এই ফ্লাইটের পাইলট ছিলেন ইউসুফ মাহমুদ। তিনিও এক নারী কেবিন ক্রুকে ককপিটে ডেকে যৌন হয়রানি করেন বলে অভিযোগ। এ ঘটনায় গত ৭ নভেম্বর বিমানের এমডি ও সিইও বরাবর অভিযোগ দেন ওই নারী কেবিন ক্রু। লিখিত অভিযোগে ওই নারী জানান, মাসকটগামী ফ্লাইটে পাইলট ইউসুফ ওই নারী কর্মীকে ককপিটে ডেকে নিয়ে তার শরীর স্পর্শ করেন এবং জোর করে কমলা খাইয়ে দেন। এর আগে ২০১৯ সালেও বড় ধরনের যৌন হয়রানির অভিযোগ উঠেছিল। এছড়াও সম্প্রতি বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের দুই কেবিন ক্রুর কাছ থেকে মদের বোতল জব্দ করা হয়েছে। বিমানের ম্যানচেষ্টার ফ্লাইটে এ ঘটনা ঘটে।

আপনার মতামত লিখুনঃ

সর্বশেষ সংবাদ