রংপুরের পীরগাছা উপজেলার অন্নদানগর গ্রামে একটি গাছে আটকে পড়া বিশাল আকৃতির বিরল প্রজাতির শকুন উদ্ধার করেছেন এলাকাবাসী। প্রাণী বিশেষজ্ঞরা ধারণা করছেন, দীর্ঘ ভ্রমণের পর ক্লান্ত হয়ে পড়া প্রায় তিন ফুট উচ্চতা, সাত ফুট পাখার দৈর্ঘ্য ও ১০ কেজি ওজনের শকুনটি স্থানীরা দেখতে পেয়ে উদ্ধার করেন। পরে পরিবেশবাদী সংগঠন ‘ওয়ার্ড অ্যানিম্যাল রেসকিউ অ্যান্ড অ্যাডপশন নেটওয়ার্ক’- এর রংপুর শাখার সদস্যদের খবর দিলে তারা উদ্ধার করে রংপুরে নিয়ে আসে।
জানা গেছে, উত্তর গোলার্ধের দেশগুলো থেকে নিরাপত্তা ও খাদ্যের অভাবে যেসব পরিযায়ী পাখিরা পরিযান করে থাকে তাদের মধ্যে অন্যতম ‘হিমালয়ী গৃধিনী’ ধরনের শকুন। প্রতি বছর শীতকালে এই শকুনগুলো হাজার মাইল পথ পাড়ি দিয়ে বাংলাদেশের মতো সমতল ভূমিতে চলে আসে।
এর আগে শনিবার (১৪ ডিসেম্বর) দুপুর ১২টার দিকে শকুনটিকে দিনাজপুরের সিংড়া রেসকিউ সেন্টারে নিয়ে যাওয়ার আগে কিছুক্ষণের জন্য রংপুর কারমাইকেল কলেজে আনা হয়। খবর পেয়ে শত শত উৎসুক জনতা এটি দেখতে কলেজ ক্যাম্পাসে ভিড় জমান।
রেসকিউ টিমের পীরগাছা শাখার সদস্য নূর হাসান নাহিদ ও সোহেল বলেন, শুক্রবার সন্ধ্যায় আমাদের কাছে খবর আসে, অন্নদানগর এলাকার একটি গাছে আটকা পড়ে আছে একটি শকুন। এলাকাবাসী দীর্ঘক্ষণ চেষ্টার পর এটিকে বেঁধে রেখেছে। খবর পেয়ে আমরা সেখানে যাই এবং সেখান থেকে উদ্ধার করে রংপুরে নিয়ে আসি। পরে আমরা ওয়াইল্ড লাইফ অ্যান্ড স্নেক রেসকিউ টিমের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করেছি। দুপুরের পর পরই দিনাজপুরের সিংড়ার উদ্দেশে রওনা হবো। সেখানে রেসকিউ সেন্টারে শকুনটির চিকিৎসা করানো হবে।’
এদিকে ওয়াইল্ড লাইফ অ্যান্ড স্নেক রেসকিউ টিম ইন বাংলাদেশের অর্থ সম্পাদক লিজেন আহমেদ প্রান্ত জানান, শকুনটি বর্তমানে দুর্বল ও অসুস্থ। সিংড়া রেসকিউ সেন্টারে তার শারীরিক অবস্থা পর্যবেক্ষণের পর প্রকৃতিতে অবমুক্ত করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।
কারমাইকেল কলেজের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষক আব্দুর রউফ জানান, শকুন মৃত প্রাণীর দেহ খেয়ে পরিবেশ পরিষ্কার রাখতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। তবে প্রাকৃতিক আবাসস্থল ধ্বংস এবং বিষাক্ত খাদ্য গ্রহণের ফলে শকুনের সংখ্যা বাংলাদেশে আশঙ্কাজনক হারে কমে গেছে। তাই পরিবেশবাদী সংগঠনগুলোর পাশাপাশি শকুনসহ অন্য বিপন্ন প্রজাতি রক্ষায় সবার সহযোগিতা ও সচেতনতা দরকার।