গাজীপুরের কালিয়াকৈর উপজেলার চন্দ্রা ত্রিমোড় এলাকায় যুবদল নেতার নেতৃত্বে বিদ্যালয়ের অফিস কক্ষ থেকে তুলে নিয়ে এক শিক্ষককে মারধর করার অভিযোগ পাওয়া গেছে। এ সময় শিক্ষককে রক্ষা করতে গেলে বিদ্যালয়ের প্রাক্তন এক শিক্ষার্থীকেও পিটিয়ে আহত করা হয়।
রবিবার (১২ জানুয়ারি) সকাল সাড়ে ১০টার দিকে উপজেলার চন্দ্রা ত্রিমোড় এলাকার বঙ্গবন্ধু সরকারি উচ্চবিদ্যালয়ে এ ঘটনা ঘটে। মারধরের শিকার দুজন হলেন বিদ্যালয়ের ব্যবসায় শাখার সহকারী শিক্ষক মো. বশির উদ্দিন ও প্রাক্তন শিক্ষার্থী রিজভী আহমেদ রাজীব। অভিযুক্ত রাশেদুল ইসলাম রনি উপজেলার আটাবহ ইউনিয়নের জালশোকা গ্রামের আজিবরের ছেলে। তিনি গাজীপুর জেলা যুবদলের যুগ্ম আহ্বায়ক।
বিদ্যালয়ের শিক্ষকরা জানান, সকালে বিদ্যালয়ের অফিস কক্ষে বশির উদ্দিন ও প্রধান শিক্ষক আনন্দ কুমার গল্প করছিলেন। এ সময় উপজেলা যুবদলের যুগ্ম আহ্বায়ক রিপন আহমেদ, যুবদল কর্মী রাকিব হাসানসহ কয়েকজন লাঠিসোঁটা নিয়ে বিদ্যালয়ের অফিস কক্ষে প্রবেশ করেন। তারা শিক্ষক বশির উদ্দিনকে জোর করে ধরে বিদ্যালয়ের প্রধান ফটকে নিয়ে যান। সেখানে এলোপাতাড়ি মারধর করা হয়। তখন জেলা যুবদলের যুগ্ম আহ্বায়ক রাশেদুল ইসলাম রনিসহ তার ১৫-২০ জন সহযোগী উপস্থিত ছিলেন। এ সময়ে বিদ্যালয়ের প্রাক্তন শিক্ষার্থী রিজভী আহমেদ দেখতে পেয়ে রক্ষা করতে গেলে তাকেও এলোপাতাড়ি পিটিয়ে রক্তাক্ত করেন হামলাকারীরা। একপর্যায়ে বিদ্যালয়ের দফতরিসহ আশপাশের লোকজন তাদের উদ্ধার করে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করেন। খবর পেয়ে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছে কালিয়াকৈর থানা পুলিশ।
বশির উদ্দিন বলেন, ‘সকাল সাড়ে ১০টার দিকে উপজেলা যুবদলের যুগ্ম আহ্বায়ক রিপন আহমেদ, যুবদল কর্মী রাকিব হাসান ও তাজিদ মিয়া বিদ্যালয়ের অফিস কক্ষে প্রবেশ করেন। তারা আমাকে টেনেহিঁচড়ে গেটের বাইরে নিয়ে যান। সেখানে পিটিয়ে রক্তাক্ত করা হয়। আমাকে মারধর করতে দেখে বিদ্যালয়ের প্রাক্তন ছাত্র রিজভী আহমেদ রক্ষা এগিয়ে আসলে তাকেও পিটিয়ে আহত করা হয়। এরপর বিদ্যালয়ের দফতরিসহ আশপাশের লোকজন আমাদের উদ্ধার করে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করেন।’
বিদ্যালয়ের শিক্ষকদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, জেলা যুবদলের যুগ্ম আহ্বায়ক রাশেদুল ইসলামের নেতৃত্বে গত ১৪ আগস্ট কয়েকজন ব্যক্তি বঙ্গবন্ধু সরকারি উচ্চবিদ্যালয়ে যান। তারা নানা অভিযোগ তুলে সহকারী শিক্ষক বশির উদ্দিনকে জোরপূর্বক পদত্যাগপত্রে স্বাক্ষর করান। ওই সময় তাকে হুমকি দিয়ে বিদ্যালয় থেকে বের করে দেন। ১৫ আগস্ট ওই শিক্ষক কালিয়াকৈর থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি করেন।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে বিদ্যালয়ের এক শিক্ষক বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘ওই ঘটনায় তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়। কমিটি শিক্ষকের পক্ষে প্রতিবেদন দিয়েছিল। ওই প্রতিবেদন নিজেদের পক্ষে না যাওয়ায় উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) বরাবর ঘটনাটি পুনঃতদন্তের জন্য আবেদন করেন রাশেদুল ইসলামসহ সাত জনের একটি দল। গত ১ জানুয়ারি উপজেলা সমাজসেবা কর্মকর্তা মিজানুর রহমানকে প্রধান করে আরেকটি পুনঃতদন্ত কমিটি গঠন করা হয়। সেই ঘটনার জের ধরেই আজ ওই শিক্ষককে মারধর করা হয়েছে।’
বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আনন্দ কুমার বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘শিক্ষক বশির উদ্দিনকে নিয়ে আগের ঘটনা তদন্ত চলা অবস্থায় তাকে বিদ্যালয়ের অফিস কক্ষ থেকে টেনেহিঁচড়ে তুলে নিয়ে মারধরের এমন ঘটনা দুঃখজনক। তারা আমাকেও বকাঝকা করেছিল এবং হুমকি দিয়ে গেছে। আমিও আতঙ্কে আছি। দায়িত্বশীলদের কাছে ঘটনাটি তদন্ত করে হামলাকারীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানাচ্ছি।’
এ ব্যাপারে জেলা যুবদলের যুগ্ম আহ্বায়ক রাশেদুল ইসলাম রনি বলেন, ‘ওই শিক্ষক আওয়ামী লীগের রাজনীতি করেন। তবে আজ ঘটনাস্থলে আমি ছিলাম না। তাকে মারধরের বিষয়ে আমি কিছুই জানি না। পরে শুনেছি, বশির উদ্দিনকে কারা মারধর ও লাঞ্ছিত করেছে। তারা আসলে কারা, আমি জানি না।’
জেলা মাধ্যমিক শিক্ষক সমিতির সভাপতি মোখলেছুর রহমান এই ঘটনার নিন্দা জানিয়ে বলেন, ‘এ ঘটনায় সঠিক ব্যবস্থা গ্রহণ করা না হলে আমরা কর্মসূচি গ্রহণ করবো।’
জেলা যুবদলের আহ্বায়ক আতাউর রহমান মোল্লা বলেন, ‘শিক্ষককে মারধরের ঘটনায় যুবদলের নেতাকর্মীরা জড়িত থাকলে দলের গঠনতন্ত্র অনুযায়ী তাদের বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) কাউছার আহাম্মেদ বলেন, ‘আমি জেলায় আইনশৃঙ্খলা কমিটির সভায় ছিলাম। শুনেছি ওই শিক্ষককে কয়েকজন মারধর করেছে। বিষয়টি পুলিশকে জানিয়েছি।’
কালিয়াকৈর থানার উপপরিদর্শক (এসআই) জামিল হোসেন বলেন, ‘ওই শিক্ষকের বিরুদ্ধে বেশ কিছু অভিযোগ তুলে তাকে বিতাড়িত করতে চাইছে একটি পক্ষ। তারই জের ধরে কিছু লোক ওই শিক্ষককে মারধর করেছে। এ ঘটনায় আইনগত ব্যবস্থা প্রক্রিয়াধীন আছে।’