Thursday, February 13, 2025

মেহেদি রাঙা দুই হাত ঝুলছিল অন্তরার

আরও পড়ুন

অন্তরার নিথর হাত রাঙা মেহেদিতে। দশম শ্রেণি পড়ুয়া মেয়ের লাশের পাশে মায়ের বিলাপ- ‘আমার অন্তরা দুই-হাতে মেন্দি লাগাইছিন। ছুডুবেলা থাইকা সাজুগুজু করতে পছন্দ করতো। আমার কত কষ্টের অন্তরা গো, অন্তরারে কিবায় (কীভাবে) বিদায় নিলো গো। মা (অন্তরা) তোমার দমডা (নিশ্বাস) কেমনে জানি গেছে গো, কত কষ্ট অইছে তোমার দমডা যাইতে গো।’

সোমবার (১৩ জানুয়ারি) বেলা ১১টার দিকে ময়মনসিংহের ঈশ্বরগঞ্জ থানায় মেয়ের নিথর দেহের পাশে এভাবেই বিলাপ করছিলেন অন্তরার মা নাসিমা খাতুন (৪২)।

মেয়েকে হারিয়ে বারবার তিনি মূর্ছা যাচ্ছিলেন নাসিমা খাতুন। আশপাশে দাঁড়িয়ে থাকা স্বজন–প্রতিবেশীরা নির্বাক।

দুপুরে অন্তরা আক্তার (১৫) মরদেহ ময়নাতদন্তের জন্য ময়মনসিংহ মেডিকেল হাসপাতালে পাঠায় পুলিশ। এর আগে গতকাল রোববার রাত সাড়ে ১০টার দিকে অন্তরার ঝুলন্ত মরদেহ উদ্ধার করে থানায় নিয়ে য়ায় পুলিশ।

আরও পড়ুনঃ  মদিনায় ৪০ বছর ধরে বিনামূল্যে চা-কফি বিতরণ করা সেই বৃদ্ধ আর নেই

মা নাসিমা খাতুনের দাবি, তার মেয়েকে কেউ হত্যা করে ঝুলিয়ে রেখেছে।

পরিবার ও স্থানীয়রা জানান, অন্তরা আক্তার ঈশ্বরগঞ্জ উপজেলার উচাখিলা ইউনিয়নের আমোদপুর প্রথম গ্রামের জসিম উদ্দিন ভূঁইয়ার মেয়ে। তিন ভাই ও দুই বোনের মাঝে অন্তরা সবার ছোট ছিল। অন্তরা ছিল তার বাবার দ্বিতীয় স্ত্রীর সন্তান। অন্তরা আক্তারের বাবা-মা ঢাকায় একটি কোম্পানিতে চাকুরির সুবাদে রাজধানীর তেজগাঁও মডেল হাই স্কুলের দশম শ্রেণিতে পড়তো। গত ৫ জানুয়ারি ঢাকা থেকে নিজেদের বাড়িতে আসে অন্তরা। গ্রামের বাড়িতে অন্তরা সৎ ভাইয়েরা বসবাস করত। অন্তরা বাড়িতে গিয়ে একাই ঘরে থাকে, নিজে রান্না করে খায়। তিনদিন আগে চাচাতো বোন লিজাকে নিয়ে অন্তরা নিজের হাতে মেহেদির আলপনা এঁকেছিল।

পরিবারের সদস্যরা জানায়, ঢাকা থেকে তার বাবা-মা প্রতিদিন ফোনে অন্তরার খোঁজ নিতেন। কিন্তু রোববার সারাদিন অন্তরার ফোন নম্বরে যোগাযোগের চেষ্টা করলেও তা বন্ধ দেখায়। পরে ওইদিন সন্ধ্যায় বাড়ির লোকজনের নম্বরে কল দিয়ে অন্তরার খোঁজ নিতে বলেন তার বাবা-মা। সন্ধ্যায় বাড়ির লোকজন অন্তরাদের ঘরের দরজা লাগানো দেখে ভাবে অন্তরা ঢাকা চলে গেছে। অন্তরার বাবা ফের কল করলে বাড়ির লোকজন রোববার রাত ৯টার দিকে অন্তরাদের টিনশেড ঘরের ছিদ্র দিয়ে দেখতে পান- ভেতর থেকে দরজা লাগিয়ে ঘরের আড়ার সঙ্গে গলায় ফাঁস দিয়ে ঝুলছে অন্তরা। এসময় তারা চিৎকার করলে স্থানীয়রা পুলিশে খবর দেয়। খবর পেয়ে আনুমানিক রাত সাড়ে ১০টার দিকে লাশ উদ্ধার করে থানায় নিয়ে যায় পুলিশ।

আরও পড়ুনঃ  মুফতি ইব্রাহীম কে হত্যার হুমকি ও অ্যাভেরোস স্কুল দখল চেষ্টা

অন্তরার বাবা জসিম উদ্দিন ভূঁইয়া বলেন, অন্তরা এক বছর ধরে মানসিক সমস্যায় ভুগছিল। বেশ কয়েকবার ডাক্তার দেখানো হয়েছিল। কিন্তু অবস্থার উন্নতি হয়নি।

পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, ঘরের আড়ায় সঙ্গে ওড়ানা পেঁচিয়ে গলায় ফাঁস লাগিয়ে ঝুলছিল অন্তরা। তার বিছানার বালিশের নীচ থেকে একটি স্মার্টফোন উদ্ধার করা হয়েছে। তবে অন্তরা ঠিক কী কারণে এমনটি করেছে তা বলতে পারছে না কেউ। প্রেমের সম্পর্কের টানাপোড়েনের কারণে অন্তরা আত্মহত্যা করতে পারে এমনটি ধারণা করছে পুলিশ।

আরও পড়ুনঃ  ঈদুল আজহার সম্ভাব্য তারিখ ঘোষণা

তবে নিহতের বড় বোন ঝিনুক আক্তার বলেন, কারও সঙ্গে অন্তরার প্রেমের সম্পর্ক ছিল কি না তা আমাদের জানা নেই। কেন সে আত্মহত্যা করলো তা বুঝতে পারছি না।

ঈশ্বরগঞ্জ থানার ওসি মো. ওবায়দুর রহমান কালবেলাকে বলেন, খবর পেয়ে রাতেই ঘটনাস্থল থেকে মরদেহ উদ্ধার করে সুরতহাল করা হয়। ময়নাতদন্তের জন্য লাশ ময়মনসিংহ মেডিকেল হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। পরবর্তী আইনগত ব্যবস্থা প্রক্রিয়াধীন রয়েছে।

আপনার মতামত লিখুনঃ

সর্বশেষ সংবাদ