কুমিল্লার নাঙ্গলকোটের একটি মসজিদের মুয়াজ্জিনকে তুলে নিয়ে পায়ে গুলি করার অভিযোগে ১০ বছর পর মামলা করেছেন ভুক্তভোগী। বুধবার (১২ মার্চ) কুমিল্লার জেলা ও দায়রা জজ আদালতে তিনি মামলাটি দায়ের করেন।
এতে নাঙ্গলকোট থানার তৎকালীন ওসি মো. নজরুল ইসলাম, ৭ পুলিশ সদস্য ও স্থানীয় আওয়ামী লীগের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতাসহ মোট ৩১ জনকে আসামি করা হয়েছে। মামলার বাদী বেলাল হোসেন মজুমদার (৫০) জেলার নাঙ্গলকোট উপজেলার দৌলখাঁড় ইউনিয়নের বাম পন্ডিতবাড়ি এলাকার আলী হায়দারের ছেলে। তিনি ঘটনার সময় স্থানীয় একটি মসজিদে মুয়াজ্জিনের দায়িত্ব পালন করতেন। বর্তমানে তিনি স্থানীয় ওয়ার্ড জামায়াতে ইসলামীর সভাপতি পদে আছেন।
মামলায় নাঙ্গলকোট থানার তৎকালীন ওসি নজরুল ইসলামকে ১ নম্বর আসামি করা হয়েছে। এ ছাড়া নাঙ্গলকোট থানার তৎকালীন উপ-পরিদর্শক (এসআই) বাবুল আলী, এসআই সালাউদ্দিন আহমেদ, কনস্টেবল সামছুল হুদা, শাহ আলম, মোক্তার হোসেন ও আবদুস সাত্তারকে আসামি করা হয়েছে। এর বাইরে নাঙ্গলকোট উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান ও কুমিল্লা দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি মো. সামছুদ্দিন, পৌরসভার সাবেক মেয়র আবদুল মালেকসহ আওয়ামী লীগের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতাদের আসামি করা হয়েছে।
মামলার আবেদনে উল্লেখ করা হয়, ২০১৫ সালের ৮ ফেব্রুয়ারি রাত ১১টার দিকে নাঙ্গলকোট থানার তৎকালীন ওসি নজরুল ইসলামের নির্দেশে বেলাল হোসেনের ঘরে প্রবেশ করেন তৎকালীন এসআই বাবুল আলী, সালাউদ্দিন আহমেদ, কনস্টেবল সামছুল হুদা, শাহ আলমসহ ৬ পুলিশ সদস্য। এ সময় পুলিশ বেলাল ও তার অনুসারী বেলায়েত হোসেনকে তুলে নিয়ে থানায় আটকে রাখে। পরে গভীর রাতে দুজনকে হত্যার উদ্দেশ্যে ঢাকা-নোয়াখালী আঞ্চলিক মহাসড়কের লুধুয়া এলাকায় এলোপাতাড়ি মারধর করে পুলিশ। একপর্যায়ে ওসি নজরুলের নির্দেশে দুজনের পায়ে গুলি করে এসআই বাবুল আলী, এসআই সালাউদ্দিন আহমেদসহ তাদের সঙ্গীয় ফোর্স। এ সময় গুলির শব্দ শুনে স্থানীয় লোকজন এগিয়ে এলে অভিযুক্ত পুলিশ সদস্যরা ফাঁকাগুলি করে আতঙ্ক সৃষ্টি করেন। পরে এগিয়ে আসা স্থানীয় লোকজনকে আহত দুই ব্যক্তিকে পুলিশ ভ্যানে তুলে দিতে বাধ্য করে পুলিশ।
এ সময় পুলিশ ভ্যানে করে ভুক্তভোগীদের প্রথমে নাঙ্গলকোট উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যাওয়া হয়। পরে ওই দুজনের বিরুদ্ধে নাঙ্গলকোট থানায় বিস্ফোরক আইনে মামলা করে তাদের গ্রেপ্তার দেখিয়ে কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। পরে ভুক্তভোগী দুজনের পায়ের অবস্থা অবনতি হওয়ায় কর্তব্যরত চিকিৎসক তাদের উন্নত চিকিৎসার তাগিদ দিলেও পুলিশ হেফাজতে থাকায় তাদের উন্নত চিকিৎসার জন্য ঢাকা নেয়া হয়নি। দুজনের মধ্যে বাদী বেলাল হোসেনের পায়ের অবস্থা বেগতিক হওয়ায় ২০১৫ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি চিকিৎসক তার বাঁ পা কেটে ফেলেন। তাতে তিনি পঙ্গু হয়ে পড়েন।
অপর ভুক্তভোগী বেলায়েতের পা কাটা না হলেও তিনি যথাযথ চিকিৎসার অভাবে মানবেতর জীবন যাপন করতে থাকেন।
বাদীপক্ষের আইনজীবী এবং কুমিল্লার নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল-১ এর রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী বদিউল আলম সুজন বলেন, আদালত অভিযোগটি গ্রহণ করেছেন। তবে কোনো আদেশ দেননি। বিজ্ঞ আদালত অভিযোগটি দেখে পরে আদেশ দেবেন বলে জানিয়েছেন।