Thursday, February 13, 2025

মুসলিমদের আক্রমণ করে বক্তব্য, তোপের মুখে মোদি

আরও পড়ুন

এবার ভারতে চলমান লোকসভা নির্বাচনের আবহে এবার মুসলিমদের নিশানা করে বক্তব্য দিয়ে কংগ্রেস ও অন্যান্য বিজেপিবিরোধী দলগুলোর তোপের মুখে পড়েছেন দেশটির প্রধানমন্ত্রী ও ক্ষমতাসীন বিজেপির শীর্ষ নেতা নরেন্দ্র মোদি।

এদিকে বিজেপিবিরোধী রাজনৈতিক জোট ইন্ডিয়াভুক্ত দলগুলো বলছে, দেশের সংখ্যাগুরু হিন্দু সম্প্রদায়ের ভোট টানতে ইচ্ছাকৃতভাবে সাম্প্রদায়িকতা উস্কে দিচ্ছেন তিনি। বিজেপি থেকে অবশ্য এখন পর্যন্ত এই অভিযোগের কোনো প্রতিবাদ জানানো হয়নি।

গতকাল রোববার রাজস্থানের বাঁশওয়াড়ার এক জনসভায় বক্তব্য দেন নরেন্দ্র মোদি। সেখানে তিনি বলেন, কংগ্রেস নেতৃত্বাধীন জোট যদি এবারের নির্বাচনে জয়ী হয়, তাহলে দেশের সব সম্পদ সেই সব লোকজনের মধ্যে বণ্টন করে দেবে মুসলিমদের মধ্যে, যারা ‘অনুপ্রবেশকারী’ এবং যাদের ‘সন্তান বেশি হয়’।

‘যখন কংগ্রেসের সরকার ক্ষমতায় ছিল—মনমোহন সিং (ভারতের সাবেক প্রধানমন্ত্রী) বলেছিলেন, দেশের সম্পদে সবার আগে মুসলিমদের অধিকার রয়েছে। এবার তারা (কংগ্রেস-ইনডিয়া জোট) তা বাস্তবায়ন করবে। কংগ্রেস তাদের ইশতেহারে উল্লেখ করেছে, ক্ষমতায় গেলে আপনার রোজগারের অর্থ তারা মুসলিমদের মধ্যে বিলিয়ে দেবে।

আরও পড়ুনঃ  চুরির অপবাদে শিশু নির্যাতন, গাছে মায়ের ঝুলন্ত মরদেহ

মা-বোনদের কাছে থাকা সোনা-রূপার হিসাব করা হবে, তারপর তা বিলিয়ে দেওয়া হবে তাদের মধ্যে, যারা অনুপ্রবেশকারী এবং যাদের বাচ্চা-কাচ্চা বেশি হয়। মা-বোনদের মঙ্গলসূত্রও রেহাই পাবে না। শহুরে নকশালরা সব উজাড় করে দেভে। এর পরও কি আপনারা তাদের (কংগ্রেস-ইনডিয়া জোট) ভোট দেবেন,’ জনসভায় বলেন নরেন্দ্র মোদি।

বক্তব্যে কংগ্রেসের সাবেক সভানেত্রী সোনিয়া গান্ধীকেও আক্রমণ করেছেন মোদি। নাম উল্লেখ না করে তার সম্পর্কে বলেছেন, ‘যারা ভোটে জিততে পারে না,তারা মাঠ ছেড়ে পালিয়ে রাজ্যসভার সদস্য হয়েছেন।’ সংবাদপত্র ও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে নরেন্দ্র মোদির বক্তব্য প্রকাশিত হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে তার তীব্র সমালোচনা শুরু করে কংগ্রেস এবং ইনডিয়া জোটভুক্ত রাজনৈতিক দলগুলো।

আরও পড়ুনঃ  রাত থেকেই পরিস্থিতি খারাপ হওয়ার আশঙ্কা, আসছে মহাবিপদ সংকেত

কংগ্রেসের সর্বভারতীয় সভাপতি মল্লিকার্জুন খাড়্গে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে এক প্রতিক্রিয়ায় বলেন, ‘আজ মোদিজি যে বেপরোয়া বক্তব্য দিলেন, তাতে স্পষ্ট বোঝা যাচ্ছে যে ভোটের প্রথম দফায় ইনডিয়া জোটের এগিয়ে যাওয়ায় তিনি হতাশ হয়েছেন। এ কারণে জনগণের মনোযোগ অন্যদিকে সরাতে ঘৃণা ভাষণের আশ্রয় নিয়েছেন। বিরোধীরা যা করেনি, তা বলে জনগণকে বিপথগামী করার চেষ্টা করছেন।’

এদিকে কংগ্রেসের শীর্ষ নেতা রাহুল গান্ধী বলেন, ‘মনমোহন সিং মুসলিমদের কর্মসংস্থান ও ক্ষমতয়নের কথা বলেছিলেন। তার সেই বক্তব্যকে বিকৃতভাবে উপস্থাপনের মধ্যে দিয়ে পরিষ্কার বোঝা গেলো যে মিথ্যাভাষণে মোদি এতটাই নিচে নেমে গেছেন যে এখন তিনি মানুষকে বিভ্রান্ত করতে চাইতেন। এটা খুবই হতাশাজনক।’

ইনডিয়া জোটের অন্যতম সদস্য এবং উত্তরপ্রদেশের প্রধান বিরোধী দল সমাজবাদী পার্টির প্রেসিডেন্ট অখিলেশ যাদব বলেন, ‘মোদি যে মিথ্যা বলেন, তা শুধু দেশবাসীই নয়, গোটা পৃথিবী জানে। যেভাবে তিনি কংগ্রেসের ‘ন্যায়পত্র’ ও মনমোহন সিংয়ের নামে মিথ্যা অপবাদ দিলেন, তা নোংরা রাজনীতির উদাহরণ। তৃণমূল কংগ্রেসের মুখপাত্র সাকেত গোখলে মোদিকে উদ্দেশ্য করে এক টুইটবার্তায় বলেন, ‘মোদিজি, ক্ষমতার ব্যবহার করুন, অপব্যবহার নয়।’

আরও পড়ুনঃ  ইইউ রাষ্ট্রদূতের সঙ্গে ফখরুলের বৈঠক

অল ইন্ডিয়া মজলিশ-ই-ইত্তেহাদুল মুসলিমিনের প্রেসিডেন্ট ও লোকসভার সদস্য আসাদউদ্দিন ওয়েইসি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সে বলেন, ‘২০০২ সাল থেকে আজ পর্যন্ত মোদি একটিই গ্যারান্টি দিয়েছেন— মুসলমানদের অপমান করা ও তাদের সঙ্গে দুর্ব্যবহার করা। ভোট পাওয়ার জন্য তিনি এসব করেন। মোদির আমলেই দেশের ১ শতাংশ মানুষের হাতে পুঞ্জীভূত হয়েছে ৪০ শতাংশ সম্পদ। সাধারণ হিন্দুদের তিনি মুসলমানদের ভয় দেখাচ্ছেন অথচ তাদের সম্পদ কেড়ে ঘনিষ্ঠদের ধনী করছেন।’

আপনার মতামত লিখুনঃ

সর্বশেষ সংবাদ