দেশ স্বাধীন হওয়ার থেকে ২০২২-২৩ অর্থবছর পর্যন্ত ১১ লাখ ৯২ হাজার ৮১৫ কোটি টাকা বিদেশে পাচার হয়েছে। যার মধ্যে ০.৪৯ শতাংশ উদ্ধারের প্রস্তাব দিয়েছে বাংলাদেশ অর্থনীতি সমিতি। যার পরিমাণ হবে ৫ হাজার কোটি টাকা।
সোমবার (৩ জুন) অর্থনীতি সমিতির অডিটরিয়ামে “বাংলাদেশ অর্থনীতি সমিতির বিকল্প বাজেট প্রস্তাবনা ২০২৪-২৫ : উন্নত বাংলাদেশ অভিমুখী বাজেট” শীর্ষক সংবাদ সম্মেলন সমিতির সভাপতি ড. কাজী খলীকুজ্জমান আহমদ ও সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক ড. মো. আইনুল ইসলাম ওই প্রস্তাব উপস্থাপন করেন। এ সময় অর্থনীতি সমিতি সাবেক সভাপতি অধ্যাপক ড. আবুল বারকাত উপস্থিত ছিলেন।
কালো টাকা প্রসঙ্গে সমিতির সাবেক সাধারণ সম্পাদক ড. জামাল উদ্দিন বলেন, এসব টাকা ঊদ্ধারে রাজনৈতিক স্বদিচ্ছা দরকার। অর্থনীতিকে পরিচালিত করে রাজনীতি। সঠিক লাইনে ব্যবস্থা নিলে পদ্ধতি আছে। ডিজিটাল পেমেন্ট সিস্টেম অন্যতম। এটা শতভাগ করতে পারলে কালো টাকার অবস্থান বের করা সম্ভব।
এবিষয়ে আবুল বারকাত বলেন, অর্থ মন্ত্রণালয় একটি গবেষণা করেছিল, যা প্রকাশ হয়নি। সেখানে বলা হয়েছিল বাংলাদেশে কালো টাকার পরিমাণ জিডিপির ৩৩ থেকে ৬৬ শতাংশ হতে পারে। অর্থনীতি সমিতির হিসাবে প্রতি বছরে গড়ে ৩৩ শতাংশের মতো কালো টাকার হিসাব দিয়েছে।
২০২৪-২৫ অর্থবছরের জন্য ১১ লাখ ৯৫ হাজার ৪৮৬ কোটি টাকার বিকল্প বাজেট প্রস্তাব করেছে অর্থনীতি সমিতি। যার আকার চলতি ২০২৩-২৪ অর্থবছরে সরকারের বাজেটের চেয়ে ১ দশমিক ৫৭ গুণ বেশি।
অর্থনীতি সমিতির বিকল্প বাজেটে ১০ লাখ ২৪ হাজার ১১২ কোটি টাকা আসবে রাজস্ব থেকে। অন্যদিকে ১ লাখ ৭০ হাজার ৭১৯ কোটি টাকা ঘাটতি থাকবে। ঘাটতি পূরণে বৈদেশিক ঋণ এবং ব্যাংক ঋণের উপর নির্ভর করতে চায় না প্রতিষ্ঠানটি।
বিকল্প বাজেটে সরকারের আয়ের উৎস হিসেবে ২৭টি নতুন উৎসের প্রস্তাব করা হয়েছে। যার মধ্যে রয়েছে অতিরিক্ত মুনাফার ওপর কর, সেবা থেকে প্রাপ্ত কর, বিদেশি পরামর্শক ফি ইত্যাদি। এই বাজেটে ২৪টি বিষয়ে ৩৪১টি সুপারিশ করা হয়েছে।
আগামী ১০ বছরে ৭টি লক্ষ্য অর্জনের জন্য এ বিকল্প বাজেট প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে বলে জানান আইনুল ইসলাম। এগুলো হলো- ৭০-৮০ শতাংশ মানুষকে মধ্যবিত্ত শ্রেণিতে উন্নীত করা, বৈষম্য সর্বনিম্ন পর্যায়ে নামিয়ে আনা, ধনির সম্পদ দরিদ্র ও নিম্ন আয়ের মানুষের মধ্যে বণ্টন, উন্নয়নে দেশজ অর্থনীতিকে সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব, মানুষকে বিজ্ঞানমনস্ক ও আলোকিত করার সুযোগ তৈরি এবং শোভন কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি করা। তিনি আরও বলেন, প্রস্তাবিত বাজেটে কোনো বৈদেশিক ঋণের প্রয়োজন হবে না। এই বাজেট বাস্তবায়ন হলে দেশের সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষকে দরিদ্র-নিম্নবিত্ত শ্রেণির অবস্থান থেকে শক্তিশালী-টেকসই একটি মধ্য-মধ্যবিত্ত শ্রেণি অবস্থানে উত্তরণ করা সম্ভব।
কালো টাকা প্রসঙ্গে অর্থনীতি সমিতি বলছে, ১৯৭২-৭৩ অর্থবছর থেকে ২০২২-২৩ পর্যন্ত ৫০ বছরে কালো টাকা ১ কোটি ৩২ লাখ ৫৩ হাজার ৫০০ কোটি টাকা। আসন্ন বাজেটে মাত্র শূন্য দশমিক ৯৮ শতাংশ উদ্ধারের সুপারিশ করছি। সেখান থেকেই আহরণ হবে ১০ হাজার কোটি টাকা।
এর আগে গত ২০২৩-২৪ অর্থবছরের জন্য ২০ লাখ ৯৪ হাজার ১১২ কোটি টাকার বিকল্প বাজেট পেশ করেছিল বাংলাদেশ অর্থনীতি সমিতি।
এদিকে ৬ জুন ২০২৪-২৫ অর্থবছরের জন্য ৭ লাখ ৯৬ হাজার ৯০০ কোটি টাকার বাজেট উত্থাপন করতে পারেন অর্থমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ।
সুত্রঃ কালবেলা