কোরবানির ঈদে মাংস-ভাত খেতে কার না ইচ্ছে হয়! কিন্তু পশু কোরবানি দেয়ার সাধ্য তো নেই সবার। এক টুকরো মাংস পেতে বাড়ি বাড়ি ঘুরেন অনেকেই। কখনো জুটে আবার কখনো বা না। তবে কিছু মাংসের আশায় দিনভর ছুটে চলেন তারা। তবুও যদি পরিবারের সবাইকে নিয়ে মুখে তোলা যায় এক টুকরো মাংস। এ তালিকায় বৃদ্ধ-নারী-পুরুষ ছাড়াও শিশুদেরও দেখা যায়। তাদের কথা মাথায় রাখেইবা কজন। তাদের তিক্ত অভিজ্ঞতার কথা শুনব আজ।
গ্রাম থেকে শহরের সব অলিগলিতে পশু কোরবানির পর দাতারা যখন মাংস প্রক্রিয়াজাতকরণে ব্যস্ত তখন এক দু-টুকরো মাংসের জন্য এদিক-ওদিক ছোটাছুটি করে মানুষগুলো।
ঈদুল আজহার দিনে সোমবার (১৭ জুন) দুপুরের পর কোরবানির মাংসের জন্য বাগেরহাটে শহরের বিত্তশালীদের বাড়ির গেটের সামনে ভিড় করতে দেখা যায় অনেককে। তারা শুধু এক টুকরো মাংস চায়, তাড়িয়ে দিলেও বারবার হাত বাড়ায়।
কোরবানির মাংস নিতে আসা বৃদ্ধা মনোয়ারা বেগম বলেন, ‘আমরা বাবা গরীব মানুষ। কোরবানির ঈদে আমাদের একটা হক আছে। কিন্তু বড়লোক মানুষ এটা মানতে চায় না। বাড়ির সামনে গেলে তাড়িয়ে দেয়। আবার কখনও ধাক্কা দিয়ে বের করে দেয়। তাদের কছে তো শুধু এক টুকরো মাংস চাই, তাড়িয়ে দিলেও বারবার হাত বাড়াই ! তবু্ও যদি এক টুকরো মাংস দেয়।’
রামপাল বাশতিলী থেকে মাংস নিতে আশা আকলিমা বেগম বলেন, ‘আমাদের গ্রামে কয়েক বছর থেকে তেমন পশু কোরবানি হয় না। তাই তো এক টুকরো মাংসের আশায় ঈদের মতো উৎসবের দিনেও ব্যাগ নিয়ে আসতে বাধ্য হয়েছি।’
কাদের হাওলাদার বলেন, ‘আমরা গরীব মানুষ আমাদের কোরবানি দেয়ার সামর্থ্য নাই। দুই একটা পিস মানুষের কাছে চেয়ে বছরের একটা দিন খেতে পারি। অন্যের বাড়িতে থাকি, অন্যের বাড়িতে কাজ করি, মাংস খাওয়া কি আমাদের ভাগ্যে আছে। এই কোরবানির ঈদে অপেক্ষায় থাকি মাংস সংগ্রহ করে সন্তানদের নিয়ে একবেলা খাব।’
মাংস সংগ্রহ করতে আসা শিশু আশরাফুল বলেন, ‘দিনে তো ভালোভাবে এক বেলা খেতেই পাই না, সেখানে গরুর মাংস খাওয়া তো স্বপ্নের ব্যাপার। মাংস সংগ্রহ করতে আসছি, যা পাই বাবা মাকে নিয়ে খাব।’
কোরবানি দেয়া শিমুল তালুকদার বলেন, বছর জুড়ে কোরবানি ঈদের মতো একটি দিনের জন্য যারা অপেক্ষা করে তারা দরিদ্র মানুষ। নুন আনতে যাদের পান্তা ফুরোয় মাংস কেনা যাদের কাছে বিলাসিতা এই কোরবানি ঈদে স্বপ্ন জাগে মাংস-ভাতের। তাই একটু সহানুভূতিশীল হওয়া উচিত আমাদের।
জেলা প্রাণিসম্পদের কর্মকর্তা মোহাম্মদ সাহেব আলী বলেন, এবার জেলায় প্রায় এক লাখ পাঁচ হাজার গবাদিপশু কোরবানি করা হয়েছে। সমাজের বিত্তবানদের উচিত সমাজের নিম্নআয়ের মানুষের পাশে দাঁড়ানো, এতে ঈদের আনন্দ বেড়ে যাবে। আশপাশের কেউ যেন এমন দিনে মাংস না খেয়ে থাকে এই বিষয়টিতে নজর দেয়া উচিত।
বাগেরহাটের জেলা প্রশাসক মো. খালিদ হোসেন বলেন, সবার জন্য যেন ঈদুল আজহা হয়। আমরা জানি কোরবানির পশুর মাংসকে তিন ভাগ করা হয়। এক ভাগ নিজের, এক ভাগ আত্মীয়-স্বজন এবং একভাগ গরিব মানুষের জন্য। সবাই এ নীতি অবলম্বন করলেই সমাজ সুন্দর হয়ে উঠবে।