ভারতকে ব্যবহার করে শেখ হাসিনার প্রচারণা চালানো বিপজ্জনক: গার্ডিয়ানকে ড. ইউনূস
১৫ বছরের স্বৈরাচারী শাসনের পর ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে গত ৫ আগস্ট ক্ষমতাচ্যুত হয়ে দেশ ছেড়ে পালিয়ে ভারতে আশ্রয় নেন শেখ হাসিনা।
এরপর অভ্যুত্থানে নেতৃত্বদানকারী শিক্ষার্থীরা শান্তিতে নোবেলজয়ী অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে যোগাযোগ করে দেশের দায়িত্বভার গ্রহণ করার অনুরোধ জানান।
হাসিনার শাসনামলে ‘ভয়াবহ’ বিপর্যস্ত বাংলাদেশে গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারে অন্তর্বর্তী সরকারের নেতৃত্ব দিতে রাজি হন ড. ইউনূস।
সরকারের প্রথম অধ্যায় শেষ, দ্বিতীয় পর্ব শুরু: ড. ইউনূস
গত ৮ আগস্ট অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা হিসেবে শপথ গ্রহণের পর ড. ইউনূসের নেতৃত্বে নতুন যুগে প্রবেশ করেছে বাংলাদেশ। রাষ্ট্রীয় বিভিন্ন খাতে গুরুত্বপূর্ণ সংস্কারের কাজ শুরু হয়েছে, শুরু হয়েছে বিচারবহির্ভূত হত্যার বিচার।
ব্রিটিশ গণমাধ্যম দ্য গার্ডিয়ানের সাংবাদিক হান্না এলিস-পিটারসেনকে সাক্ষাৎকার দিয়েছেন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস।
আজ সোমবার প্রকাশিত প্রতিবেদনে ড. ইউনূস শেখ হাসিনা পালিয়ে যাওয়ার পর দেশের সেসময়ের পরিস্থিতি তুলে ধরেন। তিনি বলেন, ‘তিনি (হাসিনা) যে ক্ষতি করেছেন তা ছিল ভয়াবহ। এটি ছিল আরেকটি গাজার মতো, পুরোপুরি বিধ্বস্ত একটি দেশ। তবে এখানে ভবন নয়, বরং ধ্বংস হয়েছে সব প্রতিষ্ঠান, নৈতিকতা, জনগণ, আন্তর্জাতিক সম্পর্ক।’
ড. ইউনূস দেশের ভয়াবহ ওই পরিস্থিতি কাটাতে দৃঢ়প্রতিজ্ঞ। তিনি বলেন, ‘হাসিনার শাসন কোনো সরকার না, ছিল দস্যু পরিবার। বসের আদেশ পেলে কাজ হয়।’
হাসিনার শাসনামল প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘কেউ সমস্যা করছে? তাদের গুম করে দেব। নির্বাচন করতে চান? আমরা আপনাকে সব আসনে জয়ের নিশ্চয়তা দেব। টাকা চান? ব্যাংক থেকে এক মিলিয়ন ডলার ঋণ নেন, কখনো ফেরত দিতে হবে না।’
‘সরকারের সক্রিয় অংশগ্রহণে ব্যাংকগুলোকে জনগণের টাকা লুটের পূর্ণ লাইসেন্স দেওয়া হয়েছিল। কর্মকর্তাদের বন্দুক দিয়ে পাঠিয়ে সবকিছু সই করিয়ে নিত,’ বলেন ড. ইউনূস।
ভারতে আশ্রয় নিয়ে শেখ হাসিনা নতুন বাংলাদেশ নিয়ে অপপ্রচার চালাচ্ছেন এবং এতে দেশ অস্থিতিশীল হচ্ছে বলে মনে করেন ড. ইউনূস। তিনি বলেন, ‘ভারত তাকে আশ্রয় দিচ্ছে, এটা মানা যায়। কিন্তু আমরা যা যা করছি, ভারতকে ব্যবহার করে তা নষ্ট করার প্রচারণা চালাতে দেওয়াটা বিপজ্জনক। এটি দেশকে অস্থিতিশীল করে তোলে।’
প্রতিবেদনে বলা হয়, ভারত সরকারই ড. ইউনূসের একমাত্র সমস্যা নয়। গার্ডিয়ান বলছে, মার্কিন প্রেসিডেন্ট হিসেবে ডোনাল্ড ট্রাম্পের হোয়াইট হাউসে ফিরে আসাও ড. ইউনূসের জন্য সুসংবাদ নয়।
তবে, ড. ইউনূসের মনে করেন, বাংলাদেশে ট্রাম্প ‘বিনিয়োগের ভালো সুযোগ’ এবং ‘বাণিজ্যিক অংশীদার’ হিসেবে দেখতে পারেন। তিনি বলেন, ‘ট্রাম্প একজন ডিলমেকার। তাই আমি তাকে বলছি, আমাদের সঙ্গে ডিলে আসুন। তিনি যদি তা না করেন, তাহলে বাংলাদেশ কিছুটা কষ্ট পাবে। কিন্তু, এই গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া থামবে না।