আমেরিকার বাজারে টিকটক নিষিদ্ধ হওয়ার বিষয়ে জল গড়িয়েছে অনেক দূর। গত এপ্রিলে মার্কিন কংগ্রেসে পাস হওয়া বিলে স্বাক্ষর করার মাধ্যমে প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন টিকটক নিষিদ্ধের বিষয়টিকে আইনে পরিণত করেন। এরপর আদালতের দ্বারস্থ হয়েও সুফল পায়নি টিকটক ও এর মালিক প্রতিষ্ঠান বাইটড্যান্স। এবার আইনটি বাতিলের দাবি জানিয়ে সুপ্রিম কোর্টে করা আবেদনের প্রেক্ষিতে টিকটক ও বাইটড্যান্স-এর কথা শুনবে বলে জানিয়েছে দেশটির সর্বোচ্চ আদালত (সুপ্রিম কোর্ট)।
উল্লেখ্য, স্বল্প দৈর্ঘ্যের ভিডিও হোস্টিং প্ল্যাটফফর্ম টিকটিক আমেরিকায় বেশ জনপ্রিয়। ইন্দোনেশিয়ার পর অ্যাপটি সবচেয়ে বেশি ব্যবহার করেন আমেরিকানরা। চীনের বাইটড্যান্সের মালিকানাধীন এই প্ল্যাটফর্মটির বৈশ্বিক ব্যবহারকারীর সংখ্যা ১০০ কোটিরও বেশি, যার মধ্যে আমেরিকাতেই রয়েছে ১৭ কোটি ব্যবহারকারী।
আমেরিকায় টিকটকের যাবতীয় সমস্যার মূলে রয়েছে তাঁদের চীনা মালিকানা। দেশটির আইন বিভাগের দাবি অনুযায়ী, বাইটড্যান্সের মাধ্যমে চীনা সরকার আমেরিকার জনগণের বিভিন্ন সংবেদনশীল তথ্য (যেমন: প্রাইভেট মেসেজ) অ্যাক্সেস করতে পারছে। পাশাপাশি টিকটকের মাধ্যমে তাঁদের জনগণের উপর চীনা নজরদারিও অব্যাহত আছে বলে দাবি বিচার বিভাগের।
মূলত এই জাতীয় নিরাপত্তা সম্পর্কিত ঝুঁকির কারণেই টিকটক নিষিদ্ধের মতো কঠোর সিদ্ধান্তের পথে হেঁটেছে বাইডেন প্রশাসন। গত এপ্রিলে বাইডেন প্রণীত আইনটি টিকটকের সামনে আগামী ১৯ জানুয়ারি পর্যন্ত সময় বেঁধে দিয়েছে। এই সময়ের মধ্যে টিকটককে চীনা মালিকানামুক্ত হতে হবে, অন্যথায় আমেরিকা’তে নিষিদ্ধ করা হবে অ্যাপটিকে।
তবে টিকটক ও বাইটড্যান্স আমেরিকার জাতীয় নিরাপত্তা ঝুঁকির বিষয়টিকে নাকচ করে দিয়েছে। তাঁরা বলছে, আমেরিকার টিকটক ব্যবহারকারীদের সকল তথ্য আমেরিকার ডেটা সেন্টারেই রয়েছে। ফলে চীন সরকারের পক্ষে এগুলো অ্যাক্সেস করা একেবারেই সম্ভব নয়।
আর সে কারণেই নতুন এই আইনটিকে আদালতে চ্যালেঞ্জ জানিয়ে আসছে টিকটক ও বাইটড্যান্স। তাঁদের দাবি, বাইডেন সরকারের এই আইন দেশটির সংবিধানের প্রথম সংশোধনীতে দেওয়া ‘বাক স্বাধীনতার অধিকার’-এর পরিপন্থী। ফলে আইনটি অসাংবিধানিক। এই যুক্তি পেশ করেই আদালতে তাঁরা আইনটি বাতিল করার আবেদন জানিয়েছে। কিন্তু তাঁদের এই আবেদনে আমেরিকার নিম্ন আদালত কর্ণপাত করেনি।
ফলে অস্তিত্ব সংকটে ভোগা টিকটকের শেষ ভরসা এখন দেশটির সর্বোচ্চ আদালত। গত সোমবার (১৬ ডিসেম্বর) টিকটক ও বাইটড্যান্স আমেরিকার সুপ্রিম কোর্টে আইনটিকে স্থগিত করার আবেদন জানায়। তাঁদের আবেদনের প্রেক্ষিতে গতকাল (১৮ ডিসেম্বর) সুপ্রিম কোর্ট জানিয়েছে, আগামী ১০ জানুয়ারি টিকটক ও বাইটড্যান্সের প্রতিনিধিদের কথা শুনবে আদালত। শুনানি শেষে দেশটি’তে টিকটকের ভাগ্য নির্ধারণ করবে সুপ্রিম কোর্টের বিচারক।
ফলে আগামী ১৯ জানুয়ারি টিকটকের ভাগ্যে কি হতে চলেছে সেটা অনেকাংশেই এখন নির্ভর করছে ১০ জানুয়ারির উপর।