Saturday, February 1, 2025

শিক্ষকদের রুমে তালাসহ অনেক ছাত্রকে হল ছাড়তে হুমকি দিচ্ছে শেকৃবি ছাত্রদলের নেতাকর্মীরা

আরও পড়ুন

ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে রাজনৈতিক পট-পরিবর্তনের পর বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রভাব বিস্তার শুরু করেছে শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রদল। হল প্রশাসনের অনুমতি ছাড়াই ছাত্রদলের পরিচয়ে হলের রুমে রুমে গিয়ে শিক্ষার্থীদের তথ্য সংগ্রহ, সাধারণ শিক্ষার্থীদের সঙ্গে অসদাচরণ, সিট ছাড়তে চাপ প্রয়োগসহ একাধিক অভিযোগ উঠেছে ছাত্রদলের নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে।

মধ্যরাতে বিভিন্ন সময় বিশ্ববিদ্যালয়ের হলগুলোতে গিয়ে প্রায় ১০ এর অধিক শিক্ষার্থীকে হল ছাড়ার জন্য হুমকি দিয়েছে তারা। হুমকি দাতাদের মধ্যে জিব্রিল শরীফ, সাজু ইসলাম, রাশেদ, আহসান হাবীব, হামিদুর রহমান হিমেলসহ ১২ জনের নাম জানা গেছে। শিক্ষার্থীদের মধ্যে কাউকে হল ছাড়তে নির্দিষ্ট সময় বেধে দেয়া হয়েছে, আবার কাউকে তাৎক্ষণিক হল ছাড়তে বলা হয়েছে।

শিক্ষার্থীদের অভিযোগ, আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে হলে থাকা ছাত্রদের তথ্য এভাবে তালিকা করে রাখত ছাত্রলীগ। কিন্তু ৫ আগস্টে সরকার পতনের পর তা আবারও শুরু করেছে ছাত্রদলের একাংশ।

ভুক্তভোগী শিক্ষার্থীরা জানান, ছাত্রলীগের রাজনীতির সাথে যুক্ত থাকলেও জুলাইয়ের আন্দোলনের পক্ষে অবস্থান নিয়েছিলেন তারা। এর পরেও হল থেকে বের করে দেয়াকে তাদের প্রতি অন্যায় করা হচ্ছে বলে মনে করছেন ভুক্তভোগীরা।

আরও পড়ুনঃ  শিক্ষা সিলেবাসে ইসলামপন্থিদের নিয়ে বৈষম্যমূলক ইতিহাস বাতিলের দাবি

এ বিষয়ে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ছাত্রদল সমর্থিত এক শিক্ষার্থী বলেন, জুলাই আন্দোলনে যারা সরাসরি ছাত্রদের বিরোধীতা করেছিলো, লাঠি হাতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় গেছিলো, ফেসবুকে সরব ছিলো, যারা তখন আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের হলে থাকতে দেয়নি, সেসকল শিক্ষার্থীদের কিভাবে এখনো হলে থাকার সুযোগ দেয়া হয়। কোনো শিক্ষার্থীকেই ব্যক্তিগত আক্রোশ থেকে কিছু বলা হয়নি। যারা সরাসরি এসকল কর্মকাণ্ডের সাথে যুক্ত ছিলো তাদেরকেই বলা হয়েছে।

এছাড়াও শিক্ষকদের রুমে তালা দেওয়া, ক্যাম্পাসের আশেপাশে দোকানগুলোতে প্রভাব বিস্তারসহ নানান অভিযোগ উঠেছে শেকৃবি শাখা ছাত্রদলের বিরুদ্ধে ।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, কৃষি অনুষদের অধ্যাপক ড. নজরুল ইসলাম, অধ্যাপক ড. হারুন-উর-রশীদ, অধ্যাপক ড. আয়েশা আক্তার, সহযোগী অধ্যাপক ড. দেবু কুমার ভট্টাচার্য, সহযোগী অধ্যাপক রুহুল আমিন সহ দুইজন কর্মকর্তার রুম তালা বদ্ধ করে দেয় ছাত্রদল সমর্থিত আহসান হাবীব, জিব্রিল শরীফ, রাশেদসহ কয়েকজন শিক্ষার্থী।

আরও পড়ুনঃ  সিরিয়া শুধুই সিরীয়দের: এরদোয়ান

শিক্ষকদের রুমে তালা দেয়া নিয়ে জিব্রিল শরীফ বলেন, যে সকল শিক্ষক ছাত্র আন্দোলনের সরাসরি বিরোধিতা করেছিলো, যারা নিয়োগ বাণিজ্যের সাথে জড়িত তাদের বিরুদ্ধে প্রশাসনের পদক্ষেপ গ্রহণে দীর্ঘসূত্রিতার জন্যই আমরা প্রতিবাদ স্বরূপ এই পদক্ষেপ গ্রহণ করি। হল থেকে বের করে দেয়ার ব্যাপারে তিনি বলেন, যারা ছাত্রলীগের রাজনীতির সাথে জড়িত ছিল এবং জুলাই আন্দোলনের সরাসরি বিরোধিতা করেছে শুধুমাত্র তাদের হল থেকে বেরিয়ে যেতে বলা হয়েছে। লিস্টের বাইরে কোনো শিক্ষার্থীকেই ব্যক্তিগত আক্রোশ থেকে বলা হয়নি।

এছাড়াও আশেপাশের দোকানগুলোতে প্রভাব বিস্তার, বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রদলের নেতাকর্মীদের আত্মীয়-স্বজনের ও অনুসারীদের দ্বারা ফুটপাতে দোকান স্থাপন, দোকান থেকে চাঁদা দাবির ও অভিযোগ রয়েছে। যদিও সেসব অভিযোগের বিষয়ে কিছুই জানেনা বলে দাবি অভিযুক্ত নেতাকর্মীদের ।

জানা গেছে, এসব কর্মকাণ্ডে সভাপতি-সম্পাদকের ইশারা থাকলেও অভিযোগের দায় নিতে নারাজ তারা।

এ বিষয়ে ছাত্রদলের শেকৃবি শাখার সাধারণ সম্পাদক আলমগীর কবির বলেন, শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রদলের লিখিত সদস্য ব্যাতিত কারো কাজের দায়ভার ছাত্রদল নিবে না। এছাড়াও আমি ব্যাক্তিগতভাবে এসকল বিষয় সম্পর্কে অবগত নই।

আরও পড়ুনঃ  ভোলা থেকে ৫২০ মণ জাটকা আটক

বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের এমন অপদস্থের ঘটনায় নীরব ভূমিকায় দেখা গেছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনকে। প্রক্টরকে পূর্বে ছাত্রদলের ব্যানারে মানববন্ধনে দাঁড়াতে দেখা যাওয়ায় তিনি সাধারণ শিক্ষার্থীদের জন্য কাজ করছেন নাকি ছাত্রদলের জন্য সেটি নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন একাধিক শিক্ষার্থী। যার ফলে এমন অপ্রীতিকর ঘটনায় আদৌ বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থী কিংবা শিক্ষকদের সহযোগিতা করবেন কিনা প্রশ্ন দেখা দিয়েছে।

বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক ড. মোঃ আরফান আলী বলেন, বিষয়গুলো সম্পর্কে আমি অবগত হয়েছি। আর কোনো শিক্ষার্থীদের যেন হল থেকে বের করে না দেয় এবং বিশ্ববিদ্যালয়ে যেন কোনো অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা না ঘটে সে জন্য আমরা ব্যবস্থা নিয়েছি। এছাড়াও যে সকল শিক্ষার্থীরা শিক্ষকদের রুমে তালা দিয়েছে তাদের চিহ্নিতকরার চেষ্টা করছি।

আপনার মতামত লিখুনঃ

সর্বশেষ সংবাদ