জুমাবার হলো সপ্তাহের শ্রেষ্ঠ দিন। বিশেষ এই দিনে বান্দার জন্য রয়েছে অশেষ ফজিলত। পবিত্র কুরআনে জুমা নামে একটি সুরাও রয়েছে। যেখানে মহান এই দিনের অশেষ ফজিলতের বর্ণনা রয়েছে। অন্যদিকে, জুমা আদায়কে ফরজ করা হয়েছে। হাদিসে এসেছে, যে ব্যক্তি অবহেলা করে তিন জুমা পরিত্যাগ করে, আল্লাহ তার হৃদয় মোহরাঙ্কিত করে দেন (তিরমিজী, হাদিস: ৫০০)।
এ ক্ষেত্রে জুমার দিনে গোসল, মিসওয়াক, সুগন্ধি ব্যবহারসহ উত্তম কাপড় পরিধান করে মসজিদে যাওয়ার কথা অনেক হাদিসে এসেছে। সালমান ফারসী (রা.) বলেন, রাসুল (সা.) বলেছেন- যে ব্যক্তি জুমার দিন গোসল করে এবং যথাসম্ভব উত্তমরূপে পবিত্রতা অর্জন করে, এরপর তেল মেখে নেয় অথবা সুগন্ধি ব্যবহার করে, তারপর মসজিদে যায়, আর দু’জনের মধ্যে ফাঁক করে না এবং তার ভাগ্যে নির্ধারিত পরিমাণ সালাত (নামাজ) আদায় করে। আর ইমাম যখন (খুতবার জন্য) বের হন তখন চুপ থাকে। তার এ জুমা এবং পরবর্তী জুমার মধ্যবর্তী যাবতীয় গুনাহ মাফ করে দেয়া হয়। (সহিহ বুখারি, হাদিস: ৮৬৪)
অন্যদিকে, জুমার দিনে আগেভাগে মসজিদে যাওয়ার কথাও হাদিসে এসেছে। এ ক্ষেত্রে বান্দার জন্য রয়েছে বিশেষ সওয়াব। আবূ হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন- রাসুল (সা.) বলেছেন, যখন জুমার দিন হয় তখন মসজিদের প্রতিটি দরজায় ফেরেশতা এসে দাঁড়িয়ে যায় এবং যে ব্যক্তি প্রথম মসজিদে এসে প্রবেশ করে, তার নাম লিখে নেয়। তারপর পরবর্তীদের পর্যায়ক্রমে নাম লেখা হয়। ইমাম যখন (মিম্বারে) বসে পড়েন তখন তারা এসব লিখিত পুস্তিকা বন্ধ করে দেন এবং তারা মসজিদে এসে জিকর (খুতবা) শুনতে থাকেন। (সহিহ বুখারি, হাদিস: ২৯৮৪)
এ ক্ষেত্রে জুমার দিনে গোসল করা প্রপ্তবয়স্ক প্রত্যেকের জন্য কর্তব্য। আবু সায়ীদ খুদরী (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন- জুমার দিন প্রত্যেক বালিগের (প্রাপ্তবয়স্ক) জন্য গোসল করা কর্তব্য (সহিহ বুখারি, হাদিস: ৮৩৫, সহিহ মুসলিম, হাদিস: ১৮৩০)। এ বিষয়ে আরও বেশকিছু হাদিসও পাওয়া যায়।
আবদুল্লাহ ইবনু উমর (রা.) থেকে বর্ণিত, উমর (রা.) জুমার দিনে সমবেত লোকদের সামনে খুতবা প্রদান করছিলেন। এমন সময় রাসুল (সা.) এর সাহাবিদের মধ্য থেকে জনৈক ব্যক্তি মসজিদে প্রবেশ করলেন। উমর (রা.) তাকে জোরে ডেকে বললেন, এটা কোনো সময়? ওই ব্যক্তি বললেন, আমি আজ কাজে ব্যস্ত ছিলাম, ঘরে ফিরে না যেতেই আজান শুনতে পেলাম, তাই আমি অজুর অতিরিক্ত কিছুই করতে পারিনি। উমর (রা.) বললেন, শুধুমাত্র অজুই করেছ। অথচ তোমার জানা আছে রাসুল (সা.) গোসল করে আসার জন্য আদেশ করতেন। (সহিহ মুসলিম, হাদিস: ১২২৮)
আবদুল্লাহ ইবনু উমর (রা.) থেকে বর্ণিত আরেক হাদিসে পাওয়া যায়, রাসুলুল্লাহ (সা.) একবার মিম্বরে দাঁড়িয়ে বললেন, তোমাদের কেউ জুমায় এলে সে যেন গোসল করে নেয় (সহিহ মুসলিম, হাদিস: ১৮২৫)। আবার আওস ইবনু আওস (রা.) আনহু থেকে বর্ণিত, রাসুল (সা.) বলেছেন- যে জুমার দিনে সকাল সকাল গোসল করলো এবং গোসল করালো, তারপর ইমামের কাছে গিয়ে বসে চুপ করে মনোযোগ দিয়ে খুতবা শুনলো তার প্রত্যেক কদমের বিনিময়ে আছে এক বছরের সিয়াম (রোজা) ও কিয়ামের (সালাতের) সওয়াব। (তিরমিজী, হাদিস: ৪৯৬, ইবনু মাজাহ, হাদিস: ১০৮৭)
সুতরাং, উপরের হাদিসগুলো থেকে এ বিষয়টি স্পষ্ট যে জুমার দিনে গোসল করার ওপর বিশেষ গুরুত্ব দেয়া হয়েছে। তবে গোসল করা ছাড়া জুমার নামাজ আদায় হবে কিনা এ বিষয়ে আলেমদের মধ্যে দ্বিমত রয়েছে। অধিকাংশ আলেমদের মত, যেহেতু জুমার দিনে গোসল করাকে গুরুত্ব দেয়া হয়েছে তাই নামাজে যাওয়ার আগে গোসল করাই উত্তম। আর অপর পক্ষের মত, রাসুল (সা.) যখন মদিনায় ছিলেন সে সময় লোকজন সকাল থেকেই কাজে যেতেন, ওই সময়ের প্রেক্ষাপটে গোসল করাকে গুরুত্ব দেয়া হয়েছে। তাই কারও গোসল ফরজ না হলে জুমার দিনে সে যদি গোসল নাও তবে তবুও নামাজ হয়ে যাবে।