যশোরের বিএনপির নেতা ইউনুচ আলী তারা বাবুকে ২০১৪ সালের ২৭ মার্চ তুলে নিয়ে যায় সাদা পোশাকধারী লোকজন।
যশোর পৌরসভার ৯ নম্বর ওয়ার্ড বিএনপির সহপ্রচার সম্পাদক ইউনুচ আলী তারা বাবু। ২০১৪ সালের ২৭ মার্চ তাকে বাড়ি থেকে তুলে নিয়ে যায় সাদা পোশাকধারী লোকজন।
তিনি বলছিলেন, “তারা আমাকে ডিবি অফিসে নিয়ে যায়। সেখানে আমার পায়ে অস্ত্র ঠেঁকিয়ে গুলি করে দেয়। ওইদিনই অপারেশন করে আমার পা কেটে ফেলতে হয়। পরে আমাকে মিথ্যা অস্ত্র ও নাশকতার মামলা আদালতে পাঠনো হয়।”
এখন ক্র্যাচের উপরই নির্ভরশীল তারা বাবুর জীবন। দুটি ক্র্যাচে ভর করেই রোববার তিনি এসেছিলেন যশোরের পিকনিক স্পট জেস গার্ডেনে। সেখানে এদিন যশোরে ‘ফ্যাসিবাদ বিরোধী’ দীর্ঘ লড়াই-সংগ্রামে নির্যাতিত নেতাকর্মীদের নিয়ে মিলনমেলার আয়োজন করা হয়।
সেই অনুষ্ঠানে আমন্ত্রণ পেয়ে শহরের বকচরের বাসা থেকে এসেছেন মধ্য বয়সী তারা বাবু। সেখানেই তিনি এই প্রতিবেদককে বলছিলেন তার নির্যাতনের কথা। একপর্যায়ে তার গলা ধরে আসে, চোখ গড়িয়ে পড়তে থাকে জল।
বলছিলেন, “আমার নামে এখন ১৬টি মামলা। এভাবেই এখন আদালতে দৌড়াই।”
মিলমেলায় আমন্ত্রণ জানানোয় খুশি এই বিএনপি নেতা। তিনি মনে করেন, শেখ হাসিনার পতন না হলে সবার এমন মিলনমেলা সম্ভব হত না। তিনি তার পা হারানোর জন্য যারা দায়ী, তাদের বিচারের জন্য আল্লাহর দরবারে ফরিয়াদ করেছেন।
যশোর নগর ও সদর উপজেলা বিএনপির উদ্যোগে এই মিলনমেলার আড়াই সহস্রাধিক নির্যাতিত নেতাকর্মী ও তাদের স্বজনরা অংশ নেন। একই সঙ্গে চিকিৎসক, শিক্ষক, আইনজীবী, ব্যবসায়ী, সাংবাদিক, ছাত্রপ্রতিনিধিসহ বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষের উপস্থিতিতে ভিন্নমাত্রা পায় মিলনমেলা। দীর্ঘদিন পর রাজনৈতিক সহযোদ্ধাদের একসঙ্গে পেয়ে আপ্লুত নেতাকর্মীরা।
উন্মুক্ত পরিবেশে খাওয়া-দাওয়া, আড্ডা, কুশল বিনিময় আর স্মৃতিচারণ করেন অনেকেই। সেইসব দিনের কথা স্মৃতিচারণ করে কান্নায় ভেঙে পড়েন কেউ কেউ।
সদর উপজেলার লেবুতলা ইউনিয়ন স্বেচ্ছাসেবক দলের আহ্বায়ক হায়দার আলী বলেন, “২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির ভোট নিয়ে সমালোচনা করে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে পোস্ট দিয়েছিলাম। পরে পুলিশ স্থানীয় বাজার থেকে তুলে এনে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন ও নাশকতা মামলার আসামি করে কারাগারে পাঠায় পুলিশ।
“দীর্ঘ দুই বছর তিন মাস কারাভোগের পর বাড়ি ফিরলেও আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের কাছে লাগাতার হামলা-মামলার জর্জরিত ছিলাম। নির্যাতিত নেতাকর্মীদের নিয়ে মিলনমেলার আয়োজন করায় আয়োজকদের ধন্যবাদ জানাচ্ছি।”
শুধু ইউনুচ আলী তারা বাবু কিংবা হায়দার আলী নয়; তাদের মত আওয়ামী লীগ সরকারের শাসনামলে রাজনৈতিক কারণে অত্যাচার-নির্যাতন ও মিথ্যা মামলায় হয়রানির শিকার হয়েছেন যশোর নগর ও সদর উপজেলা বিএনপির আড়াই হাজার নেতাকর্মী। মিলনমেলায় উপস্থিত থেকে ঐক্যবদ্ধ থাকার বার্তা দিয়েছেন দলের শীর্ষ নেতারা।
বিএনপির খুলনা বিভাগীয় ভারপ্রাপ্ত সাংগঠনিক সম্পাদক অনিন্দ্য ইসলাম অমিত বলেন, “ফ্যাসিবাদবিরোধী আন্দোলনে সদর উপজেলা ও নগর বিএনপির অনেক নেতাকর্মী রাজপথে ছিলেন। অনেকে মিথ্যা মামলায় জেলে গেছেন। আবার অনেকে শহীদ হয়েছেন। পঙ্গুত্ববরণ করেছেন অনেকেই। আমরা চেয়েছি, ফ্যাসিবাদমুক্ত বাংলাদেশে তাদের এক কাতারে আনতে।
“ফ্যাসিবাদবিরোধী আন্দোলনে সবাই অংশ নিয়েছে। তাই শুধু দলীয় নেতাকর্মী নয়, ফ্যাসিবাদবিরোধী আন্দোলনে অংশ নেওয়া চিকিৎসক, শিক্ষক, আইনজীবী, ব্যবসায়ী, সাংবাদিক, ছাত্রপ্রতিনিধি, নারী নেত্রীসহ বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষকে সম্মান জানানোর জন্য মিলনমেলায় আমন্ত্রণ জানিয়েছি। তাদের আত্মত্যাগকেও আমরা সম্মান জানাচ্ছি।”
এ সময় আরো উপস্থিত ছিলেন জেলা বিএনপির আহ্বায়ক অধ্যাপক নার্গিস বেগম, সদস্যসচিব সৈয়দ সাবেরুল হক সাবু, যুগ্ম আহ্বায়ক দেলোয়ার হোসেন খোকন, জেলা জামায়াতের আমির গোলাম রসুল, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের জেলা আহ্বায়ক রাশেদ খান, যশোর চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির সম্পাদক সোহানুল ইসলাম।