Thursday, March 13, 2025

শরীরে ২০০ গুলি, মেলেনি ‘জুলাই যোদ্ধা’র স্বীকৃতি

আরও পড়ুন

সম্প্রতি দুই দফা ‘জুলাই যোদ্ধা’র তালিকার গেজেট প্রকাশ করেছে সরকার। সেখানে গুরুতর আহত (ক-শ্রেণি), আহত (খ-শ্রেণি) এবং সামান্য আহত (গ-শ্রেণি)—এই তিন ক্যাটাগরিতে ২ হাজার ৬৪৩ জনের নাম রয়েছে। অথচ শরীরে এখনো ২০০ ছররা গুলি নিয়ে মানবেতর জীবনযাপন করা সানজিদুল ইসলাম তালিকায় স্থান পাননি।

সানজিদুল ইসলাম তা’মীরুল মিল্লাত কামিল মাদ্রাসা টঙ্গীর একাদশ শ্রেণির শিক্ষার্থী। গত বছরের ১৮ জুলাই উত্তরা বিএনএস সেন্টার এলাকায় পুলিশের গুলিতে নিহত আবু সাঈদের হত্যার প্রতিবাদে বিক্ষোভে যোগ দিয়েছিলেন সানজিদুল। সকাল থেকেই সেই এলাকা ছাত্র-জনতার বিক্ষোভে উত্তাল হয়ে ওঠে। সকাল ১০টায় শুরু হয় সংঘর্ষ। ছাত্রলীগ, পুলিশ, র্যাব—সবাই একসঙ্গে ঝাঁপিয়ে পড়ে ছাত্র-জনতার ওপর। মুহূর্তেই যুদ্ধক্ষেত্র হয়ে যায় বিএনএস সেন্টার। ইটের টুকরো হাতেই ছাত্ররা প্রতিরোধ গড়ে তোলে। তাদের লক্ষ্য করে পুলিশ গুলি চালালে অনেকে শহীদ হন। সেদিন সানজিদুল ইসলামের শরীরে অন্তত ২০০ ছররা গুলি বিদ্ধ হয়।

আরও পড়ুনঃ  অস্থিতিশীল পরিবেশ তৈরির পেছনে ইন্ধনদাতা রয়েছে: সেনাবাহিনী

দুপুর দেড়টার দিকে গুলিবিদ্ধ সানজিদুলকে সহযোদ্ধারা উত্তরা কুয়েত মৈত্রী হাসপাতালে নিয়ে যান। কিন্তু সেখান থেকে জানিয়ে দেওয়া হয়, এক্স-রে করা সম্ভব নয়। এক বন্ধুর ভাইয়ের সহযোগিতায় সেদিন মেসে ফিরে যান তিনি। পরদিন গুটিয়া ইন্টারন্যাশনাল হাসপাতালে এক্স-রে করান।

পরিবার যখন জানতে পারে, তখন তাকে দিনাজপুরে নিয়ে যাওয়া হয়। পরিচিত ডাক্তার মো. রবিউল আলমের পরামর্শে চিকিৎসা নেন। পরে উন্নত চিকিৎসার জন্য ভর্তি হন রংপুর সিএমএইচে, সেখানেই হাতের থেরাপি চলে এক সপ্তাহ।

আরও পড়ুনঃ  মাত্র ৫০০০ টাকায় এমপি আনারকে ৮০ টুকরো করা হয়, কসাই জিহাদের স্বীকারোক্তি

ঢাকায় ফিরে তা’মীরুল মিল্লাত কেন্দ্রীয় ছাত্রসংসদের (টাকসু) সঙ্গে যোগাযোগ করলে তারা ১৯ হাজার টাকা সহায়তা দেন এবং ঢাকা সিএমএইচে চিকিৎসা নিতে পরামর্শ দেন। সেখানে চিকিৎসা নিলেও পুরোপুরি সুস্থ হননি সানজিদুল। এখনো শরীরে ২০০-র বেশি ছররা গুলি নিয়ে দিন পার করছেন। প্রচণ্ড ব্যথা, দুর্বলতা তার নিত্যসঙ্গী।

জুলাই অভ্যুত্থানে আহতদের তালিকাভুক্ত হওয়ার আশায় জুলাই শহীদ স্মৃতি ফাউন্ডেশন এবং উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কার্যালয়ে তথ্য জমা দিলেও আজও তিনি আহতদের তালিকায় জায়গা পাননি। ফাউন্ডেশন থেকে কোনো সহায়তাও পাননি।

সানজিদুল ইসলাম বলেন, ‘বৈষম্যের বিরুদ্ধে লড়াই করেছি আমরা। স্বৈরাচার হাসিনার রক্তচক্ষু ভয় করিনি। তবে ২০০-র বেশি গুলি শরীরে নিয়ে বেঁচে আছি, অথচ আহতদের তালিকায় নিজের নাম যুক্ত করতে পারিনি এখনো।’ তিনি বলেন, ‘তবুও দেশ ও আন্দোলনের প্রতি ভালোবাসা অটুট থাকবে। আমি চাই, শহীদদের স্বপ্ন যেন পূর্ণতা পায়। আমরা যে যুদ্ধ করেছিলাম, সেটা যেন ব্যর্থ না হয়।’

আরও পড়ুনঃ  সেনা কল্যাণের প্রতিষ্ঠান ও এটিএম বুথ ভাঙচুর করল রিকশাচালকরা

সানজিদুল ইসলামের বাবা আবেদ আলী কাদেরী বলেন, ‘আমি নিজেই স্বৈরাচার সরকারের বিরুদ্ধে সংগ্রাম করেছি। দিনের পর দিন ঘরবাড়ি ছাড়া থেকেছি। জুলাই বিপ্লবে আমার ছেলে যে সাহসিকতা দেখিয়েছে, তাতে আমি গর্বিত। আমি চাই, সরকার আমার ছেলের মতো আহত শিক্ষার্থীদের প্রতি বিশেষ দৃষ্টি দেক, যেন তারা ন্যায়বিচার ও প্রয়োজনীয় সহায়তা পায়।’

আপনার মতামত লিখুনঃ

সর্বশেষ সংবাদ