দেশবাসী সাবধান! শাহবাগী লাকি আক্তার গংরা আবার মাঠে নেমেছে। তাদের সঙ্গে নতুন করে যোগ হয়েছে আনন্দ বাজার পত্রিকার সাবেক সাংবাদিক হাসিনার অলিগার্ক অঞ্জন রায়ের মেয়ে আদ্রিতা রায়সহ একঝাঁক দালাল। হাসিনার পালানোর যন্ত্রণা থেকে ‘নারীর প্রতি সহিংসতার প্রতিবাদে ‘ধর্ষণ ও নিপীড়নের বিরুদ্ধে বাংলাদেশ’ নামে ভূঁইফোর প্ল্যাটফর্ম তৈরি করে শাহবাগে ‘গণপদযাত্রা নাটক’ করেছে।
এর আগে গত শুক্রবার একই এজেন্ডার নাটকের অংশ হিসেবে জাতীয় মসজিদ বায়তুল মোকাররম এলাকায় নিষিদ্ধ সংগঠন হিযবুত তাহরীরের ‘মার্চ ফর খিলাফাহ’ কর্মসূচির নামে বিশৃংখলা সৃষ্টির চেষ্টা করে। গতকালও লাকি আক্তার গংরা বাঁওড় মৎসজীবী আন্দোলনের ব্যানারে মিছিল করেছে। জাতিসংঘের মহাসচিব বাংলাদেশ আসছেন। তাকে দেখানোর উদ্দেশ্যে সব দিল্লিতে পলাতক শেখ হাসিনার নীল নকশার অংশ। ছাত্রজনতার অভ্যুত্থানে ১৪০০ ছাত্রজনতাকে হত্যা করে ৫ আগষ্ট শেখ হাসিনা ভারতে পালিয়ে গেছে। জাতিসংঘের ফ্যাক্ট ফাইন্ডিং মিশনের তদন্তে উঠে এসেছে শেখ হাসিনার নির্দেশে আইন শৃংখলা বাহিনীর সদস্য, গোয়েন্দা সংস্থাগুলো, আওয়ামী লীগ-যুবলীগ-ছাত্রলীগ ছাত্র-নেতৃত্বাধীন বিক্ষোভ দমাতে ১ জুলাই থেকে ১৫ আগস্টের মধ্যে ১৪০০ জনকে হত্যা করেছে। জাতিসংঘের মানবাধিকার বিষয়ক হাই কমিশনার ভলকার তুর্ক বলেছেন, ‘এই নৃশংস প্রতিক্রিয়া ছিল সাবেক সরকারের একটি পরিকল্পিত এবং সমন্বিত কৌশল, যা জনতার বিরোধিতার মুখে ক্ষমতা আঁকড়ে রাখতে চেয়েছিল।’ জাতিসংঘের ওই তদন্ত রিপোর্ট সত্য নয় প্রমাণের চেস্টায় মরিয়া পলাতক হাসিনা ও হিন্দুত্ববাদী ভারত।
মূলত গণঅভ্যুত্থানের পর থেকে নানাভাবে বাংলাদেশে অস্থিতিশীল করার অপচেষ্টা করেছে শেখ হাসিনা ও তার রাজনৈতিক মুরুব্বী ভারত। সেনা বিদ্রোহ, জুডিশিয়াল ক্যু, আনসার দিয়ে সচিবালয় ঘেড়াও, সংখ্যালঘু নির্যাতনের ফেইক তথ্য প্রচার, ইসকনের চিন্ময় গ্রেফতার ইস্যু. গার্মেন্টস সেক্টরে অস্থিরতা এবং পাহাড়ে অশান্তিসহ নানাভাবে বিশৃংখলা সৃষ্টির চেস্টা করেছে। হাসিনা ও ভারতের প্রতিটি চেস্টা ব্যর্থ করেছে অন্তর্বর্তী সরকার ছাত্রজনতার সহায়তায়। আন্তোনিও গুতেরেস ঢাকা আসছেন। এখন রজমান মাসে একটি ধর্ষণ ঘটনার প্রতিবাদ ও বিচারের দাবি ইস্যুর অজুহাতে দিল্লির দালাল লাকি আক্তার গং ফের মাঠে নামানো হয়েছে। ২০১৩ সালে দিল্লির আঁকাছকে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পৃষ্ঠপোষকতায় ‘জনতার মঞ্চ’ করে মাসের পর মাস শাহবাগ অবরোধ করে জামায়াত নেতা কাদের মোল্লার ফাঁসির দাবি করা হয়। লাকি-ইমরান এইচ সরকার-নাসিরউদ্দিন বাচ্চু-শাহরিয়ার কবিরদের দাবির মুখে আদালতে মামলা চলার সময় আইন সংশোধনের নজীরবিহীন কান্ড ঘটিয়ে নতুন আইন করে কাদের মোল্লার ফাঁসি দেয়া হয়। দিল্লির এজেন্ডা বাস্তবায়নের পর লাকি আক্তার, ইমরান এইচ সরকার গং হারিয়ে যায়। এখন হিন্দুত্ববাদী ভারতের এজেন্ডা ‘শেখ হাসিনাকে বাংলাদেশের রাজনীতিতে ফিরিয়ে আনা’ বাস্তবায়নে ধর্ষণ প্রতিবাদ ইস্যুতে মাঠে নামিয়েছে। দিল্লির একই চেতনা বাস্তবায়নে নিষিদ্ধ সংগঠন হিযবুত তাহরীরের ‘মার্চ ফর খিলাফাহ’ কর্মসূচি দিয়ে ঢাকার মাঠে নামানো হয়েছিল।
প্রিয়া সাহার কথা মনে আছে? তিনি হচ্ছেন দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) কর্মকর্তা মলয় সাহার স্ত্রী। ২০১৯ সালের ২১ জুলাই হোয়াইট হাউজে প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের কাছে ‘বাংলাদেশ থেকে ৩ কোটি ৭০ লাখ হিন্দু বৌদ্ধ-খ্রিস্টান’ নিখোঁজ হয়ে গেছেন অভিযোগ করেছিলেন। এর মাধ্যতি তিনি সংঘ্যালঘু নির্যাতনের ধারণা দেন। মার্কিন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের কাছে প্রিয়া সাহার ওই অভিযোগের ফুটেজ সোশাল মিডিয়াতে ভাইরাল হওয়ার পর থেকে বাংলাদেশে সরকারী মন্ত্রী, রাজনীতিক, পুলিশ কর্মকর্তা ছাড়াও প্রচুর মানুষ তীব্র প্রতিক্রিয়া দেখিয়েছিলেন। ওটাও ছিল হিন্দুত্ববাদী ভারতের নীল নকশা। দিল্লির প্রত্যাশিত একটি দ্বিপাক্ষিক চুক্তি বাস্তবায়নে পুতুলরানী হাসিনা গাঁইগুঁই করায় দিল্লি সংখ্যালঘু নির্যাতনের প্লট তৈরি করেছিল। এখন দেশ নির্বাচনের দিকে এগিয়ে চলছে। ভারতের আত্মঘাতি সিদ্ধান্ত বাংলাদেশীদের ভিসা সীমিত করে আনার কারণে বাংলাদেশী পর্যটক ও রোগীরা চিকিৎসার জন্য চীন মুখি হয়েছেন। এখন কোলকাতা-মাদ্রাজ- চেন্নাই-বেঙ্গালুরের বদলে চীনের কুনমিংয়ে যাচ্ছে চিকিৎসা নিতে। আর ভারতের কোলকাতার হোটেল ব্যবসায়ী ও হাসপাতাল ক্লিনিকগুলো বিপর্যয়ের মুখে পড়ে গেছে। শুধু তাই নয় বাংলাদেশ এখন তিস্তার পানি নিয়ে ভারতের সঙ্গে কোনো চুক্তি নয়; বরং চীনের অর্থায়নে তিস্তা মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়নের পথে হাঁটছে। এতে দিল্লির গাত্রদাহ শুরু হয়ে গেছে। জাতিসংঘ মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস চার দিনের সফরে আজ বৃহস্পতিবার বাংলাদেশ আসছেন। তাকে বাংলাদেশে ড. মুহাম্মদ ইউনূসের বিরুদ্ধে জনরোষ দেখানোর লক্ষ্যেই লাকী গংদের মাঠে নামানো হয়েছে। ৬ বছর আগে প্রিয়া সাহা যেমন হোয়াইট হাউসে বাংলাদেশে সংখ্যালঘু নির্যাতনের কাল্পনিক চিত্র তুলে ধরেছিলেন; লাকী আক্তার-আদ্রিতা রায় গংদের দিয়ে তেমনি আন্তোনিও গুতেরেসের সামনে বাংলাদেশের বিরুদ্ধে কিছু অভিযোগ তুলে ধরা হতে পারে। সে জন্যই জাতিসংঘের মহাসচিবের বাংলাদেশ সফরের সময়কে লাকী গং আন্দোলনের মোক্ষম সময় বেছে নিয়েছেন।
লাকি আক্তারগংরা কার্যত দিল্লির পুতুল। জুলাই-আগষ্টে ছাত্র জনতার আন্দোলনের সময় ঘুমিয়ে ছিলেন। সিপিবির রাজনীতি করলেও এরা টাকার বিনিময়ে দিল্লি যে নির্দেশনা দেন সেটাই করে থাকেন। আর দিল্লির তাবেদার কিছু গণমাধ্যম লাকী গংদের পক্ষ নিয়ে সে খবর ফলাও করে প্রচার করছে। ১১ মার্চ প্রধান উপদেষ্টাকে স্মারকলিপি দিতে যাওয়ার সময় হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টালের সামনে পুলিশের সঙ্গে লাকী গংদের বাকবিত-া হয়। এ সময় লাকী-আদ্রিতা গংরা ঢাকা রমনা জোনের এসি মো. আবদুল্লাহ আল মামুনকে বেধরক মারধোর করেছে; তাকে ধরে টানাটানি করেছে। দিনে দুপুরে সংঘবদ্ধভাবে ছেলেমেয়েরা পুলিশের একজন মধ্যসারির অফিসারকে মারধোরের দৃশ্য সোশ্যল মিডিয়ায় ভাইরাল হয়েছে। এ খবর দিল্লির তাবেদার গণমাধ্যম ও হাসিনার মিডিয়া ফৌজগংরা ফলাও করে প্রচার করে। তাবেদার গণমাধ্যমগুলো রাস্তায় মেয়েদের তান্ডবের পক্ষ্যে অবস্থান নিয়ে ওই পুলিশ কর্তাকে অপসারণের দাবির পক্ষ্যে রিপোর্ট করেছে। সোশ্যাল মিডিয়ায় এ নিয়ে ঝড় তোলা হয়। ভাবখানা যেন পুলিশ লাকীগংদের ওপর ভয়ঙ্কর নিষ্ঠুরতা চালিয়েছে। গতকালও জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে লাকীর নেতৃত্বে বাংলাদেশ বাঁওড় মৎসজীবী আন্দোলনের ব্যানারে বিক্ষোভ সমাবেশ করে মিছিল নিয়ে পল্টন মোড় পর্যন্ত যায়। সেখানে অন্তর্বর্তী সরকারের বিরুদ্ধে শ্লোগান দেয়।
তবে আশার কথা হচ্ছে দেশের ছাত্রজনতা দিল্লির এজেন্ডা ও লাকী আক্তারদের ধান্দা ধরে ফেলেছে। লাকির গ্রেফতারের দাবিতে ১১ মার্চ গভীর রাতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় উত্তাল হয়ে উঠেছিল। তার দিল্লির দালাল লাকি-আদ্রিতা গংদের গ্রেফারের দাবি জানিয়ে আল্টিমেটাম দেয়। গতকাল ইনকিলাব মঞ্চ লাকীকে গ্রেপ্তারসহ পাঁচ দাবিতে শাহবাগে মানববন্ধন করেছে। এ সময় ঘোষণা দেয়া হয়, ফ্যাসিবাদ হাসিনার দোসর লাকী আক্তার গংদের গ্রেপ্তার, তিন মাসের মধ্যে ধর্ষণের বিচার নিষ্পত্তিসহ পাঁচ দাবিতে আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দেয়া হয়। এ সময় বিক্ষুদ্ধ জনতা ‘ওয়ান টু-থ্রি- ফোর, শাহবাগ নো মোর’, ‘তেরো না চব্বিশ, চব্বিশ চব্বিশ’, ‘শাহবাগ না জাস্টিস, জাস্টিস জাস্টিস’, ‘ল-তে লাকি, তুই হাসিনা তুই হাসিনা’, ‘চব্বিশের বাংলায়, শাহবাগের ঠাঁই নাই’ ইত্যাদি সেøাগান দেয়।
জাতিসংঘের মহাসচিব ঢাকায় আসছেন। এ সময় দিল্লির দালাল লাকীরা রাস্তায় নামছেন। প্রিয়া সাহার ডোনাল্ড ট্রাম্পকে মিথ্যা তথ্য দেয়ার মতোই হাসিনার হয়ে লাকীরা আন্তোনিও গুতেরেসের কাছে নালিক জানাতে পারে। অতএব সবাই সাবধান।